জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন চলছে। করোনা মহামারীর কারণে এবার বাজেট অধিবেশন সংক্ষিপ্ত আকারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে যে, বারোটি কর্মদিবসের মধ্যে এই বাজেটের আলোচনা শেষ করে বাজেট পাস করা হবে।
আগামী ২৯ জুন বাজেট পাস করার কথা এবং ৩০ জুন অর্থবিল পাস করার কথা। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বাজেটের পর সরকারের বড় ধরনের পরিবর্তন হতে পারে।
কি ধরনের পরিবর্তন হতে পারে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ভাবে কেউ কিছু বলেনি। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, দীর্ঘদিন ধরে মন্ত্রিসভায় রদবদলের যে গুঞ্জন চলছিল বাজেটের পরে সেই গুঞ্জন সত্যিতে পরিণত হতে পারে। মন্ত্রিসভায় কিছু বড় ধরনের রদবদল হতে পারে।
তবে বিভিন্ন সূত্র এরকম সম্ভাবনার কথা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন যে, রদবদলের বিষয়টি সবসময় গুঞ্জন। আসলে বড় ধরনের রদবদল আপাতত হবেনা।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিসভার রদবদলের একমাত্র এবং পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর উপর। সংবিধানে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী তার অভিপ্রায় অনুযায়ী যতজন ইচ্ছা ততজন মন্ত্রীকে নিয়োগ করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী একজন মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিবেন বা নতুন মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
সেই বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর উপরেই নির্ভর করে মন্ত্রিসভা তিনি কখন রদবদল করবেন বা আদৌ করবেন কিনা। বর্তমান মন্ত্রিসভা মূলত গঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। এরপর থেকে প্রায় আড়াই বছর মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের পরিবর্তন হয়নি।
শুধুমাত্র একবার গৃহায়ণ ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে সরিয়ে অন্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর তাঁর জায়গায় অনেকদিন পর নতুন একজন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, সরকারের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেয়া যাওয়া, সামনে নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতি, নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন, দুর্নীতি-অনিয়ম ইত্যাদি বন্ধ করার জন্য সরকার হয়তো মন্ত্রিসভাকে গতিশীল করার উদ্যোগ নেবে। এরকম আলাপ-আলোচনা আওয়ামী লীগের মুক্তি শোনা যাচ্ছে।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অন্তত দু`জন প্রভাবশালী মন্ত্রী বলেছেন যে, মন্ত্রিসভায় রদবদলের বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন, চিন্তাভাবনা করছেন।
কিন্তু এই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা সেটি বলতে পারেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। কিছু কিছু মন্ত্রণালয় নিয়ে জনগণের মধ্যে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে এবং ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের পরিবর্তন জন-আকাঙ্ক্ষা হিসেবে প্রতিফলিত হয়েছে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আদৌ সেই সমস্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদেরকে পরিবর্তন করবেন কিনা সেটি নিশ্চিত নয়। তবে কয়েকজন মন্ত্রীর দপ্তর বদল এবং কয়েকজন মন্ত্রীর পদোন্নতির বিষয়টি বিভিন্নভাবে আলোচিত হচ্ছে।
তাছাড়া কিছু কিছু মন্ত্রণালয়কে আরো গতিশীল করার কথা ভাবা হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারের ভেতর রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকে গুরুত্ব প্রদান করার একটা চিন্তা সরকারের মধ্যে আছে।
কারণ আগামী ৭ই জুন সরকারের আড়াই বছর পূর্ণ হচ্ছে। এরপর যে সরকার হবে সেই সরকারকে জনগণের সন্তুষ্টি বিধান করতে হবে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে।
আর এ কারণেই মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের আসার একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে শেষপর্যন্ত মন্ত্রিসভা রদবদল হবে কিনা সেটা দেখার বিষয়।
উল্লেখ্য যে, টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদল ঘটায়নি এবং মন্ত্রিসভায় ব্যর্থতার অভিযোগ থাকার পরও গুরুতর অভিযোগ ছাড়া কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সেই বিবেচনায় আদৌ সরকার শেষপর্যন্ত বড় ধরনের রদবদল করবেন কিনা সেটিও কি বড় প্রশ্ন।
বাংলা ইনসাইডার