চট্টগ্রামের একটি বড় শিল্প গ্রুপ। এতিমরা যেন উন্নত জীবনযাপন করে, তারা যেন ভালো খেতে পারে এবং ভালোভাবে থাকতে পারে সেজন্য একটি মাদ্রাসায় ১০ কোটি টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
জুনায়েদ বাবুনগরীকে ডাকা হলো শিল্প গ্রুপে। শিল্প গ্রুপ থেকে জুনায়েদ বাবুনগরী মাদ্রাসা উন্নয়ন এবং এতিমদের উন্নত জীবনযাপনের কথা বলে ১০ কোটি টাকা চাঁদা নিলেন।
এই টাকার একটি টাকাও তিনি খরচ করেননি মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য। পুরো টাকা তিনি মেরে দিয়েছেন। পরবর্তীতে ওই শিল্প গ্রুপের লোকজন যখন মাদ্রাসা পরিদর্শনে গেছে তখন দেখা গেছে যে, জুনায়েদ বাবুনগরী আসলে পুরো টাকাটাই নিজের পকেটস্থ করেছেন।
এখন ওই শিল্প গ্রুপ এই টাকা আত্মসাতের কারণে জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুধু এই রকম একটি প্রতিষ্ঠান নয় জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে এরকম এখন অসংখ্য অভিযোগ আসছে।
বিভিন্ন দানবীর, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এতিমদের জন্য বিভিন্ন সময় টাকা দেন। সাধারণত দুটি মৌসুমে এই টাকা প্রদান করা হয়। একটি হলো রমজান মাসে আরেকটি হলো কোরবানি ঈদের আগে।
এই দুই সময়ে টাকার প্রধান কালেক্টর হন জুনায়েদ বাবুনগরী। এই দুই সময়ে চাঁদা তুলেন জুনায়েদ বাবুনগরীর মত যারা মাদ্রাসার শিক্ষক আছেন তারা।
এই টাকাগুলো কিছুটা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য খরচ করেন, বাকি টাকাগুলো পুরোটাই তারা আত্মসাৎ করেন। আর এ কারণেই তারা ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যারা টাকা দান করেন তারা আর পরবর্তীতে খোঁজখবর নেন না যে টাকাটা কিভাবে খরচ হল, কোথায় খরচ হল। এই টাকাগুলো তারা কিভাবে নিচ্ছেন এবং কীভাবে ব্যয় করছেন এ সম্পর্কে কোন জবাবদিহিতাও নেই। আর জবাবদিহিতা না থাকার কারণেই এই টাকা আদায়ে একধরনের স্বেচ্ছাচারিতা তৈরি হয়েছে।
একাধিক ব্যবসায়ী কথা বলে দেখা গেছে যে, একসময় তারা আহমদ শফীকে টাকাগুলো দিতেন। আহমদ শফী বেশ ভাল টাকাই মাদ্রাসাগুলোর পিছনে খরচ করতেন। শুধু হাটহাজারী মাদ্রাসা নয় অন্যান্য মাদ্রাসার উন্নয়নকল্পে তিনি কাজ করতেন।
কিন্তু আহমদ শফী অসুস্থ হওয়ার পর থেকে গত প্রায় দু`বছর ধরে জুনায়েদ বাবুনগরী এই চাঁদা আদায়ে প্রধান ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন এবং জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে মামুনুল হক সহ কয়েকজন ব্যক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে থেকে মাদ্রাসার কথা বলে টাকা নিতেন।
কিন্তু এই টাকাগুলো আসলে তারা মাদ্রাসার পিছনে ব্যয় করতেন না।
বিভিন্ন ব্যক্তি বলছেন যে, মাদ্রাসায় এখন এই সমস্ত তথাকথিত দুর্বৃত্তদের এক ধরনের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে জুনায়েদ বাবুনগরী নেতৃত্বে আসার পর এই ব্যবসা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে।
অনেকেই স্বেচ্ছায় মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য টাকা দিতেন আবার অনেককেই জুনায়েদ বাবুনগরীরা হুমকি দিয়ে টাকা নিতেন। আবার এই টাকা কিভাবে খরচ হচ্ছে সে ব্যাপারে হিসাব চাওয়া হলেও তারা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করাবেন, প্রতিষ্ঠানের ঘেরাও করাবেন এরকম ভয় দেখাতেন।
আর তাদের ভয়ের কারণেই যারা এই ধরনের টাকা দিতেন তারা মুখ খুলতেন না। এখন যখন জুনায়েদ বাবুনগরীসহ হেফাজত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নিচ্ছে তখন তারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। জানা গেছে এ ব্যাপারে একাধিক মামলা দায়ের হচ্ছে খুব শিগগিরই।
বাংলা ইনসাইডার