28 C
Dhaka
Saturday, November 23, 2024

গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে আশ্রয়হীনদের মুখে হাসি

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

চাকুরির খবর

“আশ্রয়নের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার” মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের মতো গোপালগঞ্জেও গৃহহীনদের জন্য স্বপ্নের বাড়ি নির্মান করা হয়েছে।

যার চারপাশে ইটের দেওয়াল এবং ছাদে লালসবুজ ইটের ছাউনি। গৃহহীনরা কখনো ভাবতেই পারেননি যে তারা জীবনে একটা পর্যায়ে এসে পাবে এমন একটি নতুন ঠিকানা। তারা এতোদিন অন্যের বাড়িতে দুঃখে কষ্টে আশ্রিত ছিলো। বাস্তুহারা প্রত্যেকেই উঠেছেন এখন নিজের স্বপ্নের নীড়ে।

প্রতিটি বসতঘরে দুটি কক্ষ, একটি টয়লেট, রান্নাঘর, কমনস্পেস, একটি বারান্দাসহ বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থা রয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১২টায় উলপুর আশ্রয়ন পল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাম বাংলার নারীরা দুপুরের রান্নার যোগাড়ে ব্যস্ত। পুরুষরা মনের সুখে ঘোরাফেরা করছে, শিশুরা বারান্দায়, উঠানে খেলাধূলা করছে।

লকডাউনের কারনে কাজে যেতে পারেনি অনেকে, এ জন্য অলস সময়ও কাটছে তাদের। সবকিছু মিলিয়ে খুশিতেই সময় কাটছে তাদের। আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ঘর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করছেন সুবিধাভোগী হতদরিদ্ররা।

ঘরের নির্মান ও গুনগত মান তদারকি করছেন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা। কথা বলছেন হতদরিদ্র সুবিধাভোগী মানুষের সাথে। তাদের কোন সমস্যা থাকলে দ্রæত সমাধান করে দিচ্ছেন।

গোপালগঞ্জ জেলায় মোট ২ হাজার ১৩টি ঘর দেওয়া হয়েছে। জেলায় ১৪শত ৩৩টি ঘরের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ঘরের চাবি সুবিধাভোগীদের হস্তান্তর করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ৪শত ২৬টি ঘরের নির্মান কাজ ও ১শত ৪৬টি ঘরের মাটি ভরাটের কাজ চলমান রয়েছে। মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারনে ৮টি ঘরের কাজ স্থগিত রয়েছে বলে জানান প্রকল্পের কর্মকর্তা।

সদর উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের হতদরিদ্র রেহানা বেগম ও আইয়ুব আলী শেখসহ অনেকে বলেন, আমাদের জমি ঘর কিছুই ছিল না। অন্যের জমিতে কুড়ে ঘরে কোন রকম দিনযাপন করতাম। বরাদ্দ পাওয়া ঘরে সব সুবিধা থাকায় আমাদের কোন ভোগান্তি নেই। বিদ্যুতের আলোতে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে পারছে।

উলপুর ইউনিয়নের মালেঙ্গা আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসরত কাকলী বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন প্রতিবন্ধী । আমার একটা মেয়েকে নিয়ে অন্যের বাড়ি কাজ করে খেতাম। জমি ঘর কিছুই ছিল না। সহযোগিতার ভয়ে কেউ ফিরেও দেখতো না। আমি এখন জমি, ঘর পেয়েছি। নতুন ঠিকানায় অনেক সুখে আছি।

মুকসুদপুরের গোবিন্দপুর ইউনিয়নের কদমপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসরত অন্ধ প্রতিবন্ধী হেনা বেগম বলেন, আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি পাকা ঘরে বসবাস করবো। কি যে খুশি হয়েছি তা বলে বোঝাতে পারবো না।

গোপিনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান শরিফ আমিনুল হক লাচ্চু বলেন, আমার ইউনিয়নে ৯০টি ঘর দেওয়া হয়েছে সুবিধাভোগীদের। আরও ১৪ নতুন করে দেওয়া হবে। ঘরের নির্মান কাজ চলছে, কাজ শেষ হলে সুবিধাভোগীদের কাছে ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আমার ইউনিয়নের ঘরের নির্মান কাজ ও গুনগত মান অনেক ভালো।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ৭৬১টি ঘর দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের এখনো কিছু ঘরের নির্মান কাজ শেষ না হওয়া ঘর সুবিধাভোদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। নির্মান কাজ শেষ হলে ঘরের চাবি সুবিধাভোগীদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

আমাদের ঘরের গুনগত মান অনেক ভাল। জেলা ও উপজেলা অডিট কর্মকর্তারা সব সময় ঘরের কাজ ও গুনগত মানের উপর তদারকি করছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃষ্টিতে উপজেলায় মধুপুর গ্রামে দুটি ঘরের আংশিক ভেঙ্গে পড়েছিল। ঘর দুটি আমরা অল্প সময়ের মধ্যে মেরামত করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে বৃষ্টিতে আর ক্ষতি না হয় তার জন্য আমরা ড্রেনেজ ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে এবং অতি কম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: জোবায়ের রহমান রাশেদ বলেন, কোন মানুষ আশ্রায়হীন হয়ে রাস্তায় থাকবে না। ভাষমান মানুষদের আবাসন দিতে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন আজ বাস্তবে পরিনত হয়েছে।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, কোন মানুষ নিরাশ্রায় না থাকে, কোন মানুষ রাস্তায় না থাকে, ভাসমান মানুষদের আবাসন দেওয়ার লক্ষে মুজিব শর্তবর্ষে প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছিলেন মানুষকে আমরা আবাসনের ব্যবস্থা করবো।

পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশে এটা বাস্তাবয়ন হচ্ছে। সাথে সাথে আমাদের গোপালগঞ্জের ৫টি উপজেলায় ইতিমধ্যে আমরা ১৪ শত ৩৩ টি ঘর সম্পন্ন করেছি। সদর উপজেলায় ৭৬১টি ঘর নির্মান কাজ শেষ হয়েছে বাকি ঘরগুলো নির্মানের কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, সারা বাংলাদেশে দেখছি ছবি আপলোড হচ্ছে কিছু কিছু জায়গায় ঘর ভেঙ্গে গেছে। যদি ঘরের কোন সমস্যা থেকে থাকে বা হতেই পারে যেহেতু একসাথে অনেকগুলো ঘর তৈরি করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ নিচু জায়গা এখানে মাটিরও সল্পতা আছে, বালু ফেলতে হয়। কোথাও পানি জমে থাকলে পানি বের হবার সময় তখন বালুটাও সরে যায়।

কোথাও কোন সমস্যা থাকলে আমরা সাথে সাথে সেটা ঠিক করে দিব। কাজে কারও কোন গাফিলতি থাকলে আমরা তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিব।

- Advertisement -

আরও সাম্প্রতিক খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ খবর