25 C
Dhaka
Friday, November 22, 2024

বাংলাদেশ জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

বিডিনিউজ ডেস্ক

চাকুরির খবর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসে’র মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহযোগিতায় বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত রয়েছে।

‘আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত। এটা জাতিসংঘকে আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই,’ প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের এই দিনে বিশ্বের সকল শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা গর্বের সঙ্গে স্মরণ করে এ কথা বলেন। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (শনিবার) অপরাহ্নে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসে’র মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর তরুণ সদস্যরা ২১ শতকের বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। আগামীতেও যারা আসবে, তাদেরকে আমরা সেভাবেই তৈরি করতে চাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, “২০২১ সালের আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘দি রোড টু এ লাস্টিং পিস: লেভারেজিং দ্যা পাওয়ার অব ইয়ুথ ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি’কে সামনে রেখে আমরা তরুণ এবং যুবশক্তিকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম নিয়ামক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

কারণ, আমাদের তরুণ সমাজ তারাও যেন এটা শিক্ষা গ্রহণ করে যে শান্তি একমাত্র উন্নয়ন ও নিরাপত্তার পথ। শান্তিই মানুষের কল্যাণের পথ এবং সেই পথে যেন সকলে যেতে পারে এবং সেভাবেই যেন নিজেরা তৈরি হয়।”

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত ১২২টি দেশের ৮০ হাজার ১৮৪ জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে ৬ হাজার ৭৪২ জন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী রয়েছেন।

এই সংখ্যা বিশ্বে নিয়োজিত মোট শান্তিরক্ষীর ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এছাড়াও, বর্তমানে বাংলাদেশের ২৮৪ জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন।

বিশেষ করে আমার নারী পাইলটদের নিয়ে আমি খুব গর্ববোধ করি। কারণ, আগে আমাদের সেনা-নৌ ও বিমানবাহিনীতে নারীদের কোনো স্থান ছিল না।

পুলিশ বাহিনীতে অদম্য জাতির পিতাই নারী অফিসার নিয়োগ করে গিয়েছিলেন। তবে, সব জায়গাতেই এখন নারীদের একটা ভালো সুযোগ রয়েছে এবং তারা সাফল্য দেখাচ্ছে। কাজেই, আমি আমাদের মেয়েদেরকেও অভিনন্দন জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৪০টি দেশে ৫৫টি ইউএন মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ৮টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত আছেন।

এছাড়া দক্ষিণ সুদানে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে মেজর জেনারেল পদবীর কর্মকর্তা এবং কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও দক্ষিণ সুদানে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবীর কর্মকর্তা নিযুক্ত রয়েছেন। তাদের দক্ষতার কারণেই তারা এই পদ পেয়েছেন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। মিয়া সেপ্পো অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তনিও গুতেরেজের একটি বার্তাও পড়ে শোনান।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিক এবং লেবাননে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী কন্টিনজেন্টের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মত বিনিময় করেন এবং দেশের কেবল প্রধানমন্ত্রী নয়, জাতির পিতার কন্যা হিসেবে তাদের সবসময় সবরকম সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রধান করেন।

অনুষ্ঠানে তিনি জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে একটি সুভ্যেনির এবং এবং ইউএন পিস কিপার্স জার্নালের একটি সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগকারী বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠানের শুরুতে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে ‘বাংলাদেশ ইন গ্লোবাল পিস’ শীর্ষক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয়।

গত এক বছরে বিশ্ব শান্তি স্থাপনে শহীদ এবং আহত সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন পুরস্কার বিতরণ করে অনুষ্ঠানে তাদের সম্মানিত করেন।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া গণভবন প্রান্তে এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী প্রধান, পুলিশের আইজিপিসহ উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং সাবেক সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত দেশি ও বিদেশি অতিথিবৃন্দ সেনাকুঞ্জে উপস্থিত ছিলেন।

কোভিড-১৯ মানুষকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন, ‘আমাদের যারা শান্তিরক্ষী রয়েছেন, সবাইকে আমি বলব, এই সময় খুব শান্ত ও ধীর-স্থিরভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

কারণ, সব দেশেই একটা অসহিষ্ণুতা, অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আর আমরা যে শান্তির সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি, সে কথা সবসময় মনে রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং শান্তির সংস্কৃতি বিনির্মাণে অবদান রেখে চলেছে। সংঘাতপ্রবণ দেশসমূহে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি বজায় রাখতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

আমাদের শান্তিরক্ষীরা যে মিশনেই গেছেন, সেখানে জাতিসংঘের পতাকাকে সমুন্নত ও উড্ডীন রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সবথেকে ভালো লাগে যেখানে যেখানে আমাদের শান্তিরক্ষীরা কাজ করেছেন সেদেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে যখনই কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে দেখা হয়েছে, আমাদের শান্তিরক্ষীদের তারা ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। গর্বে বুক আমার ভরে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘যে সম্মানটা আমরা পেয়েছি, সেটা ধরে রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। জাতির পিতা যে আদর্শ নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করে গেছেন, সেই আদর্শ নিয়েই আমরা দেশকে পরিচালনা করছি। ইনাশাল্লাহ বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে উঠবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সকল শান্তিরক্ষীদের বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের বর্তমান পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা বজায় রাখার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।

প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জামসহ বাংলাদেশের সকল শান্তিরক্ষী যাতে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিতে পারে, সেজন্য আমাদের সরকারের সকল প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববাসীর পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনাদের এই ভূমিকা চিরকাল স্মরণ করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি শক্তিশালী শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং বিশ্বে বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত রাখবেন।

মনে রাখবেন, এই পতাকা লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত একটি পতাকা। এটা আমাদের গর্ব। কাজেই আমরা সবসময় এটাই চাই এই পতাকা যেন সবসময় সমুন্নত থাকে।’

শান্তিরক্ষা মিশনে ১৯৮৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের ১৫৯ জন শান্তিরক্ষী শহীদ এবং ২৪০ জন আহত হয়েছেন। সম্প্রতি শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় আত্মোৎসর্গকারী ৮ বাংলাদেশিকে জাতিসংঘের হ্যামারশোল্ড পদকে ভূষিত করা হয়, যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ।

- Advertisement -

আরও সাম্প্রতিক খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ খবর