সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অল্প সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ পাওয়া আরও সহজ হলো। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ছাড়াও ইসলামী ব্যাংকসহ বেসরকারি খাতের ৫ ব্যাংক থেকেও গৃহনির্মাণ ঋণ নিতে পারবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
গত ২৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকেও গৃহনির্মাণ ঋণ নিতে পারবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রশাসন ও সমন্বয় গৃহনির্মাণ ঋণ কোষ থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পরিধি বৃদ্ধি ও ইসলামী আইন অনুযায়ী গৃহনির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে উল্লেখিত পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংককে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা ২০১৮ অনুযায়ী বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
প্রসঙ্গত, ফ্ল্যাট ও প্লট কিনতে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণের নীতিমালা জারি হয় ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই, যা ওই বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর ধরা হয়।
তবে যাদের ইএফটিতে বেতন-ভাতা হচ্ছে, শুধু তারাই এ ঋণের জন্য আবেদন করতে পারছেন। নীতিমালা অনুযায়ী, জমি বা ফ্ল্যাট কিনতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন তারা। যে কোনও সরকারি চাকরিজীবী ৯ শতাংশ সুদে এ ঋণ নিতে পারবেন।
২০ বছর মেয়াদি এ ঋণের ৫ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবেন। বাকি ৪ শতাংশ সরকার মাসিক কিস্তিতে ভর্তুকি দেবে।
নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও চাকরিজীবী ঋণ পাওয়ার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের যে কোনও একটিতে আবেদন করবেন। ব্যাংক ওই আবেদন যাচাই-বাছাই করে ইএমআই শেষে আবেদনকারী কর্মকর্তা যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত আছেন, ওই মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।
ওই মন্ত্রণালয় থেকে তা অনুমোদন করে অর্থ বিভাগে ‘গৃহনির্মাণ ঋণ কোষ’ শাখায় পাঠানো হবে। তখন এ শাখা থেকে প্রাথমিক জিও জারি করে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ দেবে।
ঋণ দেওয়ার পর অর্থ বিভাগ চূড়ান্ত জিও জারি করে ওই কর্মকর্তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যাতে প্রতি মাসে সুদের ভর্তুকির অর্থ স্থানান্তর হয়, সে ব্যবস্থা করবে।
ঋণ নেওয়ার পর ২০ বছর বা ঋণগ্রহীতার পিআরএলের মধ্যে যেটি আগে হবে, ততদিন প্রতি মাসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভর্তুকির অর্থ পৌঁছে যাবে। নতুন বাজেটে গৃহনির্মাণ ঋণ খাতে সুদ ভর্তুকি বাবদ ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন।
নীতিমালায় সর্বোচ্চ ঋণসীমা ৭৫ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ঋণ ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে। ঋণের বিপরীতে সুদের ওপর সুদ, অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি সুদ নেওয়া হবে না।
এ ছাড়া কোনও ‘প্রসেসিং ফি’ বা আগাম ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনও ‘অতিরিক্ত ফি’ দিতে হবে না। ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ২০ বছর। সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কেউ এই ঋণ পাবেন না।
কোনও কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা থাকলে বা দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে অভিযোগপত্র দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঋণের অযোগ্য হবেন।
তবে ফ্ল্যাট কেনা বা নিজস্ব জমিতে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে নিজেদের অন্তত ১০ শতাংশ টাকা থাকতে হবে। তৈরি ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণের পুরো অর্থ এক কিস্তিতে ছাড় করবে ব্যাংক। তবে বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ঋণের টাকা ছাড় করা হবে চার কিস্তিতে।
জাতীয় বেতন কাঠামোর পঞ্চম থেকে প্রথম ধাপে (গ্রেড) বেতন-ভাতা পাওয়া সরকারি কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে বাড়ি তৈরিতে ঋণ পাবেন ৭৫ লাখ টাকা। জেলা সদরে বাড়ি তৈরি বা ফ্ল্যাট কেনায় ঋণের অঙ্ক হবে ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা।
নবম থেকে ষষ্ঠ ধাপে বেতন-ভাতা পাওয়া কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ, জেলা সদরে ৫৫ লাখ ও অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
দশম থেকে ত্রয়োদশ ধাপের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ, জেলা সদরে ৪০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ ধাপের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ, জেলা সদরে ৩০ লাখ ও অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
অষ্টাদশ থেকে বিংশতম ধাপের কর্মচারীরা পাবেন ঢাকাসহ সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৩০ লাখ টাকা, জেলা সদরে ২৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২০ লাখ টাকা ঋণ।
বাংলা ট্রিবিউন