23 C
Dhaka
Friday, November 22, 2024

আসামের হিমন্তকে অভিনন্দনে শেখ হাসিনার কুশলী কূটনীতি

বিডিনিউজ ডেস্ক

চাকুরির খবর

ভারত ও বাংলাদেশের ‘সোনালি অধ্যায়ে’র সম্পর্কে যে সামান্য কয়েকটি অস্বস্তির কাঁটা বিঁধে রয়েছে, তার একটি হলো আসাম। ভারতের উত্তর-পূর্বে এই রাজ্যটিতে চালানো এনআরসি অভিযানে যে লাখ লাখ মানুষের নাম নাগরিকপঞ্জী থেকে বাদ পড়েছে  তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে – এমন একটা আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে আসাম রাজ্যটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ-সংশয় রয়েছে।

অথচ সেই আসামের নতুন মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে অভিনন্দন জানিয়ে এবং বাংলাদেশের ‘গ্রোথ ট্র্যাজেক্টরি’তে আসামকেও শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সেই কূটনীতিতে এক নতুন মোড় এনে দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক কথায় বলতে গেলে, অর্থনীতির সেতুবন্ধতেই তিনি আসামকে কাছে টানার বার্তা দিলেন।

পাশাপাশি ‘বহুত্ববাদী’ বা প্লুরালিস্টিক রাজ্য আসামে সরকার পরিচালনায় হিমন্ত বিশ্বশর্মা যাতে সর্বাঙ্গীনভাবে সফল হোন, শুভেচ্ছা বার্তায় এই কামনাও করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বার্তায় এই ‘প্লুরালিস্টিক’ শব্দটির ব্যবহার যে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, তা অবশ্যই বলার অপেক্ষা রাখে না।

শেখ হাসিনার বার্তা পাওয়ার পর তার জবাব দিতেও এতটুকু দেরি করেননি আসামের নতুন মুখ্যমন্ত্রী।

টুইটারে তিনি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লেখেন, ‘মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভ কামনাকে আমি অত্যন্ত মূল্য দিই ও সম্মান করি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি বাংলাদেশে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশ একইসঙ্গে পা মিলিয়ে অগ্রযাত্রায় চলুক’ … আসাম তার সেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ।’

‘আমরা (বাংলাদেশ ও আসাম) নিশ্চিতভাবেই পরস্পরের দ্বারা লাভবান হতে থাকবো’, আরও লিখেছেন তিনি।

মনে রাখতে হবে, এই হিমন্ত বিশ্বশর্মা সেই একই ব্যক্তি, যিনি রাজ্যের নির্বাচনি প্রচারণাতেও বারে বারে বলেছেন, তিনি বাংলাদেশ থেকে আগত ‘মিঁয়া মুসলিম’দের ভোট চান না। ‘বিজাতীয় বাংলাদেশি সংস্কৃতি’ আসামের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি-রীতি-রেওয়াজকে বিপন্ন করে তুলেছে, এ কথাও বহুবার তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন।

সবচেয়ে বড় কথা, আসামে নতুন করে আবারও এনআরসি অভিযান চালানোর সবচেয়ে কট্টর সমর্থক তিনি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে সোমবারই তিনি বলেছিলেন, রাজ্যের বাংলাদেশ-ঘেঁষা সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এনআরসিতে যাদের নাম উঠে গেছে, তারও অন্তত বিশ শতাংশ নাম ‘রিভেরিভাই’ বা নতুন করে যাচাই-বাছাই করতে চায় তার সরকার।

সোজা কথায় বললে, হিমন্ত বিশ্বশর্মার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ থেকে কথিত অবৈধ অনুপ্রবেশের বিরোধিতা বরাবরই ছিল তার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার।

আসামে বিজেপি টানা দ্বিতীয়বার রাজ্য বিধানসভায় গরিষ্ঠতা পাওয়ার পর দলীয় হাইকমান্ড যখন সর্বানন্দ সোনোওয়ালের জায়গায় এই হিমন্ত বিশ্বশর্মাকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে বেছে নিলো, তখন ধারণা করা হয়েছিল তার অনুসৃত এই ‘অনুপ্রবেশ-বিরোধিতা’ আর ‘নতুন করে এনআরসি’-র নীতিই আসামে প্রাধান্য পাবে।

কিন্তু আসামের নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে অর্থনীতির স্রোতে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা প্রথমেই বুঝিয়ে দিলেন, তিনি চান আসাম ও বাংলাদেশের মধ্যে ডিপ্লোম্যাটিক ন্যারেটিভ-টা অর্থনীতিই ঠিক করে দিক, রাজনীতি নয়!

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জোয়ারে অংশীদার হিসেবে দারুণ লাভবান হতে পারে, এ কথা দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন। তবে নানা কারণে আসাম এতদিন সেই সম্ভাবনার পুরো সুফল পায়নি – শেখ হাসিনা সুকৌশলে সেই কথাটাই হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।

একটা ‘প্লুরালিস্টিক’ রাজ্য চালানোর দায়িত্ব মানে যে সব ধর্মের, সব শ্রেণীর মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করা – তাঁর বার্তায় সেই আভাসও প্রচ্ছন্ন ছিল।

গত সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী হাসিনা টানা তৃতীয়বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা ব্যানার্জিকেও আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কেও রয়েছে তিস্তার অস্বস্তি – কিন্তু তারপরও মমতা ব্যানার্জির জয়ে বাংলাদেশ যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার জয়ই দেখছে, ঢাকা সেই বার্তাও স্পষ্ট করে দিয়েছে কলকাতার কাছে।

ভারতের আর একটি যে রাজ্য বাংলাদেশের লাগোয়া, সেই ত্রিপুরার সঙ্গে অবশ্য ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশের দারুণ সম্পর্ক – বস্তুত সেই একাত্তর থেকেই।

ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত হৃদ্যতা ছিল চমৎকার, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের জমানাতেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থেকেছে।

গত দু-তিন বছরে ত্রিপুরা তো কার্যত ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন ‘ফোকাস’ হয়ে উঠেছে। মিজোরামের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত জঙ্গল ও পাহাড়ে ঘেরা ও অত্যন্ত দুর্গম বলে সেই ধরনের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অবশ্য কম।

‘বলা যেতে পারে আসামই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের একটা ‘অ্যাকিলিস হিল’, যে দুর্বল জায়গাটা হিমন্ত বিশ্বশর্মার জমানায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা প্রথমেই অ্যাড্রেস করার ওপর জোর দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে’, বলছিলেন দিল্লিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পর্যবেক্ষক ও সিনিয়র ভাষ্যকার বলদেব ঘোষাল।

- Advertisement -

আরও সাম্প্রতিক খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ খবর