26 C
Dhaka
Thursday, November 21, 2024

দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নতুন প্রজন্মের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহবান

চাকুরির খবর

দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নতুন প্রজন্মের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহবান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণা লব্দ জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে আগামীতে নেতৃত্ব দানে প্রস্তত হবার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি আজ সকালে ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা -২০২২’ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সোনার ছেলে-মেয়েরা তোমরা তৈরি হও আগামীতে দেশকে নেতৃত্ব দিতে। সর্বক্ষেত্রেই তোমরা তোমাদের মেধার বিকাশ ঘটাবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেেব। যেন বাংলাদেশ আর পিছিয়ে না থাকে, বাংলাদেশ এগিয়ে যায় এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা আরো উন্নত হয়।’

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর সেগুন বাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউট মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকের শিশুরা ভবিষ্যতে এদেশের কর্ণধার হবে। তারাই তো আমার মত প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী, হবে শিক্ষক, বড় বড় কর্মকর্তা হবে এবং প্রশাসন, সংবাদিকতাসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে দেশের উন্নতি করবে। কাজেই, সেইভাবে তারা তৈরী হোক। 
তিনি বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তোমাদের চলতে হবে এবং প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের যে বিকাশ ঘটছে তারসঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি এ সময় কৃষি, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য খাত সহ বিভিন্ন খাতে গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, গবেষণাই পারে এক্ষেত্রে পথ দেখাতে। আর আগামীর বাংলাদেশকে আজকের মোধাবীরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি বিশ^াস করি। 
এ সময় তিনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদেরকেও এই মেধা অন্বেষণে যুক্ত করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান। কেননা, এদের মধ্যেও বিশেষ প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে এবং এরাও আমাদের সন্তান এবং এবং আপনজন সেই বিবেচনায় এদেরকেও মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। কাজেই, নতুন প্রজন্মকে আমি বলব, সকলকে নিয়ে চল। তবেই আমরা সাফল্য অর্জন করতে পারবে, বলেন তিনি।
পুরস্কার বিজয়ী সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তোমাদের যে সুপ্ত মেধা সেটাই আমাদের ভবিষ্যত।
বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ নীতিমালা-২০১২ প্রণয়ণের মাধ্যমে ২০১৩ সাল থেকে মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রতিযোগিতাটির নামকরণ করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা’।
দেশে সকল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিনটি গ্রুপে (ষষ্ঠ-অষ্টম, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ) বিভক্ত করে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতিযোগিতা।
অনুষ্ঠানে ভাষা-সাহিত্য, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার, বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ ও মুক্তিযুদ্ধ (শুধুমাত্র বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য)সহ মোট পাঁচটি বিষয়ে তিনটি গ্রুপে দেশের ১৫ জন মেধাবীকে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ পুরস্কার দেওয়া হয়।
এ বছর এপ্রিল-মে মাসে প্রতিষ্ঠান, উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা মোট ১৩২ জন থেকে বিচারকদের মূল্যায়নে ১৫ জন এবছরের সেরা মেধাবী নির্বাচন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
পুরস্কার হিসেবে প্রত্যককে ২ লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট,মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
শিক্ষামন্ত্রী ডা.দিপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অথিথি হিসেবে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেন বক্তৃতা করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে রাজশাহী কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী মিফতাহুল জান্নাত এবং রাজবাড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র জুলকারনাইন নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে এই প্রতিযোগিতার ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়।

জাতির পিতার বক্তব্য-‘সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই’-এর উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থাৎ সেবার মানসিকতাটা সকলের মাঝে থাকতে হবে। আজকে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে যেখানে যে আছেন, সকলেই মনে রাখবেন আমাদের দেশের যে সম্পদ তার সব কিছুই জনগণের সম্পদ। রোদ, ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলেই তাদের এই অর্জন। কাজেই, তাদের ও এর ওপর সমান অধিকার রয়েছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছেন দেশ ও এর জনগণের জন্য কাজ করতে। কাজেই, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বিশ^ ব্যাংক যখন মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ দিল তিনি তখন সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। যা তারা প্রমাণ করতে পারেনি। 
সরকার প্রধান বলেন, দুর্ভাগ্য হলো আমাদের দেশেরই কোন কোন ব্যক্তির প্ররোচনাতেই এটা ঘটে। তবে. আমরা নিজস্বে অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখিয়েছি হ্যাঁ বাংলাদেশও পারে, আমরা পারি।
জাতির পিতার তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না,’ বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি।

তিনি আজকের শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে বলেন, তাদের সবসময় এটা মাথায় রাখতে হবে যে আমরা বিজয়ী জাতি এবং বিশে^ সবসময় মাথা উঁচু করে চলবো, সম্মানের সাথে চলবো। আর এই দেশ আমাদের এ দেশকে আমরা গড়ে তুলবো উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে।
তাঁর সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা এবং বিদ্যুৎ সহ নানা নাগরিক সেবা তৃণমূল পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আধুনিক বিজ্ঞান চর্চা এবং প্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো এবং সেটা আজকের যারা নতুন প্রজন্ম তারাই পারবে।
তিনি এই মেধা অন্বেষণকে একটি চমৎকার ব্যবস্থা আখ্যায়িত করে বলেন. এর মাধ্যমে অনেক সুপ্ত প্রতিভা বের হয়ে আসবে যারা আগামীতে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই তাঁর সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্ব দেয় এবং ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৬টি বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয়, সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট এবং নভোথিয়েটার প্রতিষ্ঠা করে।
আমাদের ছেলে-মেয়েরা বা নতুন প্রজন্ম প্রযুক্তি বিকাশের এই যুগে জন্ম নেয়ায় প্রাকৃতিক ভাবেই অনেক মেধাবী উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের যে সুপ্ত মেধা রয়েছে সেটাকেই আমাদের অন্বেষণ করতে হবে এবং সেটাকেই আগামীর উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কাজে ব্যবহার করতে হবে। 
সে দিকে লক্ষ্য রেখেই তাঁর সরকার যেন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে তেমনি ছেলে-মেয়েদের আরো ভালভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সুযোগও সৃষ্টি করে দিচ্ছে, বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০০’ প্রণয়ন করলেও পরবর্তী বিএনপি-জামাত জোট সরকার তা বাতিল করে দেয় এবং ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের পর তাঁর সরকার পুণরায় সেই সেই নীতি প্রণয়ন করে এর বাস্তবায়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কেননা, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির না করে কাজ করলে কখনো সাফল্য পাওয়া যায় না।
জাতির পিতার করে যাওয়া ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং সেই পদাংক অনুসরণ করে তাঁর সরকারের ১৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয় জাতীয়করণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। 
যার মধ্যে রয়েছে- কৃষি, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইন্সেস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল, ইসলামি-আরবি, টেক্সটাইল, মেরিটাইম, এভিয়েশন ও এরোস্পেস, বেসরকারি ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। 
প্রতিটি উপজেলায় তাঁর সরকারের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুবিধাবঞ্চিত ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডে সিড মানি হিসেবে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি বই উৎসব পালন করি। মহামারীকালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রথমিক, প্রথমিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সকলকে স্বাস্থ্য-সুরক্ষা মেনে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৪টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। 
তিনি এ সময় শিক্ষার বিকাশে তাঁর সরকারের প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে বৃত্তি ও উপবৃত্তি  ও কিট এলাউন্স প্রদানসহ নানা কর্মকান্ডেরও উল্লেখ করেন। নতুন করে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ শুরু হওয়ায় তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন।

তিনি জানান, ১২ বছরের নিচের শিশুদের টিকা দিয়ে সুরক্ষিত করা যায় কি না সেই অনুমোদনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে আবেদন জানিয়েছে সরকার।

- Advertisement -

আরও সাম্প্রতিক খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ খবর