বাংলাদেশের শিক্ষাখাত এখন হুমকির মুখে। আজ আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্তের তালিকায়ও নেই বাংলাদেশ।
তবুও টানা প্রায় দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে শিক্ষাখাতে বড় ধরণের বিপর্যয়ের আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যে পাঁচটি কারণে মূলত শিক্ষাখাত ধ্বংস হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে সেগুলো হল:
১. অনলাইন ক্লাসের কার্যকারিতা নেই: করোনাকালে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনলাইন কার্যক্রম চালু হলেও সেটি তেমন কার্যকর নয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউই এই প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত নয়।
অনলাইন ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের কাছেই গুরুত্বহীন হিসেব পরিলক্ষিত হয়। ক্লাসে অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীর অন্যকাজে ব্যস্ত থাকে। ফলে এই অনলাইন ক্লাসের কার্যকারিতা নেই বললেই চলে।
আবার, দেশের সিংহভাগ শিক্ষার্থী বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা থাকে তাদের অনেকের কাছেই এখনও পৌঁছেনি প্রযুক্তির সুবিধাও।
২. ইন্টারনেটে আসক্তি: শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে রাজধানী সহ সারাদেশের জেলা শহরে যারা বাস করে এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করছে প্রতিনিয়ত তারা অনলাইন ক্লাসের কথা বলে ইন্টারনেট ব্যবহারে আসক্ত হয়ে পড়েছে।
পড়ালেখা বাদ দিয়ে তারা সারাদিনই ফেসবুক, টিকটক, লাইকি, পাবজি, ফ্রি-ফায়ার ইত্যাদি মোবাইল এপসে আসক্ত হচ্ছে এবং সেই সাথে অপরাধের পথেই ধাবিত হচ্ছে। অনেকে আবারও এই আসক্তির চাহিদা পূরণ করতে না পারায় করছে আত্মহত্যাও।
৩. অবকাঠামোগত সঙ্কট: দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার ফলে সেগুলোর কোন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে না। ফলে সেখানে এক ধরণের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আবার অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধও হয়ে যাচ্ছে।
কারণ, দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার ফলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লোকসান হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ বিলুপ্ত করে দিচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
৪. বেসরকারি শিক্ষকদের দুরবস্থা: বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের অবস্থা খুবই খারাপ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা ঠিকমত বেতন পাচ্ছেন না। ফলে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। উপায়ন্তর না দেখে অনেকেই বেঁছে নিচ্ছে ভিন্ন কর্মসংস্থান।
৫. চাকরি ক্ষেত্রে সঙ্কট: করোনাকালে চাকরির পরীক্ষা এবং নিয়োগ, সবকিছুই থমকে গেছে। হাতেগোনা কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষা হলেও বিসিএস সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক পরীক্ষাই এখন হচ্ছে না।
ফলে চাকরি প্রত্যাশিদের মাঝে দেখা দিচ্ছে চরম হতাশা, ভবিষ্যৎ হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। কর্মক্ষেত্রে নতুনদের যে একটি প্রবাহ থাকে সেটিও থমকে গেছে।
এই সবকিছু মিলিয়েই দেশের শিক্ষাখাত চরম বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। শিক্ষাখাতের চরম বিপর্যয় দেখে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছে যে, শিক্ষাখাত কি ধ্বংস হয়ে যাবে?
বাংলা ইনসাইডার