বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৫ সালের জন্মদিনটি ছিল উজ্জ্বল, আনন্দে ঘেরা ও চমকে ভরা। ৫৫তম জন্মদিনে ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার’ ঘোষণা করা হয়। জাতি পুনর্গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এটি দেওয়া হয় বাছাই করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে।
‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার’ বিতরণ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৫ সালের জন্মদিনটি ছিল উজ্জ্বল, আনন্দে ঘেরা ও চমকে ভরা। ৫৫তম জন্মদিনে ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার’ ঘোষণা করা হয়। জাতি পুনর্গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এটি দেওয়া হয় বাছাই করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে।
‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার’ বিতরণ
পুরস্কার তহবিল ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কৃষিমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। কৃষি উন্নয়ন সংগঠন ও ব্যবস্থাপনায় নতুনত্ব ও গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বিচারপতি আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বে ‘বঙ্গবন্ধুর পুরস্কার ১৯৭৪’ দেওয়া হয় এইদিনে। সিলেকশন বোর্ড জাতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য ৩৯ জনকে বাছাই করেন। এদের মধ্যে তিনজনকে স্বর্ণপদক ও অন্যদের রৌপ্যপদকে ভূষিত করা হবে। যারা স্বর্ণপদক লাভ করেন, তারা প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা এবং যারা রৌপ্যপদক পাবেন তারা তিন হাজার টাকা করে পাবেন।
দেশ গড়ার নতুন শপথ
জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের সাফল্যের জন্য দেশবাসী আস্থা ঘোষণা করে। দেশবাসী বঙ্গবন্ধুর সুস্থ-সুন্দর দীর্ঘ জীবন কামনা করেন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায় দেশের সর্বস্তরের মানুষ। তারা প্রিয় নেতার গলায় পরিয়েছে ফুলের মালা, ছড়িয়েছে ফুলের পাপড়ি। মিছিলের পর মিছিল গেছে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে। বঙ্গবন্ধুর বাসভবন স্লোগানে স্লোগানে ভরে ওঠে। ব্যান্ডপার্টির আনন্দে মুখর হয়েছে রাজপথ। গণভবনে জনগণ গিয়েছে বঙ্গবন্ধুকে শুভেচ্ছা জানাতে। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।
সরকারি কাজ বাংলায় করার আহ্বান
রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকল সরকারি কাজে ইংরেজির পরিবর্তে অবিলম্বে বাংলা জারির নির্দেশ দেন। বাসসের খবরে প্রকাশ, মন্ত্রণালয় সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য অফিসের বিভাগীয় প্রধানদের প্রতি হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয় যে, নির্দেশগুলো মেনে চলা না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্দেশে বলা হয়, বিদেশি সংস্থা বা সরকারগুলোর সঙ্গে চিঠিপত্র আদান-প্রদানে চিঠির একটি কপি ইংরেজিতে হতে পারে।
বাঁধ তৈরি করে জন্মদিন
কেবল ঢাকায় নয়, সারাদেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে উচ্ছ্বাস তা ছিল চোখে পড়ার মতো। এই দিনে ফরিদপুর শহরের অদূরে চরকমলাপুরে এটি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালন করা হয়। ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও ক্লাবের সদস্যরা হাতে মাটি কেটে ১৫ শ’ ফুট দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করে।
গণভবন ছিল শিশুদের
তখন বিকাল। বঙ্গবন্ধু তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসা শিশুদের গণভবনে বলেন, তোরা যত খুশি খেলা কর। দেখিস, চারাগাছগুলো আবার নষ্ট করিস না…চল চল পুকুরের কাছে যাই। অনেক মাছ আছে। খবরদার পুকুর পাড়ে গিয়ে আবার লাফঝাঁপ শুরু করিস না। ছোট্ট একটি ছেলের হাত ধরে বঙ্গবন্ধু এগিয়ে চললেন পুকুরের দিকে। সঙ্গে তার ক্ষুদে অতিথির দল।
একটি ছোট্ট মেয়ে বঙ্গবন্ধুর গলায় পরিয়ে দিল লাল স্কার্ফ। বঙ্গবন্ধু বলেন, যাদের কাছে স্কার্ফ নেই, পোশাক নেই বলে আসতে পারেনি তাদের স্কার্ফ কিনে দেবো। শিশুশিল্পীরা গান ধরলে বঙ্গবন্ধু তালে তালে হাততালি দিলেন।
পচাত্তরের জন্মদিনে পত্রিকাজুড়ে শুধুই বঙ্গবন্ধু
জন্মদিন ও পরের দিনের পত্রিকায় বড় অংশজুড়ে ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রতিবেদন। বঙ্গবন্ধুর জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনা নিয়ে প্রবন্ধ যেমন প্রকাশ করা হয়, তেমনই লেখা হয় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কর্মসূচিগুলো। বঙ্গবন্ধুর সারাদিনের নানাসময়ে ছবি প্রকাশ করে পত্রিকাগুলো। সারা দিন অসম্ভব কর্মব্যস্ততার পর কীভাবে তিনি ঘরে পশুপাখিদের সেবা করেন, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় পেলেই আড্ডায় মেতে ওঠেন। সেই ছবিও প্রকাশ হয়।