সরকারের তৃতীয় মেয়াদে অর্ধেক সময় কয়েকজন মন্ত্রীর ব্যর্থতা নিয়ে জাতীয় সংসদে এবং জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
এই সমস্ত মন্ত্রীদের ব্যর্থতার জন্য সরকার সমালোচিত হয়েছে, সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং মানুষ বিরক্ত হয়েছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এরকম কয়েকজন মন্ত্রীকে নিয়ে আমাদের এই প্রতিবেদন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক: সরকারের তৃতীয় মেয়াদে অর্ধেক সময় নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ব্যর্থ মন্ত্রীর নাম স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই একের পর এক নানা রকম বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচিত। জাহিদ মালেক গত মেয়াদে ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। এবার তাকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়।
প্রথমে তার সঙ্গে একজন প্রতিমন্ত্রী ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে সেই প্রতিমন্ত্রীকেও মন্ত্রণালয় থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার একক কর্তৃত্বে মন্ত্রণালয় চালাচ্ছেন। আর মন্ত্রণালয় চালাতে গিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি সমালোচিত হচ্ছেন, তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তিনি প্রথম সমালোচিত হয়েছিলেন ডেঙ্গু মোকাবেলার সময়।
দায়িত্ব গ্রহণের পরপর দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি যখন অবনতি ঘটে সেই সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন গোপনে অথচ তার ব্যক্তিগত স্টাফরা জানিয়েছিল তিনি মানিকগঞ্জে আছেন। এই বিতর্কের রেশ কাটিয়ে যখন তিনি আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলেন তারপর শুরু হল করোনা পরিস্থিতি।
করোনার সময় একের পর এক বিভিন্ন রকম ভুল পদক্ষেপ তাকে সমালোচিত করে। এই সময়ে স্বাস্থ্য খাতে নানারকম দুর্নীতি, অনিয়মের ইস্যু জনমনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। তাছাড়াও তার বিতর্কিত কথাবার্তা জনবিরক্তির কারণ সৃষ্টি করেছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান: পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একজন সজ্জন মানুষ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তার লাগামহীন কথাবার্তা তাকে বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে গেছে। পরিকল্পনামন্ত্রীর মোবাইল ছিনতাই, ফেরাউনও আমলাতন্ত্র বন্ধ করতে পারেননি -এ ধরনের কথাবার্তা মানুষের বিরক্তির কারণ হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের কাজেও এম এ মান্নান সফল তা বলা যাবে না।
কারণ বিবিএসের জরিপগুলো সবই পুরনো এবং বাংলাদেশের তথ্য উপাত্ত এখন আপডেটেট নয় এমন অভিযোগ উঠছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যে প্রধান কাজ সঠিক তথ্য উপাত্ত হালনাগাদ করা সেই কাজটিও এই মন্ত্রণালয় তার নেতৃত্বে সঠিক ভাবে পালন করতে পারেনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি: গত আড়াই বছরে অন্যতম ব্যর্থ মন্ত্রী হিসেবে আলোচিত হয় বাণিজ্যমন্ত্রীর নাম। বিশেষ করে যখন পেঁয়াজের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি হয়েছিল তখন। তাছাড়া এখনো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বাজারের উপর কোনরকম নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে বাণিজ্যমন্ত্রী সমালোচিত হন। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী প্রথমদিকে অনেক বেশি কথা বললেও পরে তিনি নিজের কথার লাগাম টেনে ধরেন। এ কারণে এখন তিনি কম সমালোচিত হচ্ছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিভিন্ন সময়ে সরব দেখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য তিনি কতটুকু অর্জন করতে পেরেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
বিশেষ করে বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তার উদ্যোগ সফল হয়নি। তারপরও মিয়ানমারের প্রতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহানুভূতি দেখানো এবং টিকা কূটনীতিতে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করা ইত্যাদি নানা সমালোচনা দুষ্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান: ইয়াফেস ওসমান তিন মেয়াদেই মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম মেয়াদে তিনি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী, দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি পূর্ণ মন্ত্রী এবং এই মেয়াদেও পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় মৃতপ্রায় মন্ত্রণালয় হিসেবেই এখনো কাজ করছে।
বিশেষ করে করোনার সময় যখন বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে সারাবিশ্বে তখন ইয়াফেস ওসমান নিশ্ছিদ্র নীরবতার মধ্যে মন্ত্রিত্ব পালন করছেন। আর এই কারণেই তার অস্তিত্বহীনতাই তার ব্যর্থতা হিসেবে মনে করেন অনেকে।
বাংলা ইনসাইডার