...
Saturday, June 14, 2025

বাড়ির আঙিনায় পদ্মা সেতু!

চাকুরির খবর

পদ্মা সেতুর জন্য দেশের সব মানুষই অপেক্ষায় আছেন। কবে এই স্বপ্নের পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হবে। কবে থেকে শুরু হবে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে চলাচল।

এসব চিন্তা মাথায় নিয়েই নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু দেখতে যায় অনেকেই। কিন্তু রাজধানীর ধামরাই উপজেলাবাসী পদ্মা সেতু দেখতে ভিড় জমাচ্ছে উপজেলার সুতিপাড়া ইউনিয়নের সুতিপাড়া এলাকার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহাগের বাড়িতে।

ধামরাইয়ের সুতিপাড়া এলাকায় মো. সোহাগ আহম্মেদ (১৭) নামের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তার নিজ বাড়িতে পদ্মা সেতু তৈরি করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আশপাশের লোকজনসহ দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোকজনই আসছেন এই পদ্মা সেতু দেখতে।

প্রতিদিনই শতাধিক লোকজন আসছেন সোহাগের বাড়িতে। সোহাগের এমন প্রতিভা দেখে খুশি স্থানীয় লোকজন। প্রথমে মানুষের নানা মন্তব্য শুনলেও এখন প্রশংসা করছেন সবাই।

ধামরাইয়ের সুতিপাড়া ইউনিয়নের সুতিপাড়া গ্রামের কৃষক মো. সুলতান আলীর ছেলে সোহাগ আহম্মেদ। সে ভালুম আতাউর রহমান খান স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির ব্যবসা শাখার শিক্ষার্থী।

জানা যায়, ২০১৮ সালে পদ্মা সেতুর নাম শুনেই সোহাগের ইচ্ছে হয় সে নিজে ওই পদ্মা সেতুতে কাজ করবে। কিন্তু তা কিছুতেই সম্ভব না। এই কথাটিও সোহাগ বুঝতে পারে।

কিন্তু মথা থেকে কিছুতেই পদ্মা সেতু বানানোর ইচ্ছেটা নামাতে পারে না সোহাগ। যত কিছুই হোক না কেন পদ্মা সেতু তাকে বানাতেই হবে। তার কিছুদিন পর থেকেই মাটি আর বাঁশ দিয়ে সেতু বানাতে কাজ শুরু করে। সেতু বানানোর কিছু সময় পার হওয়ার পরই সেটি ভেঙ্গে যায়।

পড়ালেখা বাদ দিয়ে বাঁশ-মাটি নিয়ে পড়ে থাকতে দেখে মা-বাবাও বকাঝকা করেন। ভাঙা মন নিয়ে সোহাগ পড়ার টেবিলে ঠিকই পড়তে বসে কিন্তু মাথায় একটাই চিন্তা তাকে একটি সেতু তৈরি করতেই হবে।

এমন করেই কেটে যায় সময়। ২০১৯ সালে আবার আরেকটি সেতু তৈরি করে সোহাগ। কিন্তু মনের মতো শক্তপোক্ত না হওয়ায় সেটাও আবার ভেঙে যায়।

এরপর ইন্টারনেট থেকে পদ্মা সেতুর নকশা দেখে ২০২০ সালের নভেম্বরের এক তারিখ থেকে আবার তৃতীয় বারের মত সেতু বানানোর কাজ শুরু করে সোহাগ। দীর্ঘ পাঁচ মাস পর চলতি বছরের ২৬ মার্চ সোহাগের পদ্মা সেতু বানানোর কাজ শেষ হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থী সোহাগ তার বসত বাড়ির আঙিনায় ফাকা একটি জায়গায় পদ্মা সেতুটি তৈরি করেছে। সেতুটির নিচ দিয়ে রেললাইন, চারটি লেন ও বাতির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এ পদ্মা সেতুটি তৈরি করা হয়েছে মূলত মাটি, বাঁশ, সিমেন্ট, মোবাইলে ব্যবহার করা ছোট বাতি ও সাদা কালো রং দিয়ে। সেতুর নিচে মাটি খুঁড়ে বানানো হয়েছে পদ্মানদী।

সেতুটির এক প্রান্তে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। সেতুটির দুই লেনের মাঝে লাগানো হয়েছে ছোট ফুলের চারা। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছে এই সেতুটি দেখতে। সবচেয়ে বেশি দর্শক হয় বিকেলের দিকে।

সাভার থেকে ছুটে আসা শাহীন আলম নামে এক দর্শনার্থী জানান, ফেসবুকে একজনের প্রোফাইলে এই সেতুটির ছবি দেখতে পাই। সেখানে দিনের এবং রাতের ছবি দেয়া ছিলো। সেতুটিতে লাইটিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তাই রাতের তুলা ছবিগুলো দেখে মনে হচ্ছিলো এটা যেন সত্যিই পদ্মা সেতু। দেখতে খুবই সুন্দর ছিলো। তাই আজ তিন বন্ধু মিলে চলে আসছি স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখতে ধামরাইয়ে। আমি আসল পদ্মা সেতু দেখিনি এখনো। তাই আরো বেশি আগ্রহ ছিলো যে এটা যেহেতু ছবিতে এত সুন্দর লাগছে সামনে থেকে দেখতে আরো সুন্দর হবে।

মনে হলো এই সেতুটা সামনে থেকেই দেখতে হবে। তাই তিন বন্ধুর দুই মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটে আসা। এসে দেখলাম সেতুটি। খুব ভালো লাগতেছে। এই সেতুটি দেখে মনে হচ্ছে আসল সেতুটি দেখে ফেলেছি।

আবার মনে হচ্ছে যে আমাদের দেশের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী যদি এত সুন্দর করে মাটি, বাঁশ দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করে দেখাতে পারে, তাহলে পদ্মার বুকে যে আসল সেতুটি আছে তার সৌন্দর্য আরো কত গুণ বেশি হবে।

তাই আমরা ঠিক করেছি কাল পরশুর মধ্যেই আসল সেতুটি দেখতে যাবো। কারণ সোহাগের এই সেতুটি দেখেই আমার আসল সেতুটি দেখার আরো আগ্রহ বেড়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দিন জানান, সোহাগ খেয়ে না খেয়ে শুধু এই সেতু বানানোর কাজেই ব্যস্ত থাকতো। এই কাজের জন্য ওর মা-বাবার কাছে অনেক কথাও শুনেছে। প্রথম দুইবার বানিয়ে সার্থক হয় নাই। ভেঙে গেছে সেগুলা। কিন্তু সোহাগ তার লক্ষ স্থির রেখে কাজ করে গেছে। আজ তার কষ্ট সার্থক হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি বানানোর পর আজ অনেক লোকজন এসে ভিড় জমাচ্ছে সোহাগের বাড়িতে এই পদ্মা সেতু দেখতে। সোহাগ সুযোগ সুবিধা পেলে আরো ভালো কিছু করতে পারবে আমাদের বিশ্বাস। সে মেধাবী শিক্ষার্থী।

করোনাকালে সকল স্কুল কলেজ বন্ধ। এ সময়ে প্রায় সব ছাত্র-ছাত্রীরাই খেলাধুলা, ঘুরাফেরা, ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ত থাকছে। কিন্তু সোহাগ কোনো খারাপ আড্ডায় না গিয়ে সুন্দর একটি জিনিস তৈরি করেছে। যে সেতুর জন্য আজ সারা দেশ অপেক্ষা করছে। সেই পদ্মা সেতু তৈরি করে দেখিয়েছে সোহাগ।

পদ্মা সেতু তৈরি করা মো. সোহাগ আহম্মেদ বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট, সেতুসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতাম। পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান যেদিন বসানো হয় সেদিনই আমার মনে হয় আমি নিজে যদি একটা সেতু বানাতে পারতাম। তার পরই আমি পদ্মা সেতু বানানোর কাজ শুরু করি।

কিন্তু তখনো আমি পদ্মা সেতুর নকশা জানতাম না। তাই দু’বছরে দুটি সেতু বানালেও আবার ভেঙে যায়। পরে ২০২০ সালে পদ্মা সেতুর নকশা দেখতে পাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে। পরে নভেম্বর মাসের এক তারিখ থেকে আবার সেতু বানানোর কাজ শুরু করি। পাঁচ মাস পর আমার সেতু বানানো শেষ হয়।

এই সেতু বানানোর সময় অনেক কথা শুনেছি। অনেকেই খারাপ মন্তব্য করেছে। আমার মা-বাবাও আমাকে বকাঝকা করতো। কিন্তু এখন আমার বানানো এই সেতু দেখতে মানুষ ভিড় জমায় আমার বাড়িতে তখন আমার মা-বাবা অনেক খুশি হয়। এ পর্যন্ত কয়েক হাজারের মত মানুষ এসেছে আমার তৈরি এই পদ্মা সেতু দেখতে।

প্রতিদিনই মানুষ আসছে। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার বাবার তেমন সামর্থ্য না থাকায় শুধু বাঁশ, মাটি আর আমার হাত খরচের টাকা দিয়ে কেনা সিমেন্ট দিয়েই এই সেতুটি তৈরি করেছি। যদি সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা পেতাম তা হলে হয়ত আরো সুন্দর ও বড় করে তৈরি করতে পারতাম।

বড় হইয়ে কি হওয়ার ইচ্ছা জানতে চাইলে সোহাগ তার অভিমত জানায়। বলে, আমি বড় হইয়ে একজন ভালো ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। আমার দেশে সেতু বানানোর জন্য আজ চায়না থেকে লোক এনে সেতু তৈরি করা হচ্ছে।

এমন যেন আর না হয়। আমরা যারা বাংলাদেশের সন্তান আছি তারা যেন আমাদের দেশসহ বিদেশে গিয়ে কাজ করতে পারি আমি এমন একজন দক্ষ প্রকৌশলী হতে চাই।

সোহাগের বাবা সুলতান আলী জানান, পড়াশোনা বাদ দিয়ে যখন মাটি আর বাঁশ নিয়ে পরে থাকতো তখন আমি ওকে ধমক দিতাম। পড়া বাদ দিয়ে কি করছ এগুলা।

কিন্তু এখন হাজার হাজার মানুষ আসতেছে আমার বাড়িতে আমার ছেলের বানানো এই পদ্মা সেতু দেখতে। এটা আমার খুব গর্ভের বিষয়। খুব ভালো লাগছে। আমি কৃষক মানুষ ছেলেকে কতটুকু পড়াশোনা করাতে পারবো জানি না।

আমার যতটুকু সামর্থ্য আছে সেই পর্যন্ত আমার ছেলেকে আমি পড়াবো। বাকিটা যদি আল্লাহ মুখ তুলে চায় তা হলে ছেলে আমার ভালো কিছু করতে পারবে। আমি সবার কাছে আমার ছেলের জন্য দোয়া চাই যেন আমার ছেলের নেক আশা আল্লাহ পূরণ করেন।

এ বিষয়ে সুতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রাজা জানান, আজ সকালে সুতিপাড়া গ্রামে সোহাগ আহাম্মদের বানানো পদ্মা সেতুটি দেখেছি।

এর আগে ২৬ মার্চের দিন আমার সেতুটি দেখতে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ওই দিন উপজেলার বিভিন্ন প্রোগ্রাম থাকাতে আর যাওয়া হয়নি। আমার এলাকার একজন ছেলের এমন প্রতিভা আসলেই প্রশংসার।

দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশে এমন প্রতিভাবান ছেলেমেয়েদেরকে আমরা তাদের প্রতিভা বিকাশে সব ধরণের সাহায্য সহযোগিতা করবো। এরাই দেশের আগামীর ভবিষ্যৎ।

সোহাগ যে সেতুটি তৈরি করেছে সেটি আসলেই অনেক সুন্দর হইছে। তার সাথে কথা বলে জানতে পারি ২০১৮ সাল থেকে সেতুটি তৈরির চেষ্টা করে ২০২১ সালে সে এই সেতুটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

তার এমন প্রতিভায় মুগ্ধ সবাই। তার যদি কোন সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তা হলে আমি তার পাশে থাকবো।

- Advertisement -

আরও সাম্প্রতিক খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ খবর

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.