২৬ এপ্রিল যখন নুসরাত গুলশান থানায় গিয়ে তার বোন মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেছিলেন, তখন মনে হচ্ছিলো সকলেই নুসরাতের পক্ষে। নুসরাতকে অনেকে উস্কে দিয়েছিলো।
একাধিক গণমাধ্যম নুসরাতকে নিয়ে এক রকমের মাতম তুলেছিলো। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে নুসরাতের পাশে কেউ নেই। নুসরাত এখন নিজেই বুঝতে পারছেন যে, কী ভুলটা তিনি করেছেন।
নুসরাতের দায়ের করা অপমৃত্যুর মামলাটি শেষ পর্যন্ত টিকবে কি টিকবে না, সেটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিষয়। তবে এই অপমৃত্যুর মামলা করে নুসরাত এখন নিজেই রীতিমতো ফেঁসে গেছেন।
একদিকে এই অপমৃত্যুর মামলা ফলে তার এবং তার প্রয়াত বোন মুনিয়ার যে বিভিন্ন রকম অনৈতিক কর্মকান্ড সামনে চলে আসছে, মৃত্যুর পর মুনিয়াকে নিয়ে যে আবেগ অনুভূতি ছিলো সেই আবেগ অনুভূতিও মানুষের মধ্যে থেকে ছিটিয়ে গেছে।
আবেগ-অনুভূতিকে পাশ কাটিয়ে মানুষের সামনে কতগুলো মৌলিক প্রশ্ন উঠেছে। একটি উচ্চমাধ্যমিক পরা মেয়ে কিভাবে এক লাখ টাকার বাসায় ভাড়া থাকে, বোন এসব কিভাবে আশ্রয় প্রশ্রয় দেন, এই বয়সে এত মানুষের সাথে কিভাবে প্রেমের সম্পর্ক এবং নানা রকম সম্পর্ক গড়ে তোলেন, আর নুসরাত কিসের লোভে মামলা করছেন।
এ সমস্ত প্রশ্নের কারণেই প্রথম দিকে মুনিয়ার পক্ষে যেমন একটা জনমত ছিলো, এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো ধারায় চলছে। ধারণা করা যায় যে, এই মামলা করার পেছনে নুসরাতকে কেউ উস্কে দিয়েছিলো, তাকে প্ররোচিত করেছিলো।
যারা প্ররোচিত করেছিলো, তারা এখন পিছু হটেছে। নুসরাতকে যারা মামলা করার জন্য প্রলুব্ধ করেছিলো, তারা এখন নুসরাতের ফোন ধরছে না।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, নুসরাত তার উৎসাহদাতাদের সঙ্গে এখন যোগাযোগ করলেও তারা নুসরাতের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। নুসরাতকে মামলার প্ররোচনা দিয়েছিলো যেই চক্রটি তাদের সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য ছিলো।
বসুন্ধরা গ্রুপকে চাপে ফেলাই ছিলো এই মামলার প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু সেটি যখন সফল হয়নি তখন তারা নিজেরাই পিছু হটেছে। নুসরাতের এই মামলার পর কিছু কিছু গণমাধ্যমকে অতিউৎসাহী দেখা গিয়েছিলো।
তারা মুনিয়ার মৃত্যুর চেয়ে বসুন্ধরা গ্রুপকে বা বসুন্ধরা গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন পত্রিকাগুলোকে কিভাবে একহাত দেখে নেওয়া যায় সেই চেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত ছিলো।
কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে তাদের চেষ্টা থিতিয়ে যায়, যখন ওই গণমাধ্যমগুলো দেখে যে, মুনিয়ার বিষয়টি নিয়ে আসলে বেশি দূর এগোনোর মতো বাস্তবতা নেই। তখন তারা নুসরাতকে এড়িয়ে চলা শুরু করে।
প্রথম চার পাঁচদিন নুসরাতকে নিয়ে গণমাধ্যমে মাতামাতি হওয়ার পর, এখন গণমাধ্যমও নুসরাতকে এড়িয়ে চলছে। নুসরাতের ইস্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ ঝড় তুলেছিলো।
যারা ঝড় তুলেছিলো তাদেরও উদ্দেশ্য ছিলো মুনিয়ার বিচার চাওয়া নয়, বরং বসুন্ধরার ওপর প্রতিশোধ নেওয়া। বসুন্ধরা গ্রুপের এত সাফল্য, ব্যবসায়িক প্রসার ইত্যাদিতে ঈর্ষান্বিত হয়েই একটি মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা খুশি তাই লিখে একটা তোলপাড় করার চেষ্টা করেছিলো।
কিন্তু এই ঘটনা যত গড়িয়েছে তত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মুনিয়ার পক্ষের লোকের সংখ্যা কমে গেছে। বরং মুনিয়ার জীবন যাপনের অকথিত বিষয়গুলো সামনে চলে এসেছে।
যার ফলে নুসরাত যে আশায় বা যে লোভে মামলাটি করেছিলেন, সেই আশা এখন গুড়েবালি হওয়ার উপক্রম। আর কাউকে পাশে না পেয়ে নুসরাতও এখনো কূল কিনারা পাচ্ছেন না যে তিনি কী করবেন।
বাংলা ইনসাইডার