লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায় বাড়ছে উদ্বেগ। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে মাত্র ৩৮টি।
এগুলো অদল-বদল করে চালানো হচ্ছে কোনোমতে। কোনো দূর্ঘটনায় বা হঠাৎ করোনা রোগীদের হাইফ্লো অক্সিজেন সার্ভিসের প্রয়োজন হলে দেখা দিবে ভয়াবহ সংকট।
জেলার অন্যান্য কয়েকটি উপজেলার হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লাটের ব্যবস্থা থাকলেও এখানে তা নেই। বহু দেন-দরবার শেষে এটি টেন্ডার আহ্বান প্রক্রিয়ায় থাকলেও কবে নাগাদ কার্যকারিতা শুরু হবে তা নিশ্চিত করতে পারছেন না কেউই। সহসা টেন্ডার আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভান্ডার রক্ষক (স্টোর কিপার) মোঃ রাশেদ বলেন, হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও এখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ৩৮টি। এ কারণে রোগীদের জন্য বেডগুলোতে অক্সিজেন প্রয়োজন হলে অদল-বদল করে চালাতে হয়। কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বা দূর্ঘটনায় যদি একত্রে ৫০ জন বা অধিক রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয় তবে সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় থাকবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন থেকে হাসাপতালের এক্সরে মেশিনটি পড়ে আছে। কারিগরের (টেকনিশিয়ান) অভাবে এটি চালু করা যাচ্ছে না।
এ কারণে করোনাসহ স্বাভাবিক রোগীদেরও বাহিরে হয়রানির শিকার হয়ে এক্সরে করতে হচ্ছে। ইসিজি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী থাকলেও সচল থাকছেনা ইসিজিটি। মেশিনটি বছরের বেশিরভাগ সময় অকেজো বলেই পড়ে থাকে।
করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ২০টি বেড রয়েছে এ হাসপাতালটিতে। পূর্বের একটি নারী ওয়ার্ডকে পরিস্কার করে করা হয়েছে করোনা ওয়ার্ড।
জেলার অন্যান্য উপজেলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টের সুযোগটি থাকলেও এখানে তা না থাকায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসক ও রোগীদের লোকজন। ওয়ার্ডটিতে এখন ভর্তি আছেন একজন আক্রান্ত রোগী।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, লক্ষ্মীপুর জেলায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছেই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
রায়পুরে এখন পর্যন্ত হোম আইসোলেটেড চিকিৎসাধিন ৯৭ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭৬ জন। অক্সিজেন কনসেনট্রেটরে আছেন ২ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ জন। রায়পুরে ২৪ ঘন্টায় ১৫ জনের পজেটিভ প্রতিবেদন এসেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. বাহারুল আলম জানান, কোভিড-১৯ আক্রান্ত জটিল রোগীদের মধ্যে যাদের আইসিইউতে নিতে হয় সে হারও কমিয়ে আনা সম্ভব, যদি প্রতিটি বেডের সঙ্গে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ থাকে। আর অক্সিজেন সরবরাহ যখন নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না (ফেইল করে) তখনই দরকার হয় হাইফ্লো অক্সিজেন। যদি অক্সিজেন সাপ্লাই ঠিক থাকে, তাহলে ভেন্টিলেটর পর্যন্ত যাওয়ারই দরকার কমে যেতে পারে।
কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে প্রথমেই দরকার অক্সিজেন। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট ছাড়া হাসপাতালে মেনিফোল্ড দিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটানো যাবে হয়তো।
কিন্তু যখন রোগী বেশি হবে তখন রোগী রেফার করা ছাড়া কিছুই করার থাকেনা। আমাদের পাশ্ববর্তী রামগঞ্জ ও কমলনগর সরকারি হাসপাতালে সেণ্ট্রাল অক্সিজেন রয়েছে। যা রায়পুর হাসপাতালেও খুবই জরুরি। আর তখনি আইসিইউ প্রয়োজনের আগ পর্যন্ত রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটির সরবরাহ না হাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জাকির হোসেনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। এ বিষয়টিতে আগে অনেক কথা বললেও আর কোনো কথা বলতে চান না বলে জানান তিনি।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী বলেন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের জন্য একটি চিঠি পেয়েছি। বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠিটি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল প্লাট স্থাপনে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্ধের চিঠি আমরা পেয়েছি। চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক কাজটির জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। নির্দিষ্ট সময়ে টেন্ডার করা গেলে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিতে আরো এক মাস সময় লাগতে পারে। সবমিলিয়ে কত মাসের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করা যাবে- তা এখনো আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছিনা।