22 C
Dhaka
Saturday, November 23, 2024

বিষ খাওয়াচ্ছে নেসলে

বিডিনিউজ ডেস্ক

চাকুরির খবর

শিশুখাদ্য, দুগ্ধজাত পণ্য, চকলেট, কফি, হিমায়িত খাবার, কনফেকশনারি সামগ্রীর নামে বিষ খাওয়াচ্ছে নেসলে কোম্পানি। সুইজারল্যান্ডের বহুজাতিক এই খাদ্য নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানের ফাঁস হওয়া এক গোপন নথিতে বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে নেসলের ব্যবসা শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রতিষ্ঠিত  কারখানায় তৈরি হয় মাঞ্চ ও কিটক্যাট চকলেট, সেরেলাক, নিডো, কোকো ক্রাঞ্চ, কর্ন ফ্ল্যাক্স, নান প্রো, ল্যাকটোজেন, ম্যাগি চিকেন স্বাদের নুডলস, নেসক্যাফে কফি ইত্যাদি ভোগ্যপণ্য।

নেসক্যাফে কফি মোড়কজাতকরণের কাজও চলে এই কারখানায়। এছাড়া নেসলে এভরিডে (চা পাতা), নেসলে কফি মেট ক্রিমার, নেসলে আইসক্রিমও তারা বাজারে ছেড়েছে। আছে প্রসাধনীও।

নুডলসের বাজারে শীর্ষ ব্র্যান্ড ‘ম্যাগি’। ল্যাব টেস্টে এই পণ্যে ১৭ দশমিক ২ পিপিএম সিসা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) পাওয়ার পর ভারতের ক্রেতা সুরক্ষা দফতর ওই  উৎপাদক নেসলে-কে ২০১৫ সালে ৬৪০ কোটি রুপি জরিমানা করে।

বাজার থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয় পণ্যটি। এরপর জবরদস্তিমূলক শিশুশ্রমের মাধ্যমে আইভরিকোস্ট থেকে কোকোয়া উৎপাদন করানোর দায়ে নেসলে সাউথ আফ্রিকাকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

নেসলে ১৯৯৬ সালে তাদের ব্লু ক্রস ব্র্যান্ডের কনডেন্সড মিল্ক উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। নেসলে পিওর লাইফ বোতলজাত পানির নমুনা পরীক্ষায় ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে লিটারপ্রতি ৯৩০টি।  

নেসলে একটি গোপন নথিতে স্বীকার করেছে, তাদের উৎপাদিত ৬০ শতাংশের বেশি খাদ্য ও পানীয় ‘সুস্বাস্থ্যের স্বীকৃত সংজ্ঞা’র মানদণ্ড পূরণ করে না।

এছাড়া যতই মান উন্নয়নের চেষ্টা করা হোক না কেন- কিছু কিছু পণ্য কখনোই স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে না। অভ্যন্তরীণ গোপন এই নথি কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে উপস্থাপন করা হয়।  

নথিতে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার হেলথ স্টার রেটিং সিস্টেম অনুযায়ী পোষ্যপ্রাণির এবং বিশেষায়িত পুষ্টিকর মেডিক্যাল খাবার ছাড়া নেসলের অন্যান্য খাদ্য ও পানীয় সামগ্রীর মাত্র ৩৭ শতাংশ পণ্য ৩ দশমিক ৫ এর ওপরে রেটিং পেয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার এই রেটিং সিস্টেমে স্বাস্থ্যকর খাবারের মানদণ্ড নির্ধারণে ৫ এর মধ্যে স্কোর দেওয়া হয়। বিদেশি গণমাধ্যমগুলো এ খবর প্রচার করেছে।

অ্যাকসেস টু নিউট্রিশন ফাউন্ডেশনের মতো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও পানীয় গবেষণা কাজে অস্ট্রেলিয়ার এই রেটিং ব্যবহার করে।

খাদ্য ও পানীয় পোর্টফোলিওতে নেসলের প্রায় ৭০ শতাংশ খাদ্যপণ্য ওই প্রান্তিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে নথিতে বলা হয়েছে। খাঁটি কফি ছাড়া ৯৬ শতাংশ পানীয় এবং ৯৯ শতাংশ মিষ্টিজাতীয় খাবার এবং আইসক্রিম এই মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি।  

কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীদের দেওয়া বক্তব্যে বলা হয়েছে, তাদের পণ্যগুলোর মানের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে তাদের পোর্টফোলিও এখনও কোম্পানির বাইরের স্বাস্থ্যকর খাবারের সংজ্ঞার মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। এর ফলে এসব খাদ্য ও পানীয় এর ওপর বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।  

নেসলে বলেছে, তাদের প্রধান পুষ্টি ও স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে কোম্পানির একটি প্রকল্পে বৃহৎ পরিসরে কার্যক্রম চলছে। এই প্রকল্প শেষে নতুন করে পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং পানীয় এর মানদণ্ড হালনাগাদ করা হবে।

মানুষের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে পণ্য পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং সুষম ডায়েটে সহায়তা করছে কি না- তা নিশ্চিত করার জন্য সম্পূর্ণ পোর্টফোলিওটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।  

সুইস এই কোম্পানি জানিয়েছে, গত দুই দশকে তাদের পণ্যগুলোতে চিনি এবং সোডিয়াম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। শুধুমাত্র গত সাত বছরেই চিনি এবং সোডিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে আনার হার ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ।  

নেসলে বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর নকীব খানের দাবি, নেসলে ৭১টি কাঁচামালের মধ্যে ২৪টি বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করে। বাকিটা আমদানি করা হয়।

কাঁচামাল হিসেবে চাল সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় প্রথমে মাটি পরীক্ষা করে তা আর্সেনিকমুক্ত কি না দেখা হয়। এরপর কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত প্রক্রিয়ায় চাল উৎপাদন করা হয়। সেই চাল আবার কারখানায় পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষাগার বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃত।

২০১৬ সালে নেসলে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেখতে এসেছিলেন নেসলে ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুরেশ নারায়ণন।

ওই সময় তিনি জানান, বাংলাদেশে বছরে তাদের পণ্য বিক্রির পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার বেশি। ম্যাগি নুডলস বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। বছরে ১৮ কোটি নুডলস কেক তৈরি হয়।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, খাদ্যে ভেজাল মানুষ খুন করার চেয়েও ভয়াবহ।

কারণ খাদ্যে ভেজাল ও হরেক রকম ক্যামিকেল মিশ্রণ স্লো-পয়জন। খাদ্যে ভেজালের কারণে মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে পুরো জীবন মৃত্যুর যন্ত্রণা ভোগ করে মরবে।

বর্তমানে ভোগ্যপণ্যে ভেজালের উৎসব চলছে। খাদ্যে ভেজাল রোধ করা না গেলে সুস্থ, মেধাবী কর্মশক্তি পাওয়া যাবে না।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

- Advertisement -

আরও সাম্প্রতিক খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ খবর