মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পশ্চিম শিমুলিয়ায় সম্প্রতি উদ্বোধন হয়েছে কাঁচ, স্টিল ও কংক্রিটের বিশাল আকৃতির ইলিশের নকশায় নির্মিত রেস্টুরেন্ট প্রজেক্ট ‘হিলশা’।
অনিন্দ্য সুন্দর নকশার এই রেস্টুরেন্টে উদ্বোধনের পর থেকেই ভিড় উপচে পড়ছে। কর্পোরেট প্লেটে ইলিশের হিলশা হয়ে উঠার পরই বেশ চড়া দাম দিতে হচ্ছে। সঙ্গে আছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ।
পানিখোলা ইলিশ, ভাপা ইলিশ, সর্ষে ইলিশ, ইলিশ ভাজা, ইলিশের ডিম ভাজি, ডিম ভর্তা, ল্যাজ ভর্তাসহ ইলিশ মাছেরই প্রায় ২৫ রকমের রেসিপি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে রেস্টুরেন্ট প্রজেক্ট হিলশা।
এ ছাড়াও থাই, চীনা ও ভারতীয় খাবারসহ স্টেক ও বিভিন্ন ড্রিংকস পাওয়া যাবে। এখানে স্বচ্ছ ফ্রিজারে থরে থরে ইলিশ সাজানো থাকে। সেখান থেকে আস্ত ইলিশ কেনা যাবে। অথবা চারশ’ টাকায় দুই পিস নেওয়া যাবে। প্রতিদিন ইলিশের দাম নির্ধারণ করা হয়।
সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল আকৃতির এই রেস্টুরেন্টে ৩০০ আসন রয়েছে। রয়েছে কার পার্কিং এলাকা। বাচ্চাদের জন্য খেলার স্প্যাস।
সকলে সুন্দর পরিবেশের প্রশংসা করলেও খাবারের চড়া দামের ব্যাপারে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবুও খাওয়ার জন্য আসন পেতে কখনও কখনও অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসানোর পর থেকেই সেতু এলাকা এবং রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে প্রচুর পর্যটকেরা আসছেন।
এতদিন তারা ঘাট এলাকার সাধারণ মানের হোটেলে ইলিশের বিভিন্ন রেসিপির স্বাদ নিয়েছেন। তবে এবার অনেকে ঢুঁ মারছেন নব্য উদ্বোধন করা প্রজেক্ট হিলশাতে।
উদ্বোধনের পরেই এত ভিড় পড়বে তা রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষও অনুমান করতে পারেনি। তাই সেবা নিয়ে বেশিরভাগ গ্রাহকদেরই অভিযোগ আছে।
রেস্টুরেন্টে পরিবার নিয়ে খেতে আসা মাকসুদুল হক রুমি বলেন, ‘পরিবেশটা অসাধারণ, কিন্তু সেবা ভালো না। আমি অভিযোগ করায় ওরা অনুরোধ করে ওদেরকে একটু সময় দিতে কারণ; মাত্র দু’দিন আগে চালু হয়েছে।
সফটওয়্যার এখনও আসেনি এবং শুরুতেই এতটা ভিড় হবে ওরা আশা করেনি। তবে রেস্টুরেন্টের লোকজনদের প্রফেশনাল মনে হয়েছে। আশাকরি কিছু দিনের মধ্যে সব সমস্যা দূর হবে।’
খাবারের স্বাদ ভালো ছিলো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দাম ঢাকার আর দশটি পশ রেস্তোরাঁর মতোই। সাধারণ হোটেলে যা ২০০ টাকা সেটা ওরা রাখে ৩০০ টাকা।’
মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ীর সরকারি বিটি কলেজের শিক্ষক মেহেদী হাসান বন্ধুদের নিয়ে খেতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ভ্যাট ও সার্ভিস চার্জসহ ২৫ শতাংশ খাবারের বিলের সঙ্গে যুক্ত হয়।
এমনিতেও ইলিশের দামটা বেশি ধরেছে। পদ্মা সেতুর কারণে এই এলাকায় পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছে। অভিজাত শ্রেণীর গ্রাহকেরা এই রেস্টুরেন্টে আসবে।’
মুন্সীগঞ্জ নিবাসী ফারহানা হক রিয়া বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে নতুন এই রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছিলাম। কিন্তু ভিড়ের কারণে না খেয়েই ফিরে যাচ্ছি। সুন্দর একটা রেস্টুরেন্ট করেছে। ভিড় কমলে এমন পরিবেশে বসে খেতে ভালো লাগবে।’
২১৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ইলিশ মাছের আকৃতির এই রেস্টুরেন্টটি দেড় একর জমির উপর নির্মিত। কর্তৃপক্ষের দাবি, ইলিশের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এই রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে। সবসময়ই এখানে ইলিশের ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন করা হবে।
এদিকে ২৫ শতাংশ ভ্যাট ও সার্ভিস চার্জের ব্যাপারে রেস্টুরেন্টের সহকারী ব্যবস্থাপক নিশাত জানান, ‘ভ্যাট সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া।
সেটা কমানোর এখতিয়ার আমাদের নেই। আর আমরাতো এসি বা চেয়ার টেবিলের দাম নিচ্ছি না। সার্ভিস চার্জের ব্যাপারে কেউ অপারগতা দেখালে আমরা তাদের যথেষ্ট ছাড় দিচ্ছি।’
এই রেস্টুরেন্টের কারণে এই এলাকায় ৮০ শতাংশ পর্যটকের বৃদ্ধি হবে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মুন্সীগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদ জানান, সরকারের নির্ধারণ করা ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে একই পণ্যের উপর যেনও দুইবার ভ্যাট আরোপিত না হয়। আর ভোক্তা অধিকার আইনে সার্ভিস চার্জের ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু নেই। যার কারণে অনেক অভিজাত রেস্টুরেন্ট সার্ভিস চার্জ আদায় করে।
বাংলা ট্রিবিউন