টানা ১২ বছরের বেশি এবং মোট ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তবে এবারই প্রথম অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাকে। যদিও রাজনৈতিক চাপ নেই প্রধানমন্ত্রীর জন্য। জন আস্থার সংকট নেই। এখনো দেশের সিংহভাগ মানুষ শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল।
কিন্তু তারপরও কিছু কিছু সংকট ঘনীভূত হচ্ছে এবং এ সংকটগুলো যেকোনো সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
শেখ হাসিনা তাঁর দীর্ঘ দেশ পরিচালনার এই প্রথম একসাথে এতগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন বলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। যে চ্যালেঞ্জগুলো এখন তাকে সামাল দিতে হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে-
১. করোনা পরিস্থিতি এবং গণটিকা কর্মসূচি: বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। আর এই অবনতি ঠেকানোর জন্য প্রয়োজন হলো গণটিকা কর্মসূচি। ইতিমধ্যে সরকার গণটিকার বয়সসীমা কমিয়ে এনেছে। ২৫ বছর বয়সী সকলকে টিকা দেয়া হবে।
এমনকি সরকার মাসে এক কোটি টিকা দেওয়ার একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং এর বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে, সারাদেশে গণটিকা ব্যবস্থাপনা কিভাবে সম্পন্ন হবে এবং এই গণটিকা কর্মসূচিতে গরিব দরিদ্র মানুষ কিভাবে আসবে যাদের হাতে স্মার্টফোন নেই, যারা এখনো ডিজিটাল সুবিধার বাইরে।
আর সরকার যেভাবে বলেছে যে ভোটার নিবন্ধন কার্ড দিলেই তাকে টিকা দেয়া হবে, সেটি নিয়েও নানা রকম জটিলতার শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। তাছাড়াও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত চীনা টিকার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
সামনের দিনগুলোতে এই টিকা প্রবাহ কতটুকু থাকবে এবং কিভাবে টিকাদানের মাধ্যমে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সেটি এখন সরকারের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
২. অর্থনৈতিক সংকট: করোনায় এখন দেশে লকডাউন চলছে। এই লকডাউন থাকবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। পোশাক মালিকরা সরকারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা সর্বনাশের খবর শুনিয়েছেন। ইতিমধ্যে সরকার আগামী রোববার (১ আগস্ট) থেকে গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এরকম পরিস্থিতিতে সামনে যদি আরো করোনা ভয়ংকর হয় তাহলে কি প্রধানমন্ত্রী আবার লকডাউনের পথে হাঁটবেন নাকি অন্য কোন পথ অবলম্বন করবেন। বাংলাদেশ কি এই অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে পারবে? এই প্রশ্নগুলো এখন সামনে এসেছে।
যতই সরকার প্রণোদনা দিক না কেন তারপরও নিম্ন এবং মধ্য আয়ের মানুষের সংকট ক্রমশ বাড়ছে। অর্থনৈতিক সংকটও দৃশ্যমান হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখন বলা হচ্ছে যে, টিকার আওতায় এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হবে। কিন্তু কতদিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিকার আওতায় আসবে তা এখনও অস্পষ্ট। গণটিকা কর্মসূচিতে রোডম্যাপ এখনো দৃশ্যমান নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরো কিছুদিন বন্ধ থাকলে এ নিয়ে এক ধরনের অশান্তি তৈরি হতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা করছেন।
৪. দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র: করোনায় যখন সরকার চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক ধরনের পরিকল্পিত প্রচারণায় নেমেছে। আর এই সমস্ত প্রচারণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ।
এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা শেখ হাসিনার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন বলা হচ্ছে ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা আবার মাঠে নেমেছেন। কাজেই এই ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনা কিভাবে মোকাবেলা করবেন সেটিও একটি দেখার বিষয়।
৫. আওয়ামী লীগের সংকট: সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সংকট দৃশ্যমান হয়েছে। একদিকে অনুপ্রবেশকারী অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি নানা জটিলতায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনাকেই এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার সামনের দিনগুলোতে কিভাবে এগিয়ে যায় সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার