দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সবাই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে একে অপরের হাত ধরে যদি এগিয়ে যাই, তাহলে অবশ্যই এ অঞ্চলের মানুষকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত জীবন দিতে পারব।
সোমবার (২২ মার্চ) জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধে নেপালের ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন নেপাল সরকার এবং সেখানকার জনগণ নানাভাবে স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তারা অস্ত্র সরবরাহও করেছিল। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে সর্বাগ্রে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে নেপাল অন্যতম।
১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে নেপাল বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। আমরা নেপালের জনগণের সে অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি। স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা ২০১২ এবং ২০১৩ সালে নেপালের ১১ জন নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সম্মাননায় ভূষিত করি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। আমাদের মধ্যে ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়াও রয়েছে প্রায় একই ধরনের ইতিহাস।
আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের অবস্থান প্রায় এক এবং অভিন্ন। বাংলাদেশ এবং নেপালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বিশেষ করে পানি-বিদ্যুৎ খাত, পর্যটন ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সহযোগিতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতিমধ্যে বিবিআইএন চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আমাদের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এ অঞ্চলের দেশগুলোর উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
নেপালকে আমরা আমাদের সৈয়দপুর আঞ্চলিক বিমানবন্দর এবং মংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, দক্ষিণ এশিয়ার এক বিশাল সংখ্যক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।
বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনও অর্ধাহারে বা না খেয়ে প্রতি রাতে ঘুমাতে যায়। অনেকে জীবন ধারণের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় যে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, সেগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করে এ অঞ্চলের মানুষের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এ অঞ্চলকে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস আমরা অব্যাহত রাখব। বর্তমান বিশ্বে একা চলার কথা চিন্তা করা যাবে না।
আমরা সবাই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে একে অপরের হাত ধরে যদি এগিয়ে যাই, তাহলে অবশ্যই আমরা এ অঞ্চলের মানুষকে একটি উন্নত জীবন দিতে পারব।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এমন একটি অঞ্চলে বসবাস করি যা প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দেশগুলো যেমন ভূমিকম্প, ক্লাউড ব্রাস্ট, বরফ ধস, ভূমিধস, ফ্লাশ ফ্লাড বা হরকা বান ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ, তেমনি বাংলাদেশের মতো সাগর-উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলো বারবার বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, অতিবৃষ্টি বা খরার মতো দুর্যোগের সম্মুখীন হয়।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের এ উপমহাদেশের দেশগুলোকে সবচেয়ে বেশি নাজুক করে তুলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের অবদান না থাকলেও আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
আমরা অভিযোজনের মাধ্যমে সাময়িকভাবে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা বন্ধ করা না গেলে অভিযোজন প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম বা সিভিএফ-এর বর্তমান সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব নেতৃত্বকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছে।
গত বছর ঢাকায় গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন বাংলাদেশ অফিস চালু করা হয়েছে। ঢাকা অফিস দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, নেপালের রাষ্ট্রপতির কন্যা ঊষা কিরণ ভান্ডারী প্রমুখ।