কোনদিন আওয়ামী লীগ করেননি। হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। করতেন ব্যবসা। মনোনয়ন পেয়ে তিনি চিন্তা করলেন যে কিভাবে তার পরিচিতি বাড়ানো যায়।
আর এই জন্যই তিনি তার তল্পিবাহক কিছু ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করলেন একটি ভুঁইফোড় সংগঠন। সেই ভুঁইফোড় সংগঠনের ব্যানারে নিয়মিত বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান হতে লাগল। সেই সমস্ত অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করা শুরু করলেন প্রধান অতিথি হিসেবে। গণমাধ্যমে তার বক্তব্য এবং ছবি প্রকাশিত হতে থাকলো।
পরেরবার আবার তিনি নির্বাচিত হলেন, নির্বাচিত হয়েই তিনি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হলেন। এটি একটি ভুয়া লীগ সংগঠনের ইতিবৃত্ত।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে, লীগ বা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে যেতে ৮৩টি সংগঠন তৈরি হয়েছে তার প্রায় সবগুলি এরকম হাইব্রিড এবং উদ্বাস্তু নেতাদের দ্বারা তৈরি।
আবার এই সমস্ত সংগঠনগুলোকে জায়েজ করার জন্য এবং এই সংগঠনগুলোকে ক্ষমতাবান দেখানোর জন্য হাইব্রিড নেতারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের শরণাপন্ন হয়েছেন এবং সেই সমস্ত নেতৃবৃন্দকে তারা তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ভুয়া লীগের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে এবং এই অভিযানে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, হাইব্রিডদের প্রতারণার ৫টি কৌশল রয়েছে।
প্রথম কৌশল হলো যে, তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন হাইব্রিড এবং রাজনৈতিক পরিচয়হীন মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং তাদেরকে লাইমলাইটে নিয়ে আসার জন্য প্রস্তাব দেয়।
দ্বিতীয়ত, তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি সংগ্রহ করে এবং কম্পিউটারে কারসাজির মাধ্যমে এই সমস্ত ছবিগুলোতে নিজেদের ছবি প্রতিস্থাপন করে সেটি তাদের অফিসে বা বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করেন। কাজেই, মানুষ তাকে ক্ষমতাবান হিসেবে মনে করেন।
তৃতীয়ত, তারা বিভিন্ন রকমের বিষয় নিয়ে প্রেসক্লাবে বা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং এই অনুষ্ঠানগুলোতে তারা দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানান এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা সফল হন।
চতুর্থত, তারা বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কাছে ধর্না দেন এবং তাদের কাছে চাঁদা আদায় করেন। পঞ্চমত, তারা মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে বিভিন্ন রকম বই-পুস্তিকা প্রকাশ করে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন চেষ্টা করেন। পরে তারা এটিকে ব্যবহার করেন।
এই সমস্ত মাধ্যমে ভুয়া লীগের নেতারা যে কাজগুলো করেন তার মধ্যে রয়েছে, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা এবং বিভিন্ন রকম তদবির। এগুলো করে তারা বিপুল বিত্তের মালিক হন।
এই সমস্ত কাজের জন্যই তারা সংগঠনটিকে ব্যবহার করেন। আর এই সংগঠনগুলোর কাজ একটাই, সেটি হলো লোকজনকে ঠকানো, তাদের সাথে প্রতারণা করা এবং তাদেরকে একটি আবহ দেওয়া যে তারা আওয়ামী লীগের বড় নীতিনির্ধারক।
ইতিমধ্যে ভুয়া লীগের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পরপরই এই সমস্ত ভুয়া লীগের হর্তাকর্তারা পালিয়েছেন, অনেকে তাদের সাইনবোর্ড, ব্যানার ইত্যাদি নামে ফেলেছেন।
আর পাশাপাশি তাদেরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন, সেই হাইব্রিড নেতারাও এখন চুপটি মেরে গেছেন।
বাংলা ইনসাইডার