বেগম জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে আলোচিত যে বিষয়গুলো তার মধ্যে অন্যতম হল বেগম জিয়ার সম্পদ কত এবং কোথায় রয়েছে।
এ নিয়ে বিএনপি`র মধ্যে, বেগম খালেদা জিয়া পরিবারের মধ্যে, বিভিন্ন মহলে নানামুখী আলোচনা রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদের পরিমাণ কত এবং সম্পদগুলো কোথায় আছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কারোও ধারণা নেই।
কারণ বেগম জিয়া অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গেই নিজের সম্পদগুলোকে সংরক্ষণ করতেন। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার মূল সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। তিনি সৌদি আরব অবস্থান করছেন।
একাধিক সূত্র সূত্র বলছে যে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার এবং মালয়েশিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার বিপুল সম্পদ রয়েছে।
এই সম্পদের বিবরণ সৌদি আরবের একটি পত্রিকায় কয়েকবছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সে তথ্য অস্বীকার করা হয়েছিল।
একজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদগুলো কোনটাই তার নামই নেই। বেনামে সব সম্পত্তি রয়েছে। আর এই কারণেই তার সম্পত্তির সঠিক হিসেব কখনোই বের করা সম্ভব নয়।
একমাত্র বেগম খালেদা জিয়া, মোসাদ্দেক আলী ফালু ছাড়া কেউই তার সম্পত্তির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জানে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে সম্পত্তি রয়েছে তার মূল্য বাংলাদেশী টাকায় ১ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।
বেগম খালেদা জিয়ার সৌদি আরবের একটি শপিং মল, অন্তত তিনটি ফ্ল্যাট, অন্তত তিনটি বাড়ি এবং একাধিক ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যে সমস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে সৌদি আরবের লোকজন।
কিন্তু সেখানে তার বিনিয়োগ আছে। এছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বেগম খালেদা জিয়ার অন্তত পাঁচটি দোকান, দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং একাধিক ফ্ল্যাট আছে বলে জানা গেছে।
বেগম খালেদা জিয়ার কুয়েতে দুটি ব্যবসার খবর জানা গেছে। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় বেনামে তার বিপুল সম্পদ রয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোসাদ্দেক আলী ফালু তার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এই সময় বেগম খালেদা জিয়া যে সমস্ত অবৈধ উপার্জন করতেন তা বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতো এবং বিদেশে এই সমস্ত টাকাগুলো বিনিয়োগ করতে মোসাদ্দেক আলী ফালু।
মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে সৌদি আরবের শুরু থেকে ভালো সম্পর্ক ছিল এবং এই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যবসায়ীদেরকে তিনি টাকাগুলো বিনিয়োগ করেন, যেখান থেকে নিয়মিত লভ্যাংশ পান।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে ফালু বেগম খালেদা জিয়ার ছেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা দিয়ে বিভিন্ন দুর্নীতির শুরু করেন। আর এই দুর্নীতির অংশ হিসেবেই বেগম জিয়ার নির্দেশে বিপুল সম্পদ ফালুর কাছে যায়।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ই আসলে বেগম খালেদা জিয়ার বিপুল বিত্তের বিকাশ ঘটে। এই সময় বেগম খালেদা জিয়ার তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে ফালুর ব্যাবসায়ীক পার্টনার করেন।
এখন দেখা যায় যে, ফালুর যতগুলো ব্যবসা রয়েছে সেই সবগুলো ব্যবসাতেই প্রায়ই আরাফাত রহমান কোকো পার্টনার ছিলেন। এখন যেহেতু আরাফাত রহমান কোকো আর নেই, তাই বেগম খালেদা জিয়ার সম্পদ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
এই সম্পদের মালিক কে হবে তা নিয়ে চলছে নানা রকম টানাপোড়েন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান মনে করছেন, এই সম্পদের মালিক কে হবে সেটি বড় প্রশ্ন নয়, বড় প্রশ্ন হল যে তার সম্পদের পরিমাণ কত।
কারণ এই সম্পত্তিগুলো যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক এবং স্বীকৃত সম্পদ নয়, তাই বেগম খালেদা জিয়ার অবর্তমানে এই সম্পদের রক্ষকরা যদি ভক্ষক হয়ে যায়, তাহলে কারোরই কিছু করার থাকবে না।
বাংলা ইনসাইডার