জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৈতৃক বাড়ির পেছন দিয়ে বয়ে যাচ্ছে বাঘিয়ার খাল। আর খালের পাশে এখনও দাঁড়িয়ে আছে হিজল গাছ।
বঙ্গবন্ধুর গোসল আর সময় কাটানোর অনেক স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে বাঘিয়ার খাল ও হিজল গাছটি। শুধু নেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু। হিজল গাছটি এখনও যেন ডুকরে ডুকরে কাঁদে বঙ্গবন্ধুর জন্য।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছোটবেলা মা-বাবা আদর করে ডাকতেন খোকা নামে। দুরন্তপনায় ছিলেন সবার থেকে অনন্য।
বাড়ির পেছন দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঘিয়ার খালে করতেন গোসল। সঙ্গে থাকতেন সমবয়সিরা। দুরন্তপনায় যেন হার মেনে যেত খালের পানির প্রবাহ। এ থেকে বাদ পড়ত না হিজল গাছটিও।
সমবয়সিদের সঙ্গে নিয়ে গাছে উঠে খালের মাঝে করতেন লাফালাফি।
বড় হয়ে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করলেও টুঙ্গিপাড়ায় এলে বিভিন্ন কাজের জন্য এখান থেকেই নৌকায় বের হতেন বঙ্গবন্ধু। এলাকার মানুষ আর বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতেন এখানেই।
বঙ্গবন্ধু না থাকলেও সেই বাঘিয়ার খাল আর হিজল গাছটি আজও নানা স্মৃতির সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
শুধু বঙ্গবন্ধুই নন এ খালে (বর্তমানে বাঁধানো ঘাট) তার বড় কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছোট কন্যা শেখ রেহানাও গোসল করতেন ছোটবেলায়। সাঁতার আর ডুব-সাঁতার কাটতেন তারা।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রাখতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পার্শ্ববর্তী খালের পাড় ও হিজল গাছের চারপাশ বাঁধাই করা হয়েছে। প্রতিদিনই জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত হিজলতলাসহ খাল পরিদর্শনে আসেন শত শত বঙ্গবন্ধুপ্রেমী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বয়সের দর্শনার্থীরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে এসে যেন অনুভব করেন বঙ্গবন্ধুর ছোঁয়া।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত সেই খালপাড় ও হিজল গাছ দাঁড়িয়ে আছে এখনও। নানা স্মৃতি বহন করে বছরের পর পর যেন অপেক্ষায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর।
দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকে বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি, কিন্তু টুঙ্গিপাড়ায় তার অনেক স্মৃতি রয়েছে। তাই এখানে এসে বঙ্গবন্ধুর আদি পৈতৃক বাড়ি, ছেলেবেলার খেলার মাঠ, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বালিশা আমগাছ ও হিজলতলাসহ বিভিন্ন স্মৃতি ঘুরে ঘুরে দেখি। যতই দেখি ততই অন্যরকম একটা অনুভূতি উপলব্ধি করি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবু তাহের (৬৫) ও শেখ লুৎফর (৫৯) বলেন, বাপ-দাদাদের কাছে শুনেছি ছোটবেলায় বঙ্গবন্ধু এ খালে গোসল করতেন। সঙ্গে থাকতেন সমবয়সিরা। দুষ্টুমি আর চঞ্চলতার মধ্যেই সেরে নিতেন গোসল। এ সময় তিনি এই হিজল গাছে উঠে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।
টুঙ্গিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বন্ধু সৈয়দ নুরুল হুদা মানিকের ছেলে সৈয়দ নজরূল ইসলাম বলেন, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির পাশেই বয়ে যাওয়া বাঘিয়ার ছোট খাল এবং ঘাটের হিজল গাছ অনেক স্মৃতি বহন করে চলেছে। এই হিজল গাছের নিচে খালের ঘাটে বঙ্গবন্ধু গোসল করতেন।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল বলেন, বঙ্গবন্ধু ছোটবেলায় ছিলেন দুষ্টু প্রকৃতির। কিন্তু মানুষের দুখ-কষ্ট সইতে পারতেন না। সমবয়সিদের সঙ্গে এ খালে গোসল করতেন।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি আর পদচিহ্ন ধরে রাখার জন্য বাঘিয়ার খালপাড় ও হিজল গাছের চারপাশ বাঁধাই করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। যাতে বঙ্গবন্ধুপ্রেমীরা বঙ্গবন্ধুর শৈশবের ছোঁয়া অনুভব করতে পারে।