অসুস্থ বৃদ্ধ বাবাকে ঘরের বাহিরে উঠানে ফেলে রেখেছিল প্রতিষ্ঠিত ছেলেরা। পরে স্থানীয়রা প্রশাসনকে জানালে খবর পেয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) রাসেল ইকবাল ঘটনাস্থলে এসে বৃদ্ধকে উদ্ধার করে এক মেয়ে দায়িত্বে বুঝিয়ে দেন।
শুক্রবার (৯ জুলাই) সকাল থেকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের মেঘনারোড এলাকার স্বপ্ন মহলে নিজ ঘরের সামনে সন্তানেরা বৃদ্ধ অসুস্থ শফিকুল ইসলাম(৯৫)কে ফেলে রাখে। হৃদয় বিদারক এঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ও সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, অসুস্থ শফিকুলের ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ে। একছেলে বিজিবিতে কর্মরত, একজন সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত, একজন প্রবাসী, অপর জন বেঁচে নেই। দীর্ঘদিন যাবত তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন।
গত ২বছর আগে তিনি সন্তানদের তার সম্পত্তি ভাগ করে দেন। লক্ষ্মীপুর পৌর ১নং ওয়ার্ডে সবারই পাকা বাড়ি রয়েছে। বড় ছেলে মৃত ফেরদৌস আলম সোহাগ তিনি কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন।
মেজো ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বিজিবিতে কর্মরত, সেজো ছেলে আলমগীর হোসেন প্রবাসী এবং ছোট শাহ আলম বিপু সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত।
ওই বৃদ্ধের নাতি ও সেজো ছেলে আলমগীর হোসেনের সন্তান লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের ছাত্র সিয়াম হোসেন জানান, দাদা এক মাস হিসেবে সকল ছেলেদের ঘরেই পালা করে থাকতো। শুক্রবার আমাদের ঘরে একমাস পূর্ন হওয়ায় চাচা শাহ আলম বিপুকে দাদাকে রাখার অনুরোধ করি।
কিন্ত তার স্ত্রী অসুস্থ এ অজুহাতে দাদাকে রাখেনি। পরে আমি অন্য চাচাদের ও ফুফুদেরকে বিষয়টি জানাই। কিন্ত কেউই দাদাকে নিতে রাজি হয়নি। পরে দাদাকে ঘরের বাহিরে উঠানে রেখে দিই।
এঘটনায় স্থানীয়রা প্রশাসনকে খবর দিলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল ঘটনাস্থলে যান এবং বিস্তারিত শুনে ছেলের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন।
ছেলেরা কেউ বাবাকে নিতে রাজি না হওয়ায় অসুস্থ শফিকুলের বড় মেয়ে সুরাইয়া তার বাবাকে নিতে ইচ্ছে প্রকাশ করেন। পরে ম্যাজিস্ট্রেট এর গাড়ি করে অসুস্থ শফিকুলকে মেয়ে সুরাইয়ার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
এ ঘটনায় আবেগে আপ্লুত হয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল বলেন, সন্তানেরা এত নিষ্ঠুর হয়; কল্পনাও করতে পারিনি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো।
বাসা অসুস্থ বলে কোন সন্তানই বাবাকে ঘরে রাখতে চাইলেন না। সন্তানরা নানা অজুহাত দেখিয়ে বাবাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন। পরে বৃদ্ধার এক মেয়ের কাছে পিতার পিতাকে দেখা শুনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়।