মুনিয়ার মৃত্যু রহস্য এখন ঘুরপাক খাচ্ছে চার রহস্যময় যুবককে কেন্দ্র করে। ধারণা করা হচ্ছে যে, এই চার যুবকের পরিচয় যদি উদ্ধার করা যায় তাহলে মুনিয়ার মৃত্যু রহস্যের জট খুলবে। এই চার যুবক ২৫ এপ্রিল মুনিয়ার বাসায় গিয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন সময়।
এই চারজন কখন বেরিয়েছে সেটি রেজিস্টারে নাই এবং সিসিটিভির ফুটেজেও নাই। ধারণা করা হচ্ছে যে, তারা কোন অসৎ উদ্দেশ্যে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে গিয়েছিল।
এ ধারণা আরও পুঞ্জীভূত হয় এই কারণে যে তারা কেউই ওই ভবনের রেজিস্টারে স্বাক্ষর করেননি। স্বাক্ষর না করেই তারা বিভিন্ন ফ্ল্যাটে যাওয়ার কথা বলে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন।
এই চার যুবককে অতীতেও মুনিয়া সঙ্গে দেখা গেছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় দফায় যখন মুনিয়া কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে গুলশানের ১২০ নম্বর ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন তখন এই চার যুবক মুনিয়ার ছায়াসঙ্গী ছিলেন।
মুনিয়া যেখানে যেতেন এই চার যুবক তাকে অনুসরণ করতেন। মজার ব্যাপার হলো, এদের সঙ্গে নুসরাতের একাধিক ছবি এখন পাওয়া যাচ্ছে। নুসরাত নিজেও স্বীকার করেছেন যে এই চার যুবক তার পরিচিত ছিল।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, প্রথম দফায় যখন মুনিয়া কুমিল্লায় ফিরে যান তখন মুনিয়া রীতিমতো নুসরাতের নির্যাতনের শিকার হন। কারণ, মুনিয়াই ছিল নুসরাতের আয়-উপার্জনের একমাত্র পথ।
কাজেই সে যখন কুমিল্লায় এসে হাত গুটিয়ে বসে থাকে তখন সেটি নুসরাতের কাছে ছিল অগ্রহণযোগ্য। এ কারণেই নুসরাত বিভিন্ন চেষ্টা তদবির করে অবশেষে কুমিল্লা থেকে মুনিয়াকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
জানা গেছে যে, ঢাকায় আসার আগেই নুসরাত ১২০ নাম্বার ফ্ল্যাটের মালিকের সঙ্গে একাধিকবার টেলিফোনে কথা বলেন এবং তিনি সেখানে তার স্বামী এবং বোন নিয়ে থাকবে এই মর্মে তিনি ভাড়া নিতে আসেন।
এরপর মুনিয়াকে নিয়ে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন নুসরাত। এ সময় তার স্বামীও তার সঙ্গে ছিল। ঢাকায় এসে তারা এই ফ্ল্যাটটি নেন এবং এরপর মুনিয়ার সঙ্গে তারা থাকা শুরু করেন।
ওই ভবনের বিভিন্ন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে যে, অন্তত এক সপ্তাহ নুসরাত মুনিয়ার সঙ্গে ছিলেন। সেই সময়ে মুনিয়ার মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেন নুসরাত। বিশেষ করে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ এবং যে যোগাযোগের ব্যাপারে নুসরাতকে অন্ধকারে রাখা হতো। এসব নিয়ে নুসরাত এবং মুনিয়ার মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয় এবং মনকষাকষিও হয়।
আর এ কারণে মুনিয়া যেন তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় সেজন্য মুনিয়াকে সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করা হতো। ১২০ নম্বর বাড়ির আশেপাশের বিভিন্ন লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানা যায় যে, মুনিয়া যখনি বাইরে যেতেন তখনই পিছনে একটি মাইক্রোবাস তাকে অনুসরণ করতো।
এই মাইক্রোবাসের যে চারজন যুবক ছিল তাদেরকেই শেষে মুনিয়ার বাসায় দেখা গিয়েছিল। এরাই আবার মৃত্যুর দিন নুসরাতের সঙ্গে থানায় গিয়েছিল। অর্থাৎ এটি সহজেই অনুমান করা যায় যে, এরা নুসরাতের নিয়োজিত ছিল।
কুমিল্লার একটি সূত্র বলছে যে, যখন জমিজমা নিয়ে নুসরাতের সঙ্গে তার ভাই সবুজের বিরোধ দেখা যায় তখন নুসরাত কিছু ভাড়াটে মাস্তান ভাড়া করেছিলেন যেন তার ভাইয়ের সঙ্গে যুদ্ধে তিনি জিতেন।
আর যে সমস্ত ভাড়াটেদের তিনি ঠিক করেছিলেন তাদের মধ্যে এই চারজনও ছিলেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। যখন মামলা আদালতে গড়ায় এবং পরিস্থিতি শান্ত হয় তখন এই চারজন ভাড়াটেকে মুনিয়ার পিছনে লাগিয়ে দেন নুসরাত। প্রশ্ন হচ্ছে যে, নুসরাতের এই চার বডিগার্ডের বেতন-পারিশ্রমিক কে দিত? তারা এখন কোথায়?
জানা গেছে যে, মুনিয়া যে বিভিন্নভাবে টাকা উপার্জন করতেন সেই টাকার প্রায় পুরোটাই নুসরাতকে দিতেন এবং সেখান থেকেই এই চারজন বডিগার্ডের বেতন এবং আনুষঙ্গিক দেওয়া হতো। এছাড়াও নুসরাতের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির সম্পর্ক ছিল যাদেরকে নুসরাত মুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিতেন নুসরাত।
এই চারজন এখন নুসরাতের নির্দেশেই আত্মগোপনে আছেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনের আওতায় আনলেই মুনিয়ার মৃত্যুর রহস্য উন্মোচিত হবে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন।
বাংলা ইনসাইডার