পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিকদলগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অস্ত্রসহ নানান রশদ ক্রয় করতে অর্থের যোগান দিচ্ছে পাহাড়ের অবৈধ কাঠ ব্যবসায়িরা।
সন্ত্রাসীদের বিপুল অংকের চাঁদা দিয়ে তাদের প্রত্যক্ষ মদদে অত্রাঞ্চলের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কোটি কোটি টাকার বিক্রয় নিষিদ্ধ কাঠ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করছে রাঙামাটির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র।
স্থানীয় এলাকাগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে উপরোক্ত তথ্যগুলো পায় নিরাপত্তা বাহিনী। এই ধরনের অবৈধ ব্যবসায়িদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আদায় করে পাহাড়ের উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলেও জানতে পেরেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
পাহাড়ের সন্ত্রাসীদের অর্থের যোগানদাতা অবৈধ কাঠ ব্যবসায়িদের চিহ্নিত করতে মাঠে নেমেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
যার ধারাবাহিকতা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে বৃহস্পতিবার রাঙামাটি থেকে অভিনব কায়দায় পাচারের সময় এক ট্রাকভর্তি চিড়াই কাঠ-চৌকাঠ আটক করেছে রাঙামাটি সদর জোনের একদল চৌকস সদস্য।
বৃহস্পতিবার (১৪মে ২০২১)সকালে অবৈধ কাঠ পাচারের সময় রাঙামাটি সদর জোনের ঘাগড়া চেকপোষ্টে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক অবৈধ কাঠভর্তি ট্রাকটি (ঢাকা মেট্টো-ট ২২-৩৮২২) আটক করা হয়।
উদ্ধারকৃত কাঠগুলোর মধ্যে সেগুন, গোদা, গামারিসহ বিভিন্ন বিক্রয় নিষিদ্ধ প্রজাতির প্রায় তিনশো ফুট কাঠ রয়েছে এবং বাজার মূল্য আনুমানিক ৬লাখ টাকা বলে জানাগেছে। আটকের সময় ট্রাকের চালক পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে কাঠভর্তি ট্রাকটি জব্দ করে রাঙামাটিস্থ পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন সদর সেনা জোনের জোন কমান্ডার লে:কর্ণেল রফিকুল ইসলাম-পিএসসি।
তিনি জানান, ইতিপূর্বেও অভিনব কায়দায় তেলের ট্যাংকারে করে বিপুল পরিমান অবৈধ চিড়াই কাঁঠ পাচারের সময় রাঙামাটি সদও সেনাজোন কর্তৃপক্ষ সেটিকে আটক করে।
ঠিক একই কায়দায় বৃহস্পতিবার (১৩ মে ২০২১) ভোরে অভিনব কায়দায় অবৈধ কাঁঠ এবং আসবাবপত্র পাচারকালে সেনাবাহিনীর ঘাগড়া আর্মি ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ তা জব্দ করে।
এই কাঁঠ ও আসবাবপত্র সিন্ডিকেট চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধ ভাবে কাঁঠ ও আসবাবপত্র পাচার করে আসছে। এ কাঠ পাচার চক্রের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবৈধ অস্ত্রধারীদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলে নিশ্চিত হতে পেরেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
এদেরকে ৭ হাত মাটির নিচে থাকলেও আমরা খুব শীঘ্রই খোঁজে বের করা হবে এবং অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ি ও সন্ত্রাসীদের কোটি কোটি টাকা চাঁদা প্রদানকারিদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরো জোরদার করা হবে বলেও জানিয়েছেন সদর জোন কমান্ডার।
নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, এই ধরনের ট্রাক বানানো হয় শুধুমাত্র অবৈধ কাঠ পরিবহনের জন্য। ট্রাকটির সঠিক কোনো কাগজপত্র এখনো পাওয়া যায়নি।
সূত্রমতে, রাঙামাটি শহরের শওকত আলম, আমির হোসেন, মোঃ মান্নান, কুতুব মিয়াসহ আরো কয়েকজন এই অবৈধ কাঠ পাচারের সাথে জড়িত বলে জানতে পেরেছে অনুসন্ধানী সংস্থাগুলো।
ইতিমধ্যেই তাদের সাথে আঞ্চলিকদলীয় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের মুঠোফোনালাপের তথ্যও জানতে পেরেছে নিরাপত্তাবাহিনী। এই অবৈধ কাঁঠ ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট দীর্ঘ দিন যাবৎ অবৈধ আসবাবপত্র এবং কাঁঠ ব্যবসায়িদের সাথে সমন্বয়ে কুতুকছড়ি, ঘিলাছড়ি এবং রাঙামাটি পৌর এলাকা থেকে অভিনব কায়দায় অবৈধ কাঁঠ এবং আসবাবপত্র পাচার করে আসছিল।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক গঙ্গা প্রসাদ চাকমা ও বিভাগীয় কর্মকর্তা(ডিএফও)মোঃ রফিকুজ্জামান শাহ জানান, রাঙামাটি সদর জোন কর্তৃক অবৈধ কাঁঠ ও আসবাবপত্র পাচারকালে ঘাগড়া আর্মি ক্যাম্প গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আটক করে বন বিভাগের কাছে হস্থান্তর করেন। বন আইন অনুযায়ী দায়রা ও জজ কোর্টে মামলা করা হবে।