বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়নের নানা কথা শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি বন্ধ এবং বাংলাদেশের চীন মুখী কূটনীতির কারণে অনেকেই মনে করছেন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। এই অবনতির ধারায় সামনের দিনগুলোতে আরো অস্বস্তি তৈরি হতে পারে বলেও কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন।
তবে একাধিক কূটনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন যে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সাময়িক যে অস্বস্তিগুলো রয়েছে সে অস্বস্তিগুলো কখনোই দীর্ঘমেয়াদি হবে না এবং দু`দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে না।
এর কারণ হিসেবে কূটনৈতিকরা মনে করছেন যে, ভারত তার নিজের স্বার্থেই বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে না। কারণ বাংলাদেশকে ভারতের প্রয়োজন।
যে কারণে কূটনৈতিক মহল মনে করেন যে, বাংলাদেশ যতটা ভারতের উপর নির্ভরশীল তার চেয়ে বেশি ভারত-বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল।
আর ভারতের কূটনীতির মূল সূত্র হলো, তাদের যাদের প্রয়োজন তাদের সঙ্গে তারা কোনো অবস্থাতেই সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি অবনতি করেনা। বাংলাদেশের উপর ভারত কোন কোন বিষয়ে নির্ভরশীল এরকম প্রশ্নের উত্তরে কূটনৈতিকরা যে নির্ভরশীলতার বিষয়গুলো বলছেন তার মধ্যে রয়েছে:
১. বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন: বাংলাদেশের মাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হত।
কিন্তু শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের পর এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমূলে নির্মূল করেছেন এবং শেখ হাসিনা সরাসরি ঘোষণা করেছেন যে বাংলাদেশের ভূমিতে কখনো কোন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জায়গা দেয়া হবে না।
এটির ফলে ভারতের যে অভ্যন্তরীণ সংকট এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ সমস্যা সেটি সমাধান হয়েছে। এটি ভারতের জন্য একটি বিরাট অর্জন বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
২. ট্রানজিট: বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে এবং এই ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে ভারত। বিশেষ করে সেভেন সিস্টারের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আগে যে কঠিন পরিস্থিতি ছিল সেটা দূর করেছে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের ট্রানজিটের কারণেই ভারত বিপুল পরিমাণ লাভবান হচ্ছে।
এই বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত যদি ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি করে তাহলে বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতই।
৩. বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য: বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য কম নয়। বাংলাদেশ ভারতের জন্য একটি বড় বাজার। আর দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি হলে এই বাজারটুকু চীন এবং অন্যান্য দেশগুলো দখল করে নেবে। এটি ভারত ভালই বোঝে। আর সে কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে কখনো সম্পর্কের অবনতি করতে চাইবে না ভারত।
৪. চীনের আধিপত্য: যদি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক নষ্ট করে তাহলে এই অঞ্চলটি পুরোপুরিভাবে চীনের কর্তৃত্বে চলে যাবে। সেটি হবে ভারতের জন্য একটি বিপর্যয়কর অবস্থা। সেটি ভারত কখনোই চাইবে না।
৫. সার্ক অঞ্চলের ভারসাম্য: বাংলাদেশের সঙ্গে যদি ভারত সম্পর্ক নষ্ট করে তাহলে সার্ক অঞ্চলে যে ভারতের কর্তৃত্ব সেটি নষ্ট হয়ে যাবে, নতুন মেরুকরণ হবে। এর ফলে এই উপমহাদেশে শুধু নয়, সার্ক অঞ্চলে ভারত একঘরে হয়ে যেতে পারে। সেই বিবেচনা থেকে ভারতের এটি ক্ষতি হবে।
৬. ভূ-রাজনীতি: ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম মিত্র। কাজেই বাংলাদেশের সঙ্গে যদি ভারত সম্পর্ক নষ্ট করে তাহলে ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতেরই ক্ষতি হবে বেশি।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় ভারত শেষ পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে হাঁটবে। দুই দেশের বিদ্যমান জটিলতাগুলো কখনোই বড় হতে দেবে না।
বাংলা ইনসাইডার