রোজিনা ইসলামের ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিল। আরেকবার প্রমাণ হলো, সরকার পরিচালনায় রাজনীতিবিদদের কেন দরকার। সুশাসনের জন্য কেন রাজনীতিবিদদের সরকারের ড্রাইভিং সিটে বসা দরকার।
টানা ১২ বছরের বেশি ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ সরকার। এবারই মন্ত্রিসভায় বেশি ব্যবসায়ীর স্থান হয়েছে। তাছাড়া বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ায় রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে বার বার নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়।
রাজনীতিবিদরা অদক্ষ, দুর্নীতিবাজ ইত্যাদি নানা কুৎসা অপপ্রচার থেকে দুরে থাকতেই হয়তো প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের বেশি বেশি মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছেন।
আমলারাও রাজনীতিবিদদের সাইড লাইনে বসিয়ে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। রাজনীতিবিদ মন্ত্রীর চেয়ে ব্যবসায়িক মন্ত্রীদের সঙ্গে আমলারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আমলাদের প্রভাব বলয় বেড়েছে আর রাজনীতিবিদরা কোণঠাসা হয়ে পরেছেন।
কিন্তু এই সরকারের তিন মেয়াদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাজনীতিবিদরাই বেশি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ২০১৪ এর নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী রাজনীতিবিদদের ওপর নির্ভরতা বাড়ান।
সরকারের তিন মেয়াদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৪-১৮ মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাফল্য বেশি। একটি রাজনৈতিক সরকার থাকার কারণেই ২০১৮ তে সকল দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন সম্পন্ন করা গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গত ১৭ মে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা একজন রাজনীতিবিদ মন্ত্রী থাকলে কখনোই হতো না। রাজনীতিবিদ মন্ত্রী খুব সহজেই এই বিষয়টি নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসতে পারতেন।
রাজনীতিবিদ আর ব্যবসায়ী মন্ত্রীর মৌলিক পার্থক্য হলো আমলা নির্ভরতা। রাজনীতিবিদদের সামনে থাকে দল, নেতা এবং রাজনীতির ভবিষ্যৎ চিন্তা।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বা মোহাম্মদ নাসিমের মতো মন্ত্রী থাকলে, এই ইস্যুতে প্রথম আলোর নৈতিকতার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেত।
রোজিনা যখন মুচলেকা দিতে রাজী হয়েছিলেন একজন রাজনৈতিক মন্ত্রী তা লুফে নিতেন। সবচেয়ে বড় কথা, রাজনৈতিক মন্ত্রী থাকলে আমলারা এরকম বেপরোয়া হতে পারতেন না।
অন্যদিকে ব্যবসায়ী মন্ত্রী চিন্তা করেন চেয়ার ঠিক রাখা, আমলাদের হাত রেখে বিভিন্ন ব্যবসায়িক তদবির হাছিল করা। ব্যবসায়ী মন্ত্রীরা, তাদের অতীত ব্যবসায়িক পরিচয়ের কারণে আমলাদের ‘শ্রদ্ধা’ করেন।
তারা মনে করেন, রাজনীতি মানে হলো মন্ত্রীত্ব। ফলে একটি ঘটনা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া পূর্বাপর চিন্তা করার দক্ষতা ও প্রয়োজনীয়তা কোনটাই তাদের নেই।
রোজিনার ঘটনার পর সরকারের রাজনৈতিক মন্ত্রীদের কৌশলী বক্তব্য আর ব্যবসায়ী মন্ত্রীর আমলাদের শেখানো বুলিই বুঝিয়ে দেয়, রাজনীতিবিদরাই একমাত্র সংকট সমাধান করতে পারেন। ব্যবসায়ীরা মন্ত্রী হলে, সেটাকে স্রেফ একটা চাকরী মনে করেন।
বাংলা ইনসাইডার