কিছু বাস্তবতা গল্পকেও হার মানায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন এক কঠিন জীবনসংগ্রামের মধ্যে বেড়ে ওঠার নাম যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।
তিনি খুব ছোট থাকতে হারিয়েছেন মা-বাবাকে। যেভাবে হারিয়েছেন সেটি নিছক কোন দুর্ঘটনা নয়। শৈশবে চোখের সামনে বাবা-মার রক্তাক্ত মরদেহ। কী বীভৎস! ভাবতেই শিউরে ওঠে শরীর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই বিয়োগান্তক ঘটনা মেনে নেওয়া খুব কঠিন।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট শেখ মনি তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শেখ আরজু মনিসহ বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হলেন। ১৪ অগাস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বোন-শেখ ফজলুল হক মণির মা রাত বারোটা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ছিলেন। গল্প করেছেন ভাই ও ভাই পত্নীর সাথে। একান্তে সময় দিয়েছেন নিষ্পাপ রাসেলসহ সবার সাথে।
শেখ আছিয়া বেগম কি জানতেন সেই রাতে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, ছোট ভাই শেখ নাসের, ছেলে, ছেলের বউ, ভাতিজাদের হারাবেন! মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সবাইকে হারিয়ে তিনি পাথর হয়ে গেলেন। পরবর্তীতে শেখ আছিয়া বেগমের সীমাহীন কষ্ট ও আতঙ্কের মাধ্যমে দীর্ঘ পথ চলা শুরু হয়। শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি ও শহীদ আরজু মণির দুই ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপস হৃদয়বিদারক ১৫ আগস্টের কালো রাত নিজের চোখে দেখেছেন।
ইতিহাসের জঘন্য সেই হত্যাকাণ্ড শেখ ফজলে শামস পরশের স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন তিনি-‘খুব ভোরে প্রচণ্ড ভাঙচুরের আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙে। উঠে দেখি মা নেই পাশে। বিছানায় শুধু আমরা দুই ভাই। জানালা দিয়ে ঝড়ের মতো গোলাগুলি হচ্ছে। গুলিগুলো দেয়াল ফুটো করে মেঝেতে আছড়ে পড়ছে।
সিঁড়িঘরে অনেক কান্নাকাটির আওয়াজ, হৈচৈ।আমরা দুই ভাই ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়িঘরের দিকে গিয়ে দেখি বাবা-মা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়া। মা’র পা দুটো বাবার বুকের ওপর আড়াআড়ি রাখা। দাদির শাড়ির আঁচল মাটিতে লুটোপুটি যাচ্ছে, আর দাদি পাগলের মতো প্রলাপ বকছেন; দেয়ালে কপাল ঠুকছেন।’
শৈশবে দুই ভাই শেখ পরশ এবং শেখ তাপস এমন কালো ইতিহাসের সাক্ষী হন। মা-বাবার রক্ত মাখা দেহ! মেনে নেওয়া যায়? যায় না। কিভাবে সামাল দিয়েছেন সেই ছোট্ট পরশ? তখন কি বুঝেছিলেন তিনি মা-বাবার আদর, বুকের মধ্যখানে নিয়ে পরম যত্নে কপালে চুমু একে দেওয়া তাদের দুই ভাইয়ের ভাগ্যে আর জুটবেনা। নিশ্চয় তিনি সেদিন এমন উপলব্ধি করতে পারেন নি, কারণ পাঁচ বছরের এক ছোট্ট ছেলে কি বা আর বোঝে!
এখান থেকেই ঠিক বাংলা সিনেমার মতো ছোট ভাইকে নিয়ে কঠিন জীবন যুদ্ধ শুরু শেখ পরশের। সিনেমা সে তো শুধু গল্প। কিন্তু বাস্তবতা! তা বড়ই কঠিন। তখনকার প্রেক্ষাপটে দুই ভাইয়ের বেঁচে থাকাই ছিল কঠিন। প্রতিটি দিন ছিল লড়াই-সংগ্রামের। একদিন এখানে তো আরেকদিন অন্যখানে। নিজের বাড়িতে আর কখনোই ফিরতে পারেননি!
শৈশবে যখন পরশ-তাপসের কখনো মায়ের কোলে বা কখনো বাবার হাত ধরে মেলায় যাওয়ার কথা বা কখনো বন্ধুদের সাথে দুরন্তপনা করে কাটানোর সময়, সেই সময়ে কি বীভৎস-সংগ্রামী জীবন কাটিয়েছেন তারা। কতটা ত্যাগ, কতটা দু:খ, কতটা ভয় লুকিয়ে ছিল সেই ছোট্ট মনে! আজ নিশ্চয় প্রশ্ন জাগে কিভাবে এতো কঠিন সময় পাড়ি দিয়েছেন তারা?
সময় যতই কঠিন হোক শেখ ফজলে শামস পরশ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তার পিতা শেখ ফজলুল হক মণির দূরদর্শী রাজনৈতিক চেতনা লালন করে নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ ফজলুল হক মণি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তা সকলের জানা। মাত্র ৩৫ বছর বয়সের ক্ষণজন্মা শেখ মণি ছিলেন-মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুজিব বাহিনীর অন্যতম প্রধান, দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, কবি ও ছোট গল্পকার।
১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শেখ ফজলে শামস পরশের বাবা শেখ ফজলুল হক মণি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। মণির ছোটভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমও দীর্ঘসময় চেয়ারম্যান হিসেবে যুবলীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চার মূল নীতিকে সামনে রেখে যুবলীগের মূল কাজ হচ্ছে- বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা সম্প্রসারণ, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা। পাশাপাশি যুব সমাজের ন্যায্য অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করা।
বাবার সেই চেতনাকে লালন করে শেখ ফজলে শামস পরশ সময়ের সাথে সাথে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। রাজনৈতিক চেতনা লালনের পাশাপাশি একাডেমিক জায়গায় নিজের সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি ধানমণ্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
পরে কলরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর করেন। পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার পর দেশে ফেরেন এবং দীর্ঘদিন শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সঙ্গেও জড়িত তিনি। শুধু তাই নয় বাবার মতো সংস্কৃতিমনা পরশ গান বাজনার প্রতিও বেশ সৌখিন।
যোগ্য পিতার যোগ্য উত্তরসূরি শেখ ফজলে শামস পরশ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি মানবিক যুবলীগের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। কঠিন জীবনসংগ্রামে নিজেকে প্রস্তুত করা এক নায়কের হাতে যুবলীগের নেতৃত্ব যুব সমাজে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং পিতা শেখ ফজলুল হক মণির দূরদর্শী রাজনৈতিক চেতনা বাস্তবায়নে গণমানুষের জন্য তার পথচলা আমাদের অনুপ্রাণিত করছে।
দায়িত্বগ্রহণের পর তিনি বলেন, ‘রাজনীতি কোন পেশা হতে পারেনা, আমরা হচ্ছি ভলান্টিয়ার। আমাদের কাজ মানুষের সেবা করা, যেখানেই অন্যায়, সেখানেই প্রতিবাদ করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুবলীগ হবে অগ্র সৈনিক।’
একজন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে শেখ ফজলে শামস পরশ গণমানুষের জন্য কাজ করবেন এটি সকলের প্রত্যাশা। কঠিন সংগ্রামে যার বেড়ে ওঠা তিনি নিশ্চয় জনগণের জন্য আপসহীন নেতৃত্ব। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চার মূল নীতিকে সামনে রেখে যুবলীগের মূল কাজ বাস্তবায়নে তিনি বদ্ধপরিকর।
মানবিক যুবলীগের বিভিন্ন কর্মসূচী তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রতিচ্ছবি। তিনি দক্ষ সংগঠক হিসেবে ইতিমধ্যে নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। নিশ্চয় বাংলার যুব সমাজ আপনার দিকে তাকিয়ে। দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে আপনার নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে হৃদয়ে বিশ্বাস করি। আপনার শুভ জন্মদিনে অফুরন্ত শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
লেখক: উপ তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। সাধারণ সম্পাদক একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশন, জবি।