সরকার ঘোষিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম এখন দেশের সব নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, প্রবাসী, কৃষক, শ্রমিক, জেলে, তাঁতীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে এই পেনশন সুবিধার আওতায় আসতে পারবেন। সরকার জানিয়েছে, “দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা সকল নাগরিককে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই সুবিধার আওতায় আনা হবে।”
সরকারি সূত্রে আরও জানা গেছে, বয়স, পেশা ও অবদানের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে পেনশন সুবিধাভোগীদের।
প্রগতী (বেসরকারি চাকরিজীবী): মাসিক অবদান: ১,০০০ / ২,০০০ / ৩,০০০ / ৫,০০০ / ১০,০০০ / ১৫,০০০ টাকা। এখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক বা কর্মচারী অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণ করলে ৫০% অবদান কর্মী এবং ৫০% প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে। প্রতিষ্ঠান অংশ না নিলেও কর্মী নিজ উদ্যোগে এককভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সুরক্ষা (স্বল্প আয়ের নিয়োজিত) মাসিক অবদান: ১,০০০ / ২,০০০ / ৩,০০০ / ৫,০০০ টাকা।
সমতা (দারিদ্র্যসীমার নিচের আয়ের মানুষ) মাসিক অবদান: ১,০০০ টাকা (এর মধ্যে ৫০০ টাকা চাঁদাদাতা এবং ৫০০ টাকা সরকারি অংশ)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী বাৎসরিক আয় ৬০ হাজার টাকার নিচে হলে এই স্কিমে অংশ নেয়া যাবে।
প্রবাস (প্রবাসীদের জন্য) মাসিক অবদান: ১,০০০ / ২,০০০ / ৫,০০০ / ৭,৫০০ / ১০,০০০ / ৩০,০০০ টাকা। প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রায় নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদান করে স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন। দেশে ফিরে সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশী মুদ্রায় পরিশোধপূর্বক প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তনও করতে পারবেন। এছাড়া, প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের পরিবারের ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব সদস্যদের জন্যও এই স্কিমে আবেদন করতে পারবেন।
কৃষক, শ্রমিক, জেলে, তাঁতীসহ অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবী: মাসিক অবদান: ১,০০০ / ২,০০০ / ৩,০০০ / ৫,০০০ টাকা। স্বকর্মে নিয়োজিত বা অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মী যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতীসহ সকলেই এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
শর্ত ও সুবিধাসমূহ: অন্তর্ভুক্তির বয়স: ১৮ থেকে ৫০ বছর।
পেনশন বয়স: ৬০ বছর। মৃত্যুকালে নমিনির পেনশন সুবিধা থাকবে। টাকা ফেরতের সুযোগ রয়েছে। মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বাৎসরিক ভিত্তিতে অবদান দেওয়া যাবে
সরকার ও পেনশন তহবিল থেকে বিনিয়োগ হবে এবং নির্ধারিত সুদ প্রদান করা হবে। অবদানকারী চাইলে নির্ধারিত সময়ের আগেও আংশিক অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন
অনলাইনে নিবন্ধন: ইউনিয়ন নেটওয়ার্ক বা নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের সময় ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না।
প্রবাসী নাগরিকদের ক্ষেত্রে, আবেদনপত্রের সঙ্গে এনআইডি, ব্যাংক হিসাব নম্বর ও নমিনির তথ্য দিতে হবে।
সরকারের এই উদ্যোগ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কিংবা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তা-সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হয়ে সেই শঙ্কা কমাতে পারবেন দেশের প্রত্যেক নাগরিক।