...
Sunday, November 3, 2024

অকাল জড়া ফুল

চাকুরির খবর

রুবায়েত ফয়সাল আল-মাসুম এর ছোটগল্প: অকাল জড়া ফুল

১ম পর্ব

ছোটবেলা থেকে রেলগাড়ী দেখার আগ্রহ আমার প্রবল । তাই বড় হয়েও কাজের ফাঁকা যে অবসর সময় টুকু পাই  সে সময় টা রেল স্টেশনের পাশে বসে গল্প করে কাটিয়ে দিই। রেলগাড়ী চলার ঝকঝক শব্দ আজও আমার মনে আজও অদ্ভুত ভালো লাগায়। কদিন থেকে পাশের বাসার অনিকও আমার এই রেলগাড়ী দেখার মতো হাস্যকর কাজে সময় দেয়। বাবার সরকারী চাকুরির সুবাদে ভিন্ন ভিন্ন শহরে বড় হয়ে উঠা আমার, অনিকের সাথে এই শহরে আমার নতুন পরিচয়। অনিক আনমনা সহজ সরল টাইপের ছেলে, সুন্দর করে গোছিয়ে কথা বলে। ঢাকা একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ও এমএসসি শেষ করেছে। একটা প্রকল্পে কাজ করছে। একদিন বিকেলবেলা অনিককে নিয়ে রেললাইনের পাশে বসে সিগারেট খাচ্ছি আর গল্প করছি। অনিক বললো এক কাছের বন্ধুর সাথে সর্বশেষ এই রেললাইনে বসে অবসর কাটিয়েছি, জানিনা সে আজ কেমন আছে, তার স্মৃতি আজও হৃদয়ে অম্লান। তার দুষ্টামি, হাসি, কথাবলা আমার আজও চোখে ভাসছে। অনিকের কথা শুনে আমার মনে খুব ইচ্ছে হলো সেই বন্ধুর কাহিনি টা শুনতে। অনিককে খুব অনুরোধ করলাম তোমার বন্ধুর গল্প বলো”
বাদাম চিবাতে চিবাতে অনিক শুরু করলো, 

কোন কিছু না জানিয়ে সে দিন রাফি হঠাৎ করেই ঢাকা থেকে বাসায় আসলো। বাসায় এসে নিজের সাথে যুদ্ধ করে তার বাবাকে সাহস করে মনের কথাটা বলে দিলো।”বাবা আমি বিয়ে করবো, আমার জন্য তোমরা পাত্রী দেখো। এই সপ্তাহেই আমি বিয়ে করতে চাই”। শিক্ষক বাবার আদর্শে গড়া পুত্র এমন একটা কথা বলবেন এটা যেনো কল্পনাতেও ভাবতে পারছেন না বেনজির সাহেব। জবাবে কি বলবেন ছেলেকে ভেবে পাচ্ছেন না। মা ডাইনিং টেবিলে খাবার দিয়েছেন, কিন্তু আজ রাফির খাবারের প্রতি মন নেই, তবু বাবা বলেছেন আসতে, খেতে হবে।  রাফি ছোটবেলা থেকে বাবার কখনও অবাধ্য হয় নি। সেই ছেলেবেলা থেকে বাবার কাছে পড়াশুনায় হাতেখড়ি। আদর্শ বাবার আদর্শ ছেলে রাফি। মেধা আর আচরনে ছোটবেলা থেকেই সকলের প্রিয় পাত্র ছিলো। 

বন্ধু মহলে রাফির অনেক সুনাম ছিলো। কখনও কোন বন্ধুকে পড়াশুনায় সাহায্য করতে দ্বিধা করে নি। তাই তো অর্জনের খাতায় যেনো কোন কিছুর কমতি ছিলো না রাফির জীবনে। ক্লাশ ফাইভ এবং ক্লাস এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে জানান দিয়েছে সামনে বড় একটা কিছু করে দেখাবে রাফি। তার দাদারও স্বপ্ন ছিলো রাফি বড় হয়ে একজন ইঞ্জিনিয়ার হবেন। আগেকার মানুষ দাদা বৃটিশ ইঞ্জিনিয়ার দেখে স্বপ্ন দেখতেন নিজের ছেলেকে নিয়ে।কিন্তু সফল হতে পারেন নি। নাতির সফলতা দেখে স্থর করেছিলেন নাতিকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। রাফির কখনও এদিকে মনযোগ ছিলো না। ভালো করে পড়াশোনা করবে জীবনের মোড় যে দিকে ঘুরে, কোন কিছুতেই সিরিয়াস ছিলো না । অনেক সহজ সরল ছিলো রাফির ভাবনা।
তবে এসএসসিতে উপজেলার শ্রেষ্ঠ ফলাফল রাফির দাদার স্বপ্ন পূরণে সে অনেকটা এগিয়ে গেলেন। সত্যি মা বাবার গর্ভ করার মতো ছেলে ছিলো রাফি । কলেজের ফার্স্টবয় রাফি কখনও প্রথম থেকে দ্বিতীয় হয় নি। কলেজে একবার এক আইটি কোম্পানীর এম্বেসেডর এসেছিলেন।

স্টুডেন্টদের মেধা যাচাই করতে, প্রথম যে হবে তাকে একটা ল্যাপটপ পুরুষ্কার দিবেন। প্রাথমিক বাছাই করে দশ জন রাখলেন। পরের বার হবে হিয়ারিং টেস্ট। একবার শুনে সবচেয়ে বেশী ডিজিট যে মনে রাখতে পারে সে হবে ফার্স্ট। সে দিন রাফি সকলকে তাক লাগিয়ে ২৬ টি ডিজিট একবার শুনে বলে দিয়ে প্রথম হয়েছিলো। কলেজ জীবনে রাফি ফিজিক্স কেমেষ্ট্রি ম্যাথ বায়োলজিতে কখনও ৭৫ এ ৭০/৭২ এর কম পায় নি। আজও রাফির খাতা সংরক্ষণ করে রেখেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এখনও কলেজের স্যারেরা রাফির খাতা নতুন ছাত্র ছাত্রীদেরকে দেখায় উৎসাহ দেয়ার জন্য। যেমন ছিলো হাতের লেখা সুন্দর, তেমনি ছিলো দেখতেও অপূর্ব। এইচএসসি পরীক্ষাতেও মেধার পূর্ণ স্বাক্ষর রেখে উত্তীর্ণ হয়ে কলেজের সুনাম উজ্জ্বল করেছেন রাফি। প্রথম চান্সে প্রথম পরীক্ষায় বুয়েটের লোভনীয় সাবজেক্ট ট্রিপলী তে ভর্তি হয়েছেন। দাদাভাইয়ের দেখা স্বপ্ন যেনো সে দিন সত্যি হতে চলেছে। 

খেতে খেতে সুযোগ করে বেনজির সাহেব বললেন তোমার বিএসসি শেষ হতে আরও এক বছর সময় লাগবে। তুমি বিয়ে করবে এতে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে তোমার জীবনের সফলতার স্বার্থে কিছু পরামর্শ দেয়া। তুমি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং টা শেষ করে পরে বিয়ে করো। তাহলে তোমার চাকরি না হলেও বুয়েটের দোহাই দিয়ে টিউশনি অথবা বেসরকারি একটা জব করেও জীবনে কিছু একটা করতে পারবে। কিন্তু এখন বিয়েটা যদি করে ফেলো তবে ডিগ্রী টা আর হবে না। রাফি যেহেতু বাবার কোনো কথার অমর্যাদা করে না। তাই রাফিরও বাবার কথার প্রকৃত মানে বুঝতে কোন কষ্ট হলো না। 
বেনজির সাহেব একথা ভালোভাবেই জানেন তার ছেলে তার কথার বিপরীতে  যাবে না। তবে কথাটা যেনো রাফি কোনভাবেই মেনে নিতে পারলো না। তাই খাবার শেষ না করেই হাত ধুয়ে উঠে চলে গেলো রুমে। আদরের সন্তান না খেলে মায়ের কি পেটে খাবার যায়? রোকেয়া বেগমও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পরলেন। ছেলেকে সামলাবেন নাকি স্বামীকে খাবার দিবেন। কিছুই যেনো তিনি ভেবে পাচ্ছেন না রোকেয়া বেগম। ছেলেকে অনেক অনুরোধ করলেন তোর প্রিয় খাসির কলিজা ভুনা করেছি, আয় বাবা খেতে আয়, অভিমানি রাফি আজ মায়ের কোনো কথায় কান দিচ্ছে  না। ঠিক তখন হঠাৎ করেই রাফিকে আমি ফোন দিই। দ্রুতই বাসা থেকে বের হয়ে চলে আসে রাফি। আমাকে নিয়ে কে নিয়ে এই রেললাইনে আড্ডায় বসে রাফি। 

আমি জিজ্ঞেস করি দোস্ত টিউশনি কি করতে পারো?
পড়াশুনার চাপ কেমন? 
পড়াশোনার তেমন চাপ নেই, সহজ সাবজেক্ট। 
আমি বিস্মিত হয়। এত কঠিন সাবজেক্ট কে সহজ বলে কেমন করে?
না দোস্ত এত পড়ি না, তবুও সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত অনেক নাম্বার ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ফার্স্ট আছি। নটরডেম কলেজ আর ভিকারুননিসা কলেজের দুই ছেলে মেয়ে কে পড়াই বিশ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু এদের মাথায় গোবর ছাড়া কিছুই নাই, কিছুই বুজে না। বর্তনী সম্পর্কে কোন এবিসি জ্ঞান নেই। ইলেকট্রনিকস এর বর্তনী বিষয়ে রাফির চরম দখল ছিলো।

রাফি একের পর এক সিগারেট টানতে লাগলো। রাফিকে কেনো জানি সেদিন খুব অসাভাবিক লাগছিলো। কথায় আচরণে ঠিক আগের মতো নেই। চেহারাতে যেনো কোনো হতাশার ছাপ। প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে রাফি বললো আচ্ছা বন্ধু এখন বিয়ে করলে কেমন হবে? একটা মেয়ে দেখো, কাজ সেরে ফেলবো।কি আজব কথা, এখন তুই কেমনে বিয়ে করবি? আরে শালা বিয়ে করবো বিয়ে, চুরি তো করবো না। আব্বাও এই কথা বলে, আর তুইও একই কথা বলিস। তোদের কে নিয়ে আর পারছি না।

রাগ করিস কেন?
আমরা সবাই তোর ভালো চাই। ঘোড়ার ডিম ভালো চাস। বলতে বলতে আরও একটা সিগারেট ধরালেন। আমার মনেও সংশয় কাজ করছে, যে ছেলে বিয়ের আলোচনা তো দূরের কথা কখনও মেয়ে মানুষের দিকে তাকাতো না, সে কি না আজ বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করার আগে বিয়ে করতে চাচ্ছে। হয়েছে টা কি রাফির, বিষয় টা আমি কোনভাবেই মানতে পারছিলাম না। অবচেতন মনে রাফিকে জিজ্ঞেস করলাম দোস্ত, আচ্ছা মেয়ে সংক্রান্ত কোনো কিছু হয়েছে কি? হলে আমাকে বল।কথাটা শুনেই রাফি যেনো ক্ষেপে গেলো। তুই থাক তোর মেয়ে নিয়ে, আমি আজ রাতেই চলে যাবো, পরশু ক্লাশটেস্ট আছে। ঢাকা আসলে দেখা করিস, হলে আসিস। সেদিনের মতো রাফির সাথে শেষ দেখা হয় আর শেষ কথা হয়।
অনিক বললো “তবে আমার কাছে কেনো জানি খুব সন্দেহ হলো, রাফিকে তো আমি চিনি। তার মনের লোকায়িত কথাগুলো সেদিন আর জানা হলো না।”
অনিকের কথা শুনে শুনে অনিকের প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে পড়লাম।

২য় পর্ব

বুয়েটের ছাত্র রাফি ইউনিভার্সিটিতেও প্রতিনিয়ত মেধার স্বাক্ষর রেখে আসছিলো। আন্তঃবিভাগীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা বলিবল খেলা ক্রিকেট খেলা গণিত অলিম্পিয়াড সবজায়গায় রাফি সফল ছিলো।  বাংলাদেশের হয়ে এশিয়ান গণিত অলিম্পিয়াডে রাফির বোঞ্জ অর্জন রাফিকে এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক পরিচিতি। দেশীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সময় জেসির সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে। আর্কিটেকচারের মেধাবী ছাত্রী জেসি। আঁকাআঁকিতে যেমন ফার্স্ট দেখতেও লম্বা আর লাবন্যময়ী। এমনভাবে কথা বলতো যেনো চ্যানেল আই এ খবর পড়ছেন। আমাকেও একবার দেখিয়েছিলো ঢাকায়। বুয়েটের প্রথম বছরের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েই জেসিকে রাফির পছন্দ হয়ে যায়। মেধাবী রাফি সবকিছুতে সমান দখল হলেও মেয়ে বিষয়ে ছিলো অত্যন্ত লাজুক। তার কাছে লজ্জা যেনো পুরুষের ভুশন। তবুও শাহবাগ মোড়ে প্রতিদিন আড্ডা দিতো শুধু জেসিকে এক নজর দেখার জন্য। জীবনে অনেক প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে রাফি, কিন্তু আবেগের কাছে রাফি কখনও ধরা দেয় নি। 

হলে হঠাৎ করেই একদিন বন্ধু হাসানের ফোন, জরুরি আসো বন্ধু কথা আছে শাহবাগ মোড়ে যাবো। হল থেকে বের হলো রাফি দ্রুত, উদ্দেশ্য হলো বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যাবে শাহবাগে। শাহবাগ প্রাঙ্গনে ফুচকা খাওয়ার ফাঁকে চোখ পরলো এক স্টলের দিকে। সেদিন রাফি চোখ যেনো ফেরাতেই পারছে না। মাথায় ফুল দিয়ে ফাল্গুনী সাজ সেজে সেদিন গোলাপ কিনতে এসেছে জেসি। এ যেনো অন্যরকম জেসি। তবে সেদিন রাফির মনে ভালোবাসার শক্তি এলো। মনে মনে ভাবলো পহেলা ফাল্গুনেই প্রস্তাব দিবে, ভালোবাসা দিবসের অপেক্ষা আর নয়। আজ জেসিকে ভালোবাসার কথা বলবে। যেই ভাবা সেই কাজ, কিন্তু মনের মাঝে এক অজানা ভয় কাজ করছে। জেসি যদি না করে তবে রাফি কি করবে? শত শংকা আর ভয়কে জয় করে রাফি সেদিন জেসিকে বলেছিলো তার মনের কথা। তবে জেসির রিয়েকশন টা ছিলো একেবারে ভিন্ন। খুব শান্ত সভাবের মেয়ে। বলল জীবন টা অনেক বড় রাফি, তুমি আমার চেয়ে অনেক ভালো মেয়ে পাবে, তোমাকে আমি ভালোবাসতে পারবো না। আমার কিছু পারিবারিক সমস্যা আছে, আমাকে একটু বুঝতে চেষ্টা করো। জোর করে প্রেম ভালোবাসা হয় না, আমি তোমার বন্ধু হয়ে সবসময় পাশে থাকবো। কেনো জানি সেদিন লাজুক সভাবের রাফি জেসির এই উত্তরটা মেনে নিতে পারলো না। তুমি যদি আমাকে ভালো না বাসো তবে আমি কিন্তু তোমার জন্য আজকে মারা যাবো। জেসি কিছু না বলে হলে চলে যায়।

সে দিন ভাড়াক্রান্ত মন নিয়ে রাফি আর হলে যায় নি সোজা মা বাবার কাছে চলে আসে। বাসায় বাবার সাথে কথা কাটা কাটি পরে এই স্টেশনে বসে গল্প শেষে রাফি বাসায় চলে যায়। তার মনের উদ্ধিগ্নতা আমি কিছুটা টের পেয়েছিলাম। রাতে ছোটভাইয়ের কয়েকটি অংক সলভ করে মায়ের সাথে গল্প করেছে রাফি। রাফির ইচ্ছে ছিলো বুয়েটের পড়া শেষ করে একটা চাকরী নিয়ে মা বাবা কে নিয়ে সপরিবারে ঢাকায় থাকবে। বাবাকে কোন কষ্ট করতে দিবে না। মাও রাফির কথা শুনে খুশিতে অনেক কেঁদেছিলেন।

রাফির সেদিন রাতেই ঢাকা ফিরে যাবার কথা ছিলো। বাসের টিকেটও কিনা ছিলো। কিন্তু রাতে মায়ের অনুরোধে রাফি থেকে যায়।
সন্ধ্যা রাতেই খেয়ে শুয়ে পরে। পরিবারে রাতে বাবার সাথে কথা হয়েছিলো কিনা কিছুই জানতে পারিনি। তবে সন্ধার পরে সম্ভবত জেসির সাথে কথা হয়। অনেক রাগারাগিও হয়, রাত সাড়ে নয়টায় খবর আসে রাফি সিলিং ফ্যানের সাথে ফাস টানিয়ে আত্মহত্যা করেছে। শুনে যেনো আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। দৌড়িয়ে রাফিদের বাসায় গেলাম, গিয়ে শুনি রাফিকে হাসপাতালে নিয়েছে। মুহূর্তের মাঝে রাফির মৃত্যুর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পরলো। মেডিকেলের অন্যান্য বন্ধুরা আসলো। সকলে মিলে সেদিন ডাক্তারকে অনেক রিকুয়েষ্ট করা হলো যেনো রাফির লাসটা না কাটে। কিন্তু অপমৃত্যুর জন্য পোস্ট মর্টাম আটকানো গেলো না। কলেজের প্রায় সকল শিক্ষক গিয়েছিলেন এক মুহূর্তের জন্য রাফিকে একনজর দেখতে।

পরদিন সকাল দশটায় গ্রামের বাড়িতে জানাজা হলো। গ্রামের মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলো। শেষ বিদায জানাতে এ গ্রাম ও গ্রাম কোন গ্রামে মানুষ বাদ যায় নি।অশ্রুসিক্ত নয়নে সকলের সেদিন শুধু রাফির ছোটবেলার কথায় মনে করেছিলো। প্রিয় স্কুলের মাঠ, বেঞ্চ, টেবিল, ব্ল্যাকবোর্ড এমনকি গাছের পাতারাও সেদিন রাফিকে খুজতেছিলো। নিজেকে বড্ড অপরাধী সাজিয়ে সেদিন জেসিও এসেছিলো রাফিদের বাড়িতে রাফিকে দেখতে। রাফিকে দেখছিলো আর বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলো। জেসিও হয়তো সেদিন বুজতে পারে নি রাফি সত্যি সত্যি আত্মহত্যা করবে। নির্বাক হয়েছিলো রাফির বাবা মা, এর যে কোনো সান্তনা নেই, নেই কোন যুক্তি, নেই কোনো উত্তর। একটি স্বপ্ন, একটি ভালোবাসা সেই সাথে একজন প্রকৃত মেধাবীর অপমৃত্যু হলো। মা বাবা হারালো তাদের সন্তান কে, দেশ হারালো সম্পদ, আর বিশ্ব হারালো জ্বালানো প্রদীপ। সেদিন বুয়েটের ট্রিপলীর বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এসেছিলেন। জানাজার পূর্বে কেঁদে কেঁদে স্যার একটা কথা বলেছিলেন ” রাফির মতো ছেলে যদি এভাবে আমাদের থেকে নিজেকে লুকিয়ে নেয়, তবে তা শুধু দেশের ক্ষতি হয় নি ক্ষতি হয়েছে সারা বিশ্বের, তার মতো ছেলের এ বিশ্বের প্রয়োজন ছিলো”। 

আবার ট্রেন আসলো ঝকঝক শব্দ করে। অনিকের কাহিনি শুনে আমার হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হয়েছে তা তো ট্রেনের শব্দে বিলীন হওয়ার নয়। মাগরিবের আজান হলো অনিককে নিয়ে বাসায় ফিরলাম।

লেখক:
প্রকৌশলী রুবায়েত ফয়সাল আল-মাসুম
সহকারী প্রকৌশলী
বিএডিসি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ক্ষুদ্রসেচ জোন,
ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
ই-মেইল: [email protected]

- Advertisement -

আরও সাম্প্রতিক খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সর্বশেষ খবর

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.