আওয়ামী বা লীগ কিংবা বঙ্গবন্ধু পরিবারের কারো নাম ব্যবহার করে গজিয়ে উঠা ভুয়া সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এরকম ৮৩ টি সংগঠনের নাম পাওয়া গেছে। এ সংগঠনের নেতাদের এখন খোঁজা হচ্ছে, এদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে যে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে একটি তালিকা দেয়া হয়েছে যে তালিকায় আওয়ামী লীগের বৈধ সংগঠনগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে।
সেই বৈধ সংগঠনের বাইরে যে সমস্ত সংগঠন আওয়ামী, লীগ বা বঙ্গবন্ধু পরিবারের নাম দেয়া হবে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত সংগঠন হলো বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, মৎস্যজীবী লীগ।
এছাড়াও নীতিগতভাবে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ। মহিলা শ্রমিক লীগ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ আওয়ামী লীগের নীতিগত অনুমোদন সংগঠন। এর বাইরে আওয়ামী লীগের সহযোগী কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন নাই।
সাম্প্রতিক সময়ে যে ৮৩টি ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক লীগ, নাপিত লীগ, ফকির লীগ, জননেত্রী লীগ, প্রবীণ লীগ, জনসেবা লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তরুণ জনতা লীগ, ডিজিটাল লীগ, নাগরিক লীগ, পর্যটন লীগ, তরিকত লীগ, আওয়ামী অভিভাবক লীগ, দর্জি লীগ, তরুণ লীগ, রিক্সা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ, যুব হকার্স লীগ, নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ, আওয়ামী ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ, ছিন্নমূল হকার্স লীগ, ছিন্নমূল মৎস্যজীবী লীগ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ, তৃণমূল লীগ, স্বাধীনতা লীগ, হোটেল শ্রমিক লীগ, সেলুন মালিক লীগ, হকার্স লীগ, চালক লীগ, প্রচার ও প্রকাশনা লীগ, বঙ্গবন্ধু গণতান্ত্রিক লীগ, জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী পরিবহন শ্রমিক লীগ, আওয়ামী নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, হারবাল লীগ, দেশীও চিকিৎসক লীগ, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, পরিবহন শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু হোমিওপ্যাথি লীগ, আওয়ামী সজীব ওয়াজেদ জয় লীগ, অভিভাবক সচেতনতা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ প্রমুখ।
এই সংগঠনগুলোর সঙ্গে কারা জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করা হচ্ছে এবং এই সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিশ্চিত করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে চাকরিজীবী লীগ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন সদ্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এবং গ্রেপ্তার হেলেনা জাহাঙ্গীর। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাকে আওয়ামী লীগের মহিলা উপ কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুঁইফোড় অবৈধ এ সমস্ত লীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন। এই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে যে, তারা এখন এই সমস্ত ভুঁইফোড় সংগঠনগুলোর হোতাদেরকে খুঁজছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাঁড়াশি অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, এই সমস্ত সংগঠনগুলোর কাজ হলো বিভিন্ন মানুষকে এই সংগঠনের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে চাঁদা আদায়, বিভিন্ন দিবসে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদাবাজি করা এবং দলের নাম ভাঙ্গিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের কাছে গিয়ে তদবির বাণিজ্য করা। এছাড়াও এরা টেন্ডার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলছে যে, এদের মূল কাজ হলো লোকজনকে প্রতারণা করে চাঁদা আদায় করা এবং আওয়ামী লীগের সংগঠন হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইলিং করা।
আর এই সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রেক্ষিতে এখন এই সংগঠনগুলোর হোতারা অনেকেই নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছে।
কদিন আগেও বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের চারপাশে এই সমস্ত ভুঁইফোড় সংগঠনের পোস্টার-ব্যানার দেখা গেলেও এখন সেগুলো অনেকগুলি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বাংলা ইনসাইডার