একসময় আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন তারা। বাংলাদেশকে তাদের বাংলাদেশের নানা মেরুকরণে ছিলেন কিন্তু এখন তারা নিখোঁজ। কোন ঘটনা বা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই তারা নেই।
এদের কেউ কেউ আছেন বিদেশে কিন্তু যারা দেশে আছেন তারাও ক্রমশ ভূমিকাহীন হয়ে পড়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, এই নিখোঁজ ব্যক্তির আসলে সুযোগসন্ধানী।
সময় এলেই তারা সক্রিয় হন, অন্য সময় এরা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এরকম কয়েকজনকে নিয়েই এই প্রতিবেদন।
১. বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ: ৯০ দশকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। সেই সময় তিনি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে পছন্দ করেন।
পুনরায় দায়িত্বে ফিরে আসার শর্তে তিনি রাজী হন এবং তাঁর নেতৃত্বে ৯১ এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের পর তিনি আবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হন এবং অবসরে যান।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুরোধ করে রাষ্ট্রপতি পদ দেন।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তিনি এক অন্যরকম অবয়বে অভিভূত হন। সরকারকে বেকায়দায় ফেলা, সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে তিনি বিরোধী দলের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করেন।
অনেকেই মনে করেন যে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ ২০০১ এর নির্বাচন ষড়যন্ত্রের অন্যতম কুশীলব ছিলেন। ঐ নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হলে তিনি অবসরে যান। এখন গুলশানের বাসায় নিভৃতে জীবনযাপন করেন।
একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও জাতির বিভিন্ন সঙ্কটে, বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি একেবারেই নীরব থাকেন। তার নীরবতা নিয়ে অনেকে অনেক প্রশ্ন করলেও এখন অনেকেই তাকে মনেও রাখেননি।
২. ড. মুহাম্মদ ইউনুস: ড. মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র নোবেলজয়ী ব্যক্তি। গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। অন্যান্য শান্তিতে নোবেলজয়ীরা যেমন তার দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে ভূমিকা রাখেন, জাতির বিবেক হন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস হলো তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
করোনা সংক্রমণ থেকে শুরু করে টিকার অপ্রতুলতা কিংবা রোজিনার ইস্যু, কোন কিছুতেই তিনি নেই। দেশের পত্রপত্রিকায় তাঁর সাক্ষাৎকারও পাওয়া প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। নিজের সামাজিক ব্যবসা নিয়ে তিনি ব্যস্ত সময় কাটান, আয়-উপার্জন করেন। দেশের জন্য তিনি একজন নিখোঁজ ব্যক্তি।
৩. ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ: ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেছেন এবং ওয়ান-ইলেভেনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০৮ এর নির্বাচন শেষে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। এখন সেখানেই নিভৃতে আছেন। একজন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান, অর্থনীতিবিদ এবং সুশীল সমাজের অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তি হওয়ার পরও বাংলাদেশের কোন ব্যাপারেই তাকে মুখ খুলোতে দেখা যায় না।
জাতির সঙ্কট-সম্ভাবনা নিয়ে তিনি কখনও ইতিবাচক-নেতিবাচক কোন মন্তব্য করেন না। বাংলাদেশে তিনি একজন নিখোঁজ ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত।
৪. জেনারেল মইন ইউ আহমেদ: জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ২০০৭-৮ সালে সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি ছিলেন। সেনাপ্রধান হিসবে তিনি বিএনপি-জামাত জোট কর্তৃক মনোনীত হওয়ার পর ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে বাধা দেন এবং তার সমর্থনে একটি সেনা সমর্থিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি সেনাপ্রধান হিসেবে তার দায়িত্ব চালিয়ে নেন। অবসরের পরে তিনি কিছুদিন দেশে ছিলেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেনা।
সেখানে তার ক্যান্সার ধরা পরলে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন। প্রথমদিকে কিছু কথাবার্তা বললেও এখন একেবারে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন। মূলত নিজের গণ্ডির বাইরে কারো সাথেই তিনি মিশছেন না।
৫. ড. কামাল হোসেন: ড. কামাল হোসেন কদিন আগেও সরব ছিলেন। বিশেষ করে আওয়ামী বিরোধী রাজনীতির মাঠে তিনি একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর আস্তে আস্তে তিনি দৃশ্যপট থেকে অপসারিত হন। গণফোরামের ভাঙ্গন এবং তার নানা রকম সমালোচনার কারণে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বিবৃতি দিলেও এখন তিনি এক রকম নিখোঁজ।
বাংলা ইনসাইডার