একটা সময় ছিলো মনে করা হতো যে, পুরুষরা বেশি অপরাধ করে, নারীদের অপরাধ প্রবণতা কম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে যে, অপরাধ প্রবণতায় পুরুষকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে নারীরা।
আর বিভিন্ন হত্যা, নির্যাতন ইত্যাদি ঘটনা যেমন আছে তেমনি আছে পরিকল্পিত অপরাধ চক্র। অপরাধ চক্রে নারী অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে। শুধু নারী অপরাধী না, সেলিব্রেটি নারী অপরাধী। যারা সমাজে বিভিন্নভাবে পরিচিত তাদের অপরাধের মাত্রা এখন আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে।
গত দুই বছরে বাংলাদেশে শোবিজ এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে যারা পরিচিত মুখ, প্রভাবশালী এরকম নারীদের অপরাধ প্রবণতার খবর মাধ্যমে আসছে, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে কিন্তু এরকম অনেক অপরাধী এখনো দৃশ্যপটের আড়ালে রয়ে গেছে বলেই বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে।
পাপিয়া ছিলেন যুবলীগের নরসিংদী জেলার সভাপতি। তিনি বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন। সেজন্য তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। কিন্তু পাপিয়ার এই ঘটনার পর বন্ধ হয়নি এই ধরনের সেলিব্রেটি নারীদের অপরাধ প্রবণতা। পাপিয়ার ঘটনার পর মডেল অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন এবং ব্যবসায়ীকে বিয়ের কথা বলে তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ ছবি তুলে তাকে ব্লাকমেইল করেন। এই অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে তিনি এখন কারাগারে আছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের মহিলা উপকমিটির সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও প্রতারণা, জালিয়াতি এবং সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তিনি রিমান্ডে রয়েছেন। এরকম অপরাধের অভিযোগে গত রাতে আরো দুইজন শোবিজের তারকাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদের মধ্যে রয়েছেন ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা এবং মরিয়ম আক্তার মৌ। এদের দুইজনই শোবিজে অল্প পরিচিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ রয়েছে এবং ব্ল্যাকমেইল করে তারা বিভিন্ন মহলে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন -এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ কারণেই এখন এই সেলিব্রেটি অপরাধীদের ব্যাপারে সর্তকতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রগুলো বলছে, যারা শোবিজে একটু পরিচিত তাদের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই কিছু কিছু মানুষ আকৃষ্ট হন এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চান। আর এটিকেই পুঁজি করে কেউ কেউ অপরাধ চক্রে জড়িয়ে পড়েন।
তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, পাপিয়া, রোমানা স্বর্ণা, হেলেনা, পিয়াসা, মৌ হলো টিপ অফ দ্যা আইসবার্গ। আরো অনেকেই এরকম আছেন যাদের কাজ হলো মানুষকে ফুসলিয়ে ফাঁদে ফেলে তাদের কাছে অর্থ আদায় করা এবং এই বিষয়গুলো এখন সমাজের বাড়ছে বলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মনে করছে।
আর এ কারণেই তথাকথিত এ সমস্ত সেলিব্রেটিদের ব্যাপারে এখন খোঁজখবর নেওয়া বেড়েছে। শোবিজের অনেক ব্যক্তি আছে যাদের বৈধ আয়ের কোন উৎস নাই কিন্তু তারা কিভাবে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন তা রহস্যময়। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসামঞ্জস্যতার প্রেক্ষাপটে উঠে আসছে তাদের অন্ধকার জীবনের কথা।
সাম্প্রতিক সময়ে যে কয়েকজন আলোচিত নারী অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিলাসবহুল জীবনের পেছনে রয়েছে অবৈধ সম্পদ এবং মানুষকে ঠকিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং করে তারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। বাংলাদেশের অপরাধ জগতে এটি একটি নতুন এবং এবং উদ্বেগের দিক বলেই মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।