গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ একান্ত আপন করে লোকজ শিল্পকে লালন-পালন এবং সেই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার নিরলস প্রচেষ্টায় নিবেদিত হয়ে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে গোপালগঞ্জের তরুন কারু শিল্পী সুনির্মল দাস বাপী (৩০)।
ইতোমধ্য সে লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরী করে নিজ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সুনাম ও পরিচিতি লাভ করেছেন। বিভিন্ন স্থানীয়, জাতীয় পত্রিকা এবং অনেক টিভি চ্যানেলে তার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় হারিয়ে যাওয়া ৬৫ প্রকারের বাদ্যযন্ত্র তৈরী করে বাপী দক্ষ কারু শিল্পী হয়ে উঠেছে ।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর গ্রামে তার বাড়ি। সে গোপালগঞ্জ সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স মাষ্টার্স ও ডি এইচ,এম,এস শেষ করেছেন। বর্তামানে তিনি এল,এল ,বি ও বি ,পি, এড, অধ্যয়নরত আছেন। তার বাবা সুনীল কুমার দাস অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ছোট বেলা থেকেই বাপী কারু শিল্পী, সামাজিক ও সংস্কৃতিমনা । সে নিজে বিভিন্ন প্রকার সঙ্গীত পরিবেশন করতে পারে। ১০/১২বছর বয়সে একই গ্রামের বর্ষিয়ান কারু শিল্পী বিজয় পান্ডের কাছে তার হাতে খড়ি ।
তার তৈরী উল্লেখযোগ্য বাদ্যযন্ত্র গুলো হলো, কাঠ থেকে দোতারা, ঘমক, খঞ্জনি, কাঠ সেকার , সরজ, বেহালা, কাহন , ঢাক-ঢোল, তবলা, সেকার , সানাই, প্রেমজুড়ি, রাবনবীনা , কাড়া, জয়ঢাক, একতারা, পাখওয়াজ, নাল, চাপটিঢোল, ডুগডুগি । এছাড়াও রয়েছে বাঁশ থেকে তৈরী চটা, বাঁশি, মোহনবাশি, গুপিযন্ত্র, ফুরাংফাং বাঁশতরঙ্গ ইত্যাদি।
নারিকেলের মালা থেকে একতারা , মোনসেকার, মেরাকাচ, বীনবাঁশি বাদ্যযন্ত্র তৈরী করেছে সে।
ফেলানো জিনিস থেকেও বাদ্যযন্ত্র যেমন দুধের কোউটা, মেলামাইনের পেলেট থেকে বাদ্যযন্ত্র, ম্যাচকাঠি বাজানো বাদ্যযন্ত্র ,শামুক,তালের আঠি, মেটো চাড়া, গাড়ির হর্ন, প্রভৃতি ফেলানো জিনিস থেকেও অনেক বাদ্যযন্ত্র তৈরী করেছেন বাপী । এর প্রত্যেকটা যন্ত্র তিনি বাঁজাতেও পারেন ।
২০১৭ সালে ঢাকা কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর তিন দিন ব্যাপি সম্মেলন, গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন মেলাতে এগুলোর ব্যপকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে ।
সুনির্মল দাস বাপী শুধু একজন কারু শিল্পীই নয় তিনি বহু প্রতিভার অধিকারী। সে একাধারে মিমিক ও অভিনয় শিল্পী । বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। বাপী শুধু বাদ্যযন্ত্র তৈরী ও বাজানোর ভিতর সীমাবদ্ধ নয় , সে জেলার প্রায় শতাধিক স্কুল কলেজে বকুল ফুলের গাছ রোপন করেছেন।
বাপী আরো জানায়, বর্তমান সরকার যুবক বেকারদের নানা ধরনের আত্মকর্ম সংস্থানের লক্ষ্যে বিশেষ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছেন। এক বছর, ছয় মাস, তিন মাস, সপ্তাহ মেয়াদে অনেক ধরনের প্রশিক্ষন নিয়েছেন বাপি। তার যৌথ পরিবারের লোকসংখ্যা এখন দশ জন। মা-বাবা অনেক রোগ-ব্যধিতে ভুগছেন। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
এমতাবস্থায়, বাপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে একটা চাকুরির জোর দাবি করেছেন। অপর দিকে লোকসংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মাদক, জঙ্গী ও সন্ত্রাস মুক্ত দেশ গড়তে চায় বাপী। সে নিজ বাড়ীতে একটা জাদুঘর তৈরী করার আশা ব্যক্ত করেন। বর্তমানে সে গোপালগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে তবলা প্রশিক্ষন নিচ্ছেন ।
ভবিষ্যতে তিনি একজন মিউজিক পরিচালক হবেন বলেও আশাবাদী। জেলা কালচারাল অফিসার ইবনে বিন সালেহ বলেন, কারু শিল্পি বাপী দাসের লোকজ সংস্কৃতি রক্ষা ও বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। তা হলে সে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।