রাঙামাটি প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রামের নাম শুনামাত্র এটা বুঝার বাকি থাকেনা যে কোনো এক পাহাড়ি জেলার কথা বলছি। মূলত ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড় আছে বলেই প্রকৃতির অপরুপ ছোয়ায় সজ্জিত এই পার্বত্য অঞ্চল। শুধু যে সৌন্দর্য তাও নয় এই পাহাড়ের উপর নির্ভর করে চলে এখানকার চাষিদের জীবন জীবিকা।
পার্ব্যত্য জেলা রাঙামাটির বেশ কিছু পাহাড়ের ভাজে ভাজে নানা ফসলের আবাদ হতে দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম একটি জুমের আবাদ। এবার জুমের ফলন ভালো হওয়ায় সোনালী পাকা ধানে ছেয়ে গেছে পাহাড়। এদিকে নতুন ধানের গন্ধে পাহাড়ি জনপথগুলোতে তৈরি হয়েছে উৎসবের আমেজ। অন্যদিকে জুমিয়ারা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে জুমের পাকা ধান কেটে বাড়িতে তোলার ব্যস্ত সময় পার করছে। জুমের ফসল বাড়িতে তোলার পর-পরই পাহাড়ীদের ঘরে ঘরে শুরু হবে নবান্ন উৎসব।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সনাতনী কৃষি হচ্ছে পাহাড়ের ঢালে জুম চাষ করা। জুম চাষের প্রস্তুতিকালে প্রথমে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে জুম চাষের জন্য জমিকে উপযুক্ত করে তোলা হয়। পরে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রস্তুতকৃত পোড়া জমির মাটিতে দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে জুম ধানের পাশাপাশি মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, ভুট্টাসহ ইত্যাদি বীজ বপন করে জুমিয়ারা। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই জুমের ধান পাকা শুরু হয়। ভাদ্র-আশ্বীন মাসে ঘরে তোলা হয় সেই আবাদি জুমের ফসল।
জুম চাষিরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর জুমের ফসল ভালো হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক মাস পরিশ্রম করে তারা এবার ভালো ফসল পেয়েছে এবং জুম ধানের পাশাপশি মিষ্টি কুমড়া, তিল, আদা, হলুদ, ভুট্টা, শিম, মারফা, কাকন, মরিচ, তুলাসহ নানা প্রকার শাক-সবজি চাষ করা হয়েছে। সময় মতো ফসল ঘরে তুলতে পারলে পুরো বছর অনায়াসে কেটে যাবে এমনটাই আশা চাষিদের। আর খাদ্য সংকটে ভুগতে হবে না তাদের।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের এক মাঠকর্মী বলেন, চলতি বছর শুধু রাঙামাটি জেলায় জুম চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১ দশমিক ৩০টন। আর বর্তমানে যে উৎপাদন পাওয়া যাচ্ছে তা লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি। দীর্ঘ কয়েক মাস পরিশ্রমের ফলে এবং জুম চাষীরা জুমে সঠিক ভাবে সার প্রয়োগ করায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। আর পাহাড়ে জুমিয়ারা স্থানীয় জাতের ধানের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল ধান ও সবজির আবাদ করতে চাষিদের পরামর্শসহ যাবতীয় সুবিধা দিচ্ছে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক জানান, পাহাড়ে জুমিয়ারা স্থানীয় জাতের ধানের পাশাপাশি সাথী ফসলের আবাদ করার ধান ও সবজীর ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
এবারের আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও সঠিক বৃষ্টিপাতের কারণে এবার জুমের ফলন ভালো হয়েছে। তবে জুমে কিছু উচ্চ ফলনশীল ধান কৃষকদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারলে কৃষকরা হয়তো ধানের ফলন বেশি পাবে। তবে এ বছর ধানের পাশাপাশি অন্যান্য সবজিও ভালো হয়েছে। এ বছর জুমের ভালো ফলন হওয়াতে কৃষি বিভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের এই ঐতিহ্যবাহী জুম চাষ পদ্ধতিকে আধুনিকায়ন ও জুম চাষীদের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করলে জুমে ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি, এই অঞ্চলের খাদ্যের ঘাটতি পূরণ সহ প্রান্তিক জুম চাষীদের জীবনমানেও পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করছে পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দারা।