স্বাস্থ্য সেবা সচিবের অফিসকক্ষে আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে।
কয়েকদিন কারান্তরীণ থাকার পর পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে জামিনে তিনি মুক্ত হয়েছেন। মুক্ত হওয়ার পর এখন ইস্যুটি যেন হারিয়ে গেছে।
শুধুমাত্র প্রথম আলোয় প্রতিদিন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিভিন্ন রকম সাক্ষাৎকার ভেতরের পাতায় প্রকাশিত হচ্ছে, এছাড়া রোজিনা ইস্যুতে আর কোন কিছু নেই।
এই ঘটনা আসলে কি হয়েছিল, কার কতটুকু দায়-দায়িত্ব সেই নিয়ে যে সমস্ত ভিন্ন ভিন্ন তদন্ত কমিটিগুলো হয়েছিল সেই তদন্ত কমিটিগুলোর কোন কাজেরও অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়।
রোজিনার এই ঘটনার পর পুলিশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে মামলা দায়ের করেছিল। সেই মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু ডিবি মামলা তদন্ত কতদূর কি করেছে বা তদন্তের কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে সে নিয়ে কারোরই তেমন কোন আগ্রহ নেই। বরং বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, মামলাটি বাক্সবন্দী অবস্থায় আছে।
রোজিনার ঘটনার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই তদন্ত কমিটির মূল বিষয় ছিল যে রোজিনা আসলে সেখানে কি করেছিলেন, তিনি কি গোপন ফাইল নিয়েছিলেন কিনা ইত্যাদি বিষয়ে তদন্ত করা।
একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়ে প্রথম থেকেই সাংবাদিক সমাজসহ বিভিন্ন মহলের আপত্তি ছিল। কিন্তু সেই তদন্ত কমিটিরও কাজের অগ্রগতি কি হলো বা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কতটুকু এগুলো সেটি নিয়ে কোনোরকম বক্তব্য পাওয়া যায়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এবং সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে নিয়ে তেমন কারো কোন আগ্রহ দেখা যায়না।
রোজিনার ঘটনার পরে সারাদেশের সাংবাদিক সমাজই ক্ষুব্ধ হয়েছিল, তারা বিভিন্ন রকম কর্মসূচি দিয়েছিল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলন বর্জন করেছিল। রোজিনার জামিনের পর এই সমস্ত কর্মসূচিগুলো থেমে গেছে।
এখন আর কোন কর্মসূচির মধ্যেই রোজিনা নেই। রোজিনা ইস্যুটি নিয়ে সারাদেশে যে তোলপাড় শুরু হয়েছিল সেই তোলপাড় এখন অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে, সবাই যার যার মতো কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যু তৈরি হয়। ইস্যুগুলো নিয়ে তপ্ত হয়। কিন্তু তারপর হঠাৎ করেই ইস্যুগুলো মিলিয়ে যায়। রোজিনার ইস্যুটিও তেমন মিলিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু সকলেই মনে করেন যে সুষ্ঠু সাংবাদিকতার স্বার্থে, তথ্য অধিকারের স্বার্থে এবং কার কতটুকু সীমারেখায় আছে সেটি সুনির্দিষ্টকরণের স্বার্থে রোজিনার বিষয়টি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।
এই ঘটনায় রোজিনার ভূমিকা কি ছিল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভূমিকা কি ছিল ইত্যাদি নিরূপিত হওয়া প্রয়োজন যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
আমরা দেখি যে রোজিনা ইস্যু নিয়ে শুরুতেই প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ যে তোলপাড় করেছিল এমনকি তারা যারা রোজিনাকে হেনস্থা করেছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিয়েছিল সেই ইস্যু থেকে তারা সরে এসেছে।
তাহলে কি রোজিনা ইস্যুতে সরকারের সাথে প্রথম আলোর গোপন সমঝোতা হয়েছে? এই ইস্যু নিয়ে আর কেউ কিছু করবে না এমন শর্তে ইস্যুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে?
সেটি যদি করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে সাংবাদিকতার জন্য নয়, প্রশাসনের জবাবদিহিতার জন্য এটি একটি খারাপ নজির হয়ে থাকবে। আর তাই আমরা মনে করি যে, রোজিনার ঘটনার যে তদন্তগুলো হয়েছে সেই তদন্তগুলো জনসম্মুখে প্রকাশিত হওয়া উচিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোড়াছুড়ি নয়, সত্যিকারে তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করা উচিত কার দায় কতটুকু।
বাংলা ইনসাইডার