সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নিয়ে তোলপাড় চলছে। আমলাদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন এবং এর ফলে আমলাদের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হবে বলে তারা দাবি করছেন।
কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে অনড় রয়েছে। আর যেহেতু সরকার অনড় রয়েছে সেজন্য প্রভাবশালী আমলারা এখন মন্ত্রীদের সম্পদের হিসাবের বিষয়টিও সামনে নিয়ে আসতে চাইছেন। তারা মনে করছেন যে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হয় তাহলে মন্ত্রীদেরও সম্পদের হিসাব নেয়া প্রয়োজন।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে, এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীদের সম্পদের হিসাবও নেয়া হতে পারে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, প্রভাবশালী আমলারা মনে করছেন যে একটি সরকার যৌথভাবে চলে।
আর সেই যৌথভাবে চলার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একজন মন্ত্রী। আর আমলারা মন্ত্রীর নেতৃত্বেই কাজ করেন। কাজেই শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নিলে তা অপূর্ণাঙ্গ হয়ে যাবে। আর এই বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত সরকার হয়তো মন্ত্রীদের সম্পদের হিসেবের ব্যবস্থা করবেন।
বাংলাদেশ সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী একজন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন লাভ ইচ্ছুক ব্যক্তিকে তার সম্পদের হিসাব দিতে হয়। এটি একটি জবাবদিহিতার ব্যবস্থা এবং এই হিসেবটা যেমন সংরক্ষিত থাকে তেমনি পাঁচ বছর পর তিনি যদি আবার নির্বাচনে দাঁড়ান আবার তাকে একই হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়।
কাজেই একজন ভোটার বা সাধারণ মানুষ জানতে পারেন যে পাঁচ বছরে তাদের আয় বৃদ্ধি কতটুকু হয়েছে। তবে সরকারের মন্ত্রী যে সবাই এমপি থেকে হন এমনটি নয়, এমপির বাইরে টেকনোক্রেট হিসেবে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী হন। এখন যেমন আওয়ামী লীগ সরকারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামছুল আলম টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী আছেন।
এদের সম্পদের বিবরণী দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এখন আমলারা মনে করছেন যে, শুধুমাত্র টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী নন একজন মন্ত্রী যখন তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিবেন তখন থেকে নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সময় পরপর তার সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রকাশ করে জমা দেওয়া উচিত।
অবশ্য ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে মন্ত্রীদের সম্পদের হিসেব নেওয়া হবে। তবে সেই হিসেব জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে কি হবে না সেটি সম্পর্কে কোনো বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী সে সময় দেননি। এ নিয়ে একটি অস্পষ্টতা রয়েছে।
সরকারের একাধিক সূত্র বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের হাড়ির খবর রাখেন। কোন মন্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ কতটুকু বেড়েছে সে খবর প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। তবে এখন আমলাদের মধ্যে অস্থিরতার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীদের সম্পদের হিসাব দেয়া হবে সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে।
কারণ সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি ১৯৭৯ অনুযায়ী প্রতি ৫ বছর পরপর আমলাদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার কথা কিন্তু সেটি প্রতিপালিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য এই ব্যবস্থা পুনর্প্রবর্তন করেছেন।
আর তখনই আমলারা নতুন করে চাপ দিচ্ছেন যে শুধু আমলারা কেন একটি সরকার পরিচালনায় নেতৃত্বে থাকেন মন্ত্রীরা, তাদের সম্পদেরও হিসাব দিতে হবে।
আর এই কারণেই আমলাদের প্রভাবে শেষ পর্যন্ত হয়তো মন্ত্রীদেরও সম্পদের হিসাব এর হিসাব সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে।
বাংলা ইনসাইডার