জাতীয় প্রেসক্লাব সাধারণত মনে করা হয় সাংবাদিকদের মিলনকেন্দ্র। সেখানে সাংবাদিকরা আড্ডা দেন, বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন আর কম পয়সায় খাওয়া-দাওয়া করেন।
এই হল প্রেসক্লাব সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা। প্রেসক্লাবে বিভিন্ন হলগুলো ভাড়া দিয়ে প্রেসক্লাবের আয় উপার্জন হয়। কিন্তু এই প্রেসক্লাবে গত ডিসেম্বরে প্রথম একজন নারী সভাপতি হয়েছিলেন ফরিদা ইয়াসমিন।
বাংলাদেশের জাতীয় প্রেসক্লাবের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী সভাপতি। আর সভাপতি হওয়ার পর থেকে তিনি আপন আলোয় মহিমান্বিত করছেন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রকে। তার প্রমাণ পাওয়া গেল গতকাল এবং আজ।
প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গতকাল সচিবালয়ে আটক করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কতিপয় দুর্বৃত্ত কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অন্তত ৮ জন কর্মকর্তা তাকে ৫ ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করে, লাঞ্ছিত করে।
তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগ থানায় এবং সেখান থেকে আজ রোজিনাকে কোর্টে হাজির করা হয়েছিল। আদালত থেকে রোজিনা এখন কারাগারে আছেন। এই ঘটনাটি অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।
শুধু সাংবাদিকতা নয়, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এই ঘটনার প্রতিবাদে যেভাবে সাংবাদিক সমাজের রুখে দাঁড়ানোর কথা ছিল ঠিক সেভাবে আমরা রুখে দেয়া সাংবাদিক সমাজকে রুখে দাঁড়াতে দেখিনি।
বিশেষ করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভূমিকা ছিল অনেকটা গা বাঁচানো ধরনের। এর মধ্যে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। আর সবচেয়ে উদ্ভাসিত হয় ফরিদা ইয়াসমিন।
গতকাল রাত থেকেই ফরিদা ইয়াসমিন রোজিনার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন। তিনি সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। রোজিনার মুক্তির জন্য কাজ করেছেন, রোজিনার মুক্তির জন্য কথা বলেছেন বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে।
তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ সম্পর্কে তার আকুতির কথাও জানিয়েছেন। আজও ফরিদা ইয়াসমিন ছিলেন তৎপর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি নেতৃত্ব দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তিনি এই ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তি দাবি করেন।
বাংলাদেশের সাংবাদিক নেতৃত্বে এটি একটি অনন্য উদাহরণ। জাতীয় প্রেসক্লাবকে কখনোই সাংবাদিকতার অধিকারের প্রশ্নে এত নির্ভীক এবং অকুতোভয় হিসেবে দেখা যায়নি।
আর এটি সম্ভব হয়েছে ফরিদা ইয়াসমিনের নেতৃত্বের কারণে। তিনি আপন আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছেন সাংবাদিকতার পেশাগত মর্যাদা রক্ষার জন্য সাংবাদিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে।
আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবের এরকম ভূমিকাই আশা করি। আর এই সাহসী ভূমিকার জন্য ফরিদা ইয়াসমিন অবশ্যই একটি ধন্যবাদ পেতে পারেন।
বাংলা ইনসাইডার