22 C
Dhaka
Saturday, November 23, 2024

মিডিয়া ধ্বংস করলেই কি গোপন থাকবে জায়নবাদী নৃশংসতা?

বিডিনিউজ ডেস্ক

চাকুরির খবর

ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে হত্যা, বোমা ফেলে ফিলিস্তিনিদের স্থাপনা ধ্বংসের পাশাপাশি ইসরায়েল এখন মিডিয়া সোর্সগুলোকে টার্গেট করছে। ফিলিস্তিনের গাজায় আল জাজিরা ও অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

শনিবার (১৫ মে) বোমা হামলা চালিয়ে আল জাজিরা এবং এপি’র অফিস গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই হামলা অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও অপ্রত্যাশিত ছিল না। ইতিহাস বলে, ইসরায়েল বরাবরই যেকোনও যুদ্ধ বা সংঘর্ষের সময় মিডিয়াকে টার্গেট করেছে। ইসরায়েল সব সময় চেয়েছে তার কর্মকাণ্ড, তার অপরাধ গোপন থাকুক। প্রথমে তারা গুঁড়িয়ে দেয় আল-জাওহারা টাওয়ার, যেখানে ছিল ১৩টি ছোট বড় মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও এনজিও’র অফিস।

এরপর আল-শরৌক টাওয়ার ধ্বংস করে, ইসরায়েলের যে ভবনে ছিল ৭টি মিডিয়া অফিস। মিডিয়া টাওয়ারগুলোতে আল-জাহিরা, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতো বড় গণমাধ্যমেরও অফিস ছিল, কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এসব টাওয়ারে ‘হামাস জঙ্গি’ ছিল এমন নিশ্চিত তথ্যের ভিত্তিতেই হামলা হয়েছে।  

এর আগে ২০০৯, ২০১২ এবং ২০১৪ সালেও ইসরায়েলি বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে অনেক মিডিয়া হাউজ। প্রতিটি যুদ্ধ ও সংঘর্ষে দেখা গেছে শুধু সাংবাদিক নয়, সাহায্যকারী সংস্থার কর্মী, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরও টার্গেট করে হত্যা করে ইসরায়েলের সেনারা। সেই সঙ্গে চলে নির্বিচারে শিশু হত্যা।

ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েল যা করছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ, ভয়ংকর নৃশংসতা। চলছে জাতিগত নির্মূল অভিযান। ৭৩ বছর ধরে একটি জাতির ন্যায়সঙ্গত লড়াইকে আন্তরিকভাবে সমর্থন করছে না বিশ্ব সম্প্রদায়।

বহু বছর ধরে চলছে ইসরায়েলের এই অত্যাচার। তারা চায় পুরো ফিলিস্তিন ভূমিই হবে ইহুদি রাষ্ট্র। এবং বরাবরের মতোই এবারও ইসরায়েলের পক্ষে আমেরিকার স্পষ্ট সমর্থন।

এরপরও বলতে হবে, এবারের যুদ্ধ কিছু নতুন বার্তা দিচ্ছে। প্রথমেই বলতে হয়, বিশ্ব রাজনীতি এখন সে জায়গায় নেই যে, আমেরিকা যা বলবে সেটাই সবাই মানবে। ইসরায়েলের বর্ণবাদী আচরণ, আর তার প্রতি আমেরিকার নগ্ন সমর্থন বিশ্বব্যাপী নিন্দা কুড়িয়েছে।

ইসরায়েলের এই সহিংস বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে দুটি নতুন বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ছে – বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ এবং সেটা শুধু ফিলিস্তিনিরা বা মুসলমানরা করছে তা নয়, যোগ ইচ্ছে অন্য ধর্ম ও বর্ণের মানুষও।

এবং ইসরায়েলের পণ্য বর্জনসহ ইসরায়েলে বিনিয়োগ না করার আহ্বানও জোরালো হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। 

বলতে গেলে আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে ফিলিস্তিন বিশ্বের জনপ্রিয় রাজনৈতিক মঞ্চে অনেক বেশি আলোচিত। অন্য তিনটি বিশেষ আলোচিত ইস্যু যেমন– জলবায়ু, ব্ল্যাক লাইভ্স ম্যাটার এবং নারীর সমতার পাশাপাশি বিশ্ববাসীর নতুন এজেন্ডা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র তথা ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার।

ইসরায়েলি এবং জায়নবাদীদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো, তাদের নৃশংস আচরণ, তাদের বর্ণবাদী সহিংসতা, তাদের কৌশল কোনও কিছুই আর গোপন থাকছে না। বিশ্ববাসীর কাছে আজ সব উন্মোচিত।

এবার আরও নতুন দিক হলো, ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ, শিশু- কিশোর বিশ্বসভায় আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে সক্রিয় সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে। তারা তাদের কথা বলছে, অত্যাচারের সচিত্র প্রতিবেদন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

লাইভে মানুষ দেখছে জায়নবাদীদের অত্যাচার আর নির্মমতার ছবি। ১৯৪৮ সালের আগের ইহুদি সম্প্রদায় আর এখনকার ইসরায়েল রাষ্ট্রের মূল দর্শন যে লুটপাট, অত্যাচার, সহিংসতা তা নিয়ে কোনও সংশয় থাকছে না বিশ্ববাসীর।

যারা জানতো না তারাও এখন জানছে ১৮৯৭ সালের আশ্রয়প্রার্থী ইহুদিরা কীভাবে ১৯৪৭-এ এক স্বতন্ত্র ইসরায়েলি রাষ্ট্র করে ফেললো এবং সেই থেকে একের পর এক আরব ভূমি দখল করে নিজেদের সম্প্রসারণ করছে।

ইসরায়েল শুধু তার নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনীকেই ব্যবহার করছে না, সারা বছর রাষ্ট্র সমর্থিত ইহুদি সন্ত্রাসী গ্রুপ নিয়মিত অত্যাচার করে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর। এসব কথাও এখন গোপন থাকছে না।

মানুষ জানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশসমূহের সমর্থনের ওপর ভর করে অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত ইসরায়েল রাষ্ট্র আজ সভ্য সমাজের কোনও বিধি বা আইনই মানছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস খোলাখুলি ইসরায়েলের পক্ষে সাফাই গাইছেন। কিন্তু খোদ মার্কিন কংগ্রেসেই গত ১৩ মে দাবি উঠেছে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমান আচরণ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। এই দাবি যারা তুলেছেন তাদের অধিকাংশই তরুণ কংগ্রেসম্যান।

এবারকার মতো এত ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ পশ্চিমা দেশগুলোতে আগে দেখা যায়নি। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বাস করা আরব নাগরিকরাও এবার ন্যায্যতার দাবি তুলেছে প্রথমবারের মতো।

লেবানন ও জর্ডান থেকে প্রতিবাদকারীরা ঢুকে পড়েছিল ইসরায়েলের অভ্যন্তরে।

এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত ইসরায়েলি আগ্রাসন। জো বাইডেন ইসরায়েলের পক্ষ নিতে গিয়ে যে নিরাপত্তার কথা বলেন তা এক আজগুবি তত্ত্ব।

মানুষ দেখছে ইসরায়েল ও আমেরিকা নিরীহ সংগ্রামী মানুষের, তাদের সন্তানদের রক্তে পা ডুবিয়ে হাঁটছে আর গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলছে।

কিছু আরব দেশ যতই সম্পর্ক স্বাভাবিকের চেষ্টা করুক, শাসকগোষ্ঠীর সেই প্রচেষ্টার সঙ্গে তাদের মানুষ থাকবে না, থাকবে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গেই।

লেখক: সাংবাদিক, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

বাংলা ট্রিবিউন

- Advertisement -

আরও সাম্প্রতিক খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ খবর