21 C
Dhaka
Friday, November 22, 2024

রাষ্ট্রদূতের নথিঃ দুর্নীতি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে এখনও যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ তারেক

চাকুরির খবর

বিডিনিউজ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দিতে ওয়াশিংটনে গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন ঢাকার মার্কিন দূতাবাস।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাবশালী নেতা তারেক রহমান ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে উল্লেখ করে ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর ওই রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন সাবেক অ্যাম্বাসেডর জেমস এফ মরিয়র্টি।

মরিয়র্টির এই রিপোর্ট তারেক রহমান সম্পর্কে আমেরিকার অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়। অন্যদিকে যে ব্রিটেনে তারেক অবস্থান করছেন, সেখানে তিনি ইনকাম ট্যাক্স ফাইলে তার আয়ের উৎস হিসেবে কী দেখাচ্ছেন, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।

তাছাড়া ব্রিটেনে তারেক রহমানের কর্মকাণ্ড সন্ত্রাসবাদের পক্ষে-এমন বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেশী কয়েকটি রাষ্ট্রের চাপও রয়েছে ব্রিটেনের ওপর।

দেশের বেশ কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের নাম উল্লেখ করে মার্কিন দূতাবাসের সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে দেড় লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ মার্কিন ডলার ঘুষ নিয়েছেন তারেক। এছাড়া তারেক ও তার ভাই কোকো সিমেন্সের কাছ থেকে ২ শতাংশ ও হারবিন কোম্পানির কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ ডলার ঘুষ নিয়েছেন।

আবার একটি বড় কোম্পানির (বসুন্ধরা) মালিকের ছেলেকে তার কর্মকর্তাকে খুন করার মামলা থেকে রক্ষার নিশ্চয়তা দিয়ে ৩১ লাখ ডলার ঘুষ নিয়েছেন তারেক। তারা জিয়া অরফানেজ থেকে লুট করেছেন ২ কোটি টাকা।

এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সব কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলেও ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে।

সরকারি ক্রয় এবং রাজনৈতিক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায়ই ঘুষ চাইতেন তারেক। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ঘুষ কেলেঙ্কারি, অর্থ আত্মসাৎ ও কর ফাঁকি অনেক মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও তিনি মুক্তি পেয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে গভীর আঁতাতের মাধ্যমে তারেক বিচার প্রক্রিয়ায় কারসাজি করে জামিন নিয়ে পালিয়ে যায়।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি ডলার অর্জনের দায়ে গুরুতর অভিযোগ এনেছে। তারেকের বিরুদ্ধে কয়েকটি চাঁদাবাজির মামলাও রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে।

এসব ঘুষ ও চাঁদাবাজির বাইরেও তারেক ব্যাপক অর্থ তছরুপে জড়িত ছিলেন। কয়েকজন সহচরের মাধ্যমে তিনি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ফান্ডের ৩ লাখ ডলার আত্মসাৎ করেন।

দুদকের বরাতে মরিয়ার্টি আরও বলেন, তারেক ছিলেন ওই তহবিলের সহ-স্বাক্ষরদাতা। ওই ফান্ডের অর্থ দিয়ে তিনি নিজ শহরে একটি জমি কিনেছেন। এছাড়া ওই তহবিলের অর্থ তিনি ২০০৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির সদস্যদের মধ্যেও বিলি করেছেন।

আরও বলা হয়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মধ্যে ছিল আরেক `ছায়া সরকার`। হাওয়া ভবনে বসে এ সরকার চালাতেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন দল ও জোটের উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েক নেতা।

উল্লেখ্য, তারেককে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য বিপদজ্জনক, সেদেশে প্রবেশের অনুপযুক্ত ঘোষণার মতো এর আগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী আর বিএনপির প্রিয় পুলিশ অফিসার কোহিনুর মিয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

জেমস এফ মরিয়র্টির এই গোপন তারবার্তাটি ছাড়াও বিভিন্ন সময় তারেক রহমানসহ শীর্ষ অনেক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেতিবাচক প্রতিবেদন গিয়েছে বলে জান যায়।

সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিংসহ অনেক গুরুতর অভিযোগ ছিলো তাদের বিরুদ্ধে। তারেক রহমানের মত তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এর পরপরই তারেক যুক্তরাজ্যে চলে যান। আর কোকো চলে যান মালয়েশিয়ায়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এখনও এই নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে এবং তারেক রহমান পারসন নন-গ্রাটা হিসেবেই চিহ্নিত। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তারেক রহমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদসহ আন্তর্জাতিক চোরাচালান এবং মানি লন্ডারিং চক্রের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন না বিএনপির আরেক সাবেক নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর। যিনি বর্তমানে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং দশ ট্রাক অস্ত্র চোরচালান মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারা অন্তরীণ রয়েছেন।

এছাড়াও বিএনপির আরেক প্রভাবশালী নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালুও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাননি বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি এরকম নেতাদের মধ্যে কয়েকজন এখন বিএনপির বিভিন্ন পদে রয়েছেন বলেও জানা গেছে।

এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াত জোটের হাত ধরে দেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা পায়। সরাসরি রাষ্ট্রীয় মদদে গড়ে তোলা হয় বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন। যাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ছিল পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা। এতে মদদ দেয় পাকিস্থানের গোয়েন্দা সংস্থা- আইএসআই।

সে সময় জঙ্গি সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদেরকে আফগানিস্তানে এবং পাকিস্থানে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়। সাথে যোগ দেয় ৮০’র দশকে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করা জঙ্গিরাও। তারেক রহমানের নির্দেশে দেশের কয়েকটি নিরাপত্তা সংস্থায় কর্মরত কয়েকজন আজ্ঞাবহ কর্মকর্তা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ প্রসারে সরাসরি সহযোগিতা করেন।

জঙ্গি নেতাদের সাথে কথা বলে এবং তাদের কাছ থেকে ভিডিও সাক্ষাৎকার গ্রহণসহ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন তাসনিম খলিল, যার শিরোনাম ছল ‘প্রিন্স অব বগুড়া’। সেই প্রতিবেদন নাখোশ করে তারেক রহমানকে। ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে তাসনিম খলিলকে ব্যাপক নির্যাতন সইতে হয়েছিল।

সূত্র: ঢাকা টেলিভিশন

- Advertisement -

আরও সাম্প্রতিক খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ খবর