আজ ১৬ জুলাই। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ভোরে আটক করা হয়। প্রহসন এবং বানোয়াট মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো বিরাজনীতিকরণ এবং রাজনীতি মুক্ত একটি সুশীল শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা যেখানে নির্বাচন হবে না, গণতন্ত্র থাকবেনা, সেনাসমর্থিত একটি সুশীল সরকার দিনের পর দিন দেশ শাসন করবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি, ড. ফখরুদ্দীন এর নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হওয়ার পর এর বিরোধিতা করেছিলেন এবং দ্রুত সম্ভব সংসদ নির্বাচনের দাবি করেছিলেন।
আর এ কারণেই রাজনীতি থেকে তাকে মাইনাস করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি অংশ। শেখ হাসিনা যখন মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান তখন ফিরে আসার ক্ষেত্রেও তাকে বাঁধা দেয়া হয়। কিন্তু দেশে এবং বিদেশে বিপুল জনমতের কারণে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং শেখ হাসিনাকে এপ্রিলে দেশে আসতে দিতে বাধ্য হয়।
এরপর শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের নীল নকশা প্রণয়ন করে। আর এই পরিকল্পনার সঙ্গে পুরো তত্ত্বাবধায়ক সরকার জড়িত ছিল না। এই পরিকল্পনার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূলত ছয়জন ব্যক্তি গ্রহণ করেছিলেন বলেই পরবর্তী অনুসন্ধানে এবং গবেষণায় পাওয়া যায়। যারা শেখ হাসিনাকে আটকের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন:
১. ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন: ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি খন্দকার মোস্তাকের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। আওয়ামী বিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ব্যক্তি হিসেবে তিনি পরিচিত। মনে করা হয় শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তার মাথা দিয়ে মাইনাস ফর্মুলা এসেছিল বলে অনেকে মনে করেন।
২. মেজর জেনারেল (অব.) এমএ মতিন: মেজর জেনারেল (অব.) এমএ মতিন ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন এবং তিনি সরকারের দুর্নীতি প্রতিরোধ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং মতিনই বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে দুই নেত্রীকে মাইনাস করার যে ফর্মুলা সুশীল সমাজ থেকে দেয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
যখন শেখ হাসিনাকে আটক করা হয় সেই সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ এ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ এম এ মতিনের কাছ থেকে প্রথম জানেন যে শেখ হাসিনাকে আটক করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ওই সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনেক কর্মকাণ্ড সম্পর্কেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান কোনকিছুই জানতেন না।
৩. বিগ্রেডিয়ার ফজলুল বারী: বিগ্রেডিয়ার ফজলুল বারী সেসময় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিজিএফআই-এ ছিলেন এবং এই গ্রেপ্তারের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ছিলেন ফজলুল বারী। পরবর্তীতে দেখা যায় ৭৫ সালের খুনিদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়েছিলেন, অবৈধ বিয়ে করেছিলেন পঁচাত্তরের এক খুনির বোনকে।
৪. মেজর জেনারেল এ টি এম আমিন: মেজর জেনারেল এ টি এম আমিন সেই সময় ব্রিগেডিয়ার ছিলেন এবং তিনি ডিজিএফআই এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। মেজর জেনারেল এ টি এম আমিনও ছিলেন ক্ষুদ্র একটি অংশের অন্যতম যারা এই গ্রেফতারের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছিলেন।
৫. হাসান মশহুদ চৌধুরী: হাসান মশহুদ চৌধুরী ছিলেন সেসময় দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান এবং শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার ব্যাপারে তার সহযোগিতা নেওয়া হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন তথাকথিত একটি মামলা দিয়ে গ্রেফতার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করেন।
৬. মেজর জেনারেল মইন ইউ আহমেদ: মেজর জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ছিলেন তৎকালীন সময়ে সেনাপ্রধান এবং তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের জন্যই মাইনাস ফর্মুলার প্রবর্তিত হয়েছিল।
তিনি চেয়েছিলেন শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে পারলেই যে শূন্যতা হবে সেই শূন্যতায় তিনি নেতা হবেন। অবশ্য পরবর্তীতে মইন ইউ আহমেদ তার পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন, তিনি বাস্তবতা বুঝতে পারেন।
মূলত এই ছয় জন মাস্টারমাইন্ডের কারণে ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং ওই গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে অবরুদ্ধ হয়েছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র।
বাংলা ইনসাইডার