স্বেচ্ছাসেবীরা সমাজের আশীর্বাদ
__দেলোয়ার হোসেন রনি
স্বেচ্ছায়, স্বপ্রণোদিতভাবে, সম্পূর্ণ স্বার্থহীন মানসিকতা নিয়ে পরের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন যিনি তাকেই আমরা স্বেচ্ছাসেবক বলে থাকি। স্বেচ্ছাসেবায় কোনো প্রাপ্তির আশা থাকেনা, থাকেনা কোন প্রতিদানের আকাঙ্ক্ষা। স্বেচ্ছাসেবীরা সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় তাদের মানবিক কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যায়। বাংলাদেশের মতো সমস্যায় জর্জরিত, দরিদ্র উন্নয়নশীল দেশে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
স্বেচ্ছাসেবীদের কিছু কাজের উদাহরণ যদি দিতে যাই তবে বলতে হয়; দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ যখন পরিবেশ নিয়ে অসচেতন, তখন পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বৃক্ষরোপণ, সামাজিক বনায়নের মতো নানা কার্যক্রম গ্রহণ করে স্বেচ্ছাসেবীরা। দেশের একটা অংশ জনগোষ্ঠী যখন প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত, তখন স্বেচ্ছাসেবীরা যৌথভাবে বা নিজ উদ্যোগে বিনামূল্যে শিক্ষাদানের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করে।মুমূর্ষু কোনো রোগীর যখন রক্ত বা প্লাজমার দরকার হয়, তখন স্বেচ্ছাসেবীরা নিজের সময়, শ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে রক্ত বা প্লাজমার ব্যবস্থা করে দেয়। এছাড়াও সকল প্রকার সামাজিক সমস্যা সমাধানের অগ্রগামী হিসেবে কাজ করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকে এইসব নিঃস্বার্থ স্বেচ্ছাসেবীরা৷
স্কুলজীবন থেকেই বেশ কিছু সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। যেখানে সামাজিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করতো। অসহায় মানুষের কষ্টের মুহূর্তকে কাছ থেকে অনুভব করে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নিরন্তর সেবা দিতে দেখেছি স্বেচ্ছাসেবীদের। কখনো বড়দের সাথে অংশগ্রহণ করেছি শীতবস্ত্র বিতরণ আয়োজনে, কখনো বা তাদের সঙ্গী হয়েছি বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণের কাজে। তখন ঠিক স্বেচ্ছাসেবার প্রকৃত অর্থ বুঝার ক্ষমতা ছিলোনা তবে কাজগুলো মন থেকে ভালো লাগতো বলেই সাথে যুক্ত থাকতাম। ধীরে ধীরে স্কুল, কলেজ পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানায় পা ফেলি। অনুধাবন করতে চেষ্টা করি প্রকৃত স্বেচ্ছাসেবার মানে। কোনো সেবামূলক কার্যক্রম শেষে সেবাপ্রাপ্ত অসহায় মানুষগুলো যখন কৃতজ্ঞতার চোখে সন্তুষ্টি জানান দেয় তখন নিজেকে অনেক বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। এভাবে চলতে চলতে গড়ে তোলার চেষ্টা করি ‘নবছায়া’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেখানে বেশ কিছু মানবিক মন বিদ্যমান। যারা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে মানুষের কল্যাণে।
পুরোবিশ্ব আজ করোনা আতঙ্কে স্তব্ধ । মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও দিনমজুর মানুষদের আয়ের জায়গা সীমিত হয়ে তারা যখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিল। তখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্যোগ নিয়ে তাদের পাশে দাড়িয়েছে যে চিত্রগুলোর সাক্ষী বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম, দৈনিক পত্রিকা ও বিভিন্ন মিডিয়া। শুধু এই নয় করোনা শুরুর কিছুদিনের মধ্যে দেশে যখন বন্যা আঘাত হানে তখনো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবীরা। স্বেচ্ছাসেবীরা হয়তো নিজেদের পকেট থেকে বিশাল অর্থ ব্যয় করতে পারেনা তবে তাদের শক্ত মনোবল ও স্পৃহার মাধ্যমে যেকোনো ধরনের সামাজিক সমস্যার সমাধান করার মানসিকতা রাখে তারা। যার ফলশ্রুতিতে অল্প হলেও হাসি ফুটে অসহায় ও অভাবগ্রস্থ মানুষের মুখে। এটাই কি সমাজের জন্য অনেক কিছু নয়?
সমাজ পরিবর্তনশীল। প্রকৃতির নিয়মে তার পরিবর্তন ঘটবে এটাই স্বাভাবিক আর এই পরিবর্তনটা যেন সমাজের কল্যাণে হয় সেজন্যে প্রতিটি ব্যক্তির মাঝে স্বেচ্ছাসেবী হওয়ার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানবিক বিবেকবোধ জাগ্রত করা সম্পর্কে শিক্ষাদান করতে হবে। জন্মের পর শিশুদেরকে শেখাতে হবে সুস্থ সংস্কৃতি। মানবতার বীজ রোপণ করতে হবে শিশুটির অন্তরে। পরে সেই শিশুটি যখন বড় হতে থাকবে তখন তার মধ্যে বেড়ে উঠবে মানবিক মন। সু-চিন্তায় চিন্তিত হবে আশপাশ।
যারা সমাজের কথা ভাবে, নিজস্বার্থের তুলনায় সামগ্রিক স্বার্থকে ঊর্ধ্বে রাখতে চায়, অসহায় দরিদ্র জনতার পাশে থেকে সমাজের শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা কি সমাজের জন্যে আশীর্বাদ নয়? স্বেচ্ছাসেবীদের কাজকে অনুপ্রাণিত করতে এগিয়ে আসা উচিৎ সমাজের বিত্তবান ও প্রভাবশালীদের। তাই আসুন সকলেই স্বেচ্ছাসেবীদের হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুন্দর, সুস্থ ও অসহায়মুক্ত সমাজ বিনির্মাণের শপথ গ্রহণ করি।
লেখক:
দেলোয়ার হোসেন রনি
প্রতিষ্ঠাতা, নবছায়া