ময়মনসিংহের ত্রিশালে জালিয়াতির মাধ্যমে কৃষকের জমি হাতিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদ করতে ২০১৮ সালে খুন হন ত্রিশালের খাগাটি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাষ্টার। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার সাক্ষীদের ফাঁসাতে প্রথমে হত্যা করা হয় রফিকুল ইসলাম নামে এক দপ্তরিকে। এরপর আরেক সাক্ষীর চাচা আবুল কালামকেও হত্যা করা হয়।
এই তিন হত্যাকাণ্ডের মুল পরিকল্পনাকারী ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট জিলানী বাহিনীর প্রধান আব্দুল কাদের জিলানী (৪৭)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে র্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন জিলানীসহ তিনজন। বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেপ্তার অন্য দুইজন হলেন- জিলানীর বড় ভাই লাল মিয়া (৫০) ও ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৭)। বুধবার ২০ এপ্রিল রাতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৪।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। মূলত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার হত্যা মামলা থেকে বাঁচার জন্য তারা মোট আরও দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এছাড়াও ভূমিদস্যু জিলানী বাহিনী ত্রিশালে জালিয়াতির মাধ্যমে কৃষকদের জমি দখল করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে অতিরিক্ত লাভে বিক্রি করতো।
মামলা থেকে নিজের লোকদের বাঁচাতে গ্রামের কাউকে হত্যা করে দায়ভার চাপানো হবে মতিন মাষ্টার হত্যা মামলার সাক্ষীদের উপর, এমন পরিকল্পনা করে মাস্টার মাইন্ড আব্দুল কাদের জিলানী। পুলিশ প্রতিবেদন বলছে, জিলানী ও মোবারক হোসেন মতিন হত্যা মামলার সাক্ষীদের ফাঁসাতে ২০১৯ সালে হত্যা করে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দপ্তরি রফিকুল ইসলামকে। এবার দপ্তরি রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলার সাক্ষী সোহাগ মিয়াকে দেয়া হয় হুমকি। স্থানীয়রা বলছে, দুই মামলার সাক্ষীদের থামাতে হত্যা বা হাত-পা কেটে ফেলার পুরষ্কারও ঘোষণা করে জিলানী।
বাগে আনতে সাক্ষী সোহাগ মিয়াকে হত্যার ছক কষে অপরাধীরা। ১৪ এপ্রিল হামলা হয় সোহাগের বিরুদ্ধে। এ সময় ভাতিজা সোহাগকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হন চাচা আবুল কালাম আজাদ।
অনুসন্ধানে দেখা যায় দুটি হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ ১১টি মামলা ও ১০টি জিডি রয়েছে পলাতক জিলানীর বিরুদ্ধে। ত্রিশাল থানার ওসি মাইন উদ্দিন অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ।