টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চারবার সরকার গঠন করেছে।
এই চারবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মন্ত্রী বানিয়েছেন, তৃণমূলকে সম্মানিত করেছেন, অনেককে সুযোগ দিয়েছেন। এই সুযোগ কেউ কেউ কাজে লাগিয়েছেন, কেউ কেউ কাজে লাগাতে পারেনি।
অনেকে দায়িত্ব পেয়ে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন, অনেকে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার মধ্যেও আওয়ামী লীগের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা কখনোই মন্ত্রী হতে পারেননি। চার মেয়াদে কোন সময়েই মন্ত্রী না হতে পারা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনকে নিয়ে এই প্রতিবেদন।
মাহবুবউল আলম হানিফ: মাহবুবউল আলম হানিফ প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সময় তিনি এমপি ছিলেন না। এরপর তিনি এমপি হন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু তাকে কখনো মন্ত্রী করা হয়নি।
বরং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের দিকেই থাকে বেশি ব্যস্ত রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিকল্প সাধারণ সম্পাদক মনে করা হয় মাহবুবউল আলম হানিফকে। আগামী কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অন্যতম আলোচিত নাম মাহবুবউল আলম হানিফ। কিন্তু তিনি কখনই মন্ত্রী হতে না পারাটা একটি বিস্ময় বটে।
বাহাউদ্দিন নাছিম: বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং জনপ্রিয় নেতাদের অন্যতম। গত মেয়াদে আওয়ামী লীগের টিকেটে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হন।
দলের কর্মীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় এবং আওয়ামী লীগের দুর্দিনের পরীক্ষিত নেতা হলেও বাহাউদ্দিন নাছিম কখনো মন্ত্রিত্বের স্বাদ পাননি। প্রথম মেয়াদে আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিল তখন বাহাউদ্দিন নাছিম প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কখনো তিনি মন্ত্রিত্বের স্বাদ পান নাই।
আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। গত নির্বাচনে তিনি ফরিদপুরের থেকে মনোনয়ন পাননি। সেই মনোনয়ন না পাওয়ার পুরস্কার হিসেবে তাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আব্দুর রহমান ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বিভিন্ন সময় রাজপথে আন্দোলন করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন কিন্তু মন্ত্রিত্বের স্বাদ তিনি কখনোই পাননি।
এস এম কামাল: এস এম কামাল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি কখনোই নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। কিন্তু ইলেকশন মেকার হিসেবে দলে তার পরিচিতি রয়েছে। সব নির্বাচনেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা এবং নির্বাচন পরিকল্পক হিসেবে ইতিমধ্যে আলোচিত এবং প্রশংসিত হয়েছেন। এস এম কামাল সাংগঠনিক ক্ষেত্রে যতটা গুরুত্বপূর্ণ ঠিক ততটাই উপেক্ষিত মন্ত্রিত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে। এখন পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিত্বের চেয়ারে কখনো বসতে পারেননি।
শামীম ওসমান: আওয়ামী লীগের অন্যতম আলোচিত নেতার নাম শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জ নেতা হলেও খুবই স্পষ্টবাদী এবং দলের আদর্শের প্রতি অবিচল থাকার কারণে তিনি সবসময় আলোচিত।
দলের নিজের লোকের পদস্খলনের ব্যাপারে স্পষ্ট কথা বলতে তিনি কখনো কার্পণ্য হন না। তার ত্যাগ, আদর্শ এবং দলের প্রতি আনুগত্য প্রশ্নাতীত। কিন্তু শামীম ওসমানও কখনো মন্ত্রী হন নাই। বরং শেখ হাসিনার একজন বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবেই তিনি পরিচিত।
এরকম আরো অনেক নেতাই আছেন যারা ত্যাগী, পরীক্ষিত, দুঃসময়ের সঙ্গী কিন্তু কখনো মন্ত্রী হননি। মন্ত্রী করা প্রধানমন্ত্রীর একক এখতিয়ারাধীন বিষয়। নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব পরিকল্পনা এবং বিন্যাস আছে। সেই বিন্যাসের সঙ্গে না মেলার কারণে এদের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগ নেতাই কখনো মন্ত্রিত্বের স্বাদ পাননি।
বাংলা ইনসাইডার