বিডিনিউজ ডেস্ক: এটি পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, শ্যামনগর, মংলা, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলায় এর বিস্তৃতি।
এই বনে সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, বাইন, পশুর, কাকড়া, গরান, গোলপাতা, হেতাল, ঝানা, আমুর, সিংড়া, খলসিসহ বিভিন্ন জাতের গাছ ও ঘাসসহ প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মে।
গাছ-গাছালি ছাড়াও এই বনে ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড পাওয়া যায়। তবে এই বনের মূল উদ্ভিদ সুন্দরী গাছ। এই বনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও ২১৯ জলজ প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা ডোরাকাটা বাঘ।
বাঘ ছাড়াও এই বনে আরও আছে- চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, মেছোবাঘ, বানর, বন্য শূকর, শিয়াল, উদবিড়াল, বনমোরগ, গুঁইসাপ, অজগরসহ বিভিন্ন সাপ, ডলফিন, লোনা পানির কুমিরসহ বিভিন্ন প্রাণী।
এ সব প্রাণী ছাড়াও এই বনে প্রায় ৩১৫ প্রজাতির পাখি বসবাস করে। এর মধ্যে ৮৪ প্রজাতি পরিযায়ী ও বাকিগুলো আবাসিক।
করমজল : এটি সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীর প্রজনন কেন্দ্র। করমজল খালের মুখে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগ গড়ে তুলেছে এই প্রজনন কেন্দ্রটি। বিশাল এই প্রজনন কেন্দ্রে রয়েছে কুমির, হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রজনন ব্যবস্থাপনা। মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে নদীপথে ৫ কিমি. দূরে এই করমজল। যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪৫ মিনিট। এখানে একটি সংগ্রহশালা আছে। এতে সুন্দরবনের বাঘের কংকাল, হরিণের কংকাল, কুমিরের নমুনা ডিম, কুমিরের মাথাসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণীর নমুনা রয়েছে।
কটকা : সুন্দরবনের অন্যতম দর্শনীয় স্থান কটকা। সুন্দরবন পূর্ব অভয়ারণ্যের এই স্থানটি খুলনা শহর থেকে ১৫০ কিমি. এবং ১০০ কিমি দূরে অবস্থিত। এখানে বাঘ ও চিত্রা দেখার দারুণ সুযোগ রয়েছে। মংলা এবং খুলনা ফরেস্ট ঘাট থেকে ভাড়া করা ইঞ্জিনচালিত নৌকা, স্পিডবোট বা লঞ্চে এখানে আসা যাবে। বিশ্রামের জায়গা থাকলেও এখানে রাতে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই।
কচিখালি : সুন্দরবন পূর্ব অভয়ারণ্যের এই স্থানটি কটকা থেকে ১৪ কিমি. পূর্বে সৈকতের খুব কাছে অবস্থিত। এখানেও বাঘ, হরিণ, কুমির গুঁইসাপসহ বিভিন্ন প্রাণী দেখার সুযোগ রয়েছে। এখানেও বিশ্রামের জায়গা আছে। রাতে থাকার সুযোগ নেই।
জামতলা : সুন্দরবন পূর্ব অভয়ারণ্যের এই স্থানটিও কটকার কাছেই অবস্থিত। এখানকার পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে সুন্দরবনকে দেখা যাবে ভিন্নমাত্রায়। থাকা-খাওয়ার সুযোগ এখানেও হবে না।
হিরণ পয়েন্ট : সুন্দরবন দক্ষিণ অভয়ারণ্যের এই স্থানটি সুন্দরবনের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। নদীপথে খুলনা থেকে ১৩০ কিমি. এবং মংলা থেকে ৮০ কিমি. দূরে এই স্থানের অবস্থান। রাজ গোখরা, উদবিড়াল, চিত্রা হরিণ ও বাঘ দেখার সুযোগ এখানে রয়েছে। রাতে থাকার জায়গা এখানেও হবে না।
দুবলার চর : কটকা থেকে ২৫ কিমি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং নীলকমল থেকে ৩৫ কিমি. দক্ষিণ-পূর্বে এর অবস্থান। এটাকে সুন্দরবনের জেলে পল্লী বা শুঁটকি পল্লীও বলা হয়। সুন্দরবনের জেলেরা এখানে বসবাস করে এবং মাছের শুঁটকি উৎপাদন করে। এ ছাড়া এখানে প্রতিবছর পূর্ণিমা রাতে রাসমেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই রাসমেলায় অংশ নেয়ার জন্য দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক ও পূণ্যার্থী আসেন।
মান্দারবাড়িয়া : সুন্দরবন পশ্চিম অভয়ারণ্যের এই স্থানটি সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। খুলনা বা মংলা থেকে এখানে আসা একটু কষ্টকর। তবে দুবলার চর বা নীলকমল থেকে লঞ্চে বা স্পিডবোটে আসা যায়। এখানে ডলফিন, রাজকাঁকড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়া ও কচ্ছপের প্রজননক্ষেত্র দেখার সুযোগ রয়েছে। তবে এখানেও রাতে থাকার ব্যবস্থা নেই।