জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুরের মাঠে মাঠে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। মাঠ যেন হলুদ চাঁদরে ঢেকে আছে। এই সুযোগে মৌয়ালরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মধু সংগ্রহে। ফসলি জমির পাশে পোষা মৌমাছির বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন।
ওই সব বাক্স থেকে মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলে। জেলার প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে এখন একই চিত্র।
মধু চাষিরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। প্রতিটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়।
আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রাণী মৌমাছি। রাণীর কারণে ওই বাক্সে মৌমাছি আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন চাষিরা।
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন মৌয়ালরা। এসব সরিষা ফুলের মধু খাঁটি ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে সিরাজগঞ্জের সামাদ মিয়া জানান, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে বাক্স তৈরি করা হয়।
বাক্সের উপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো থাকে। বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি সাতটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো এক ধরনের সিট বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে।
সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা বাক্সগুলোর ভেতরে দেওয়া হয় রাণী মৌমাছি, যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারও পুরুষ মৌমাছি। রাণীর আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছির দল।
একটি রাণী মৌমাছির বিপরীতে প্রায় তিন থেকে চার হাজারের মতো পুরুষ মৌমাছি থাকে বাক্সে।
মধুচাষী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা সরিষা ক্ষেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি। বাকি আট মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের পুষে রাখা হয়। আকার ভেদে একটি বাক্সে ২০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়।
এখানে ১০০টি মৌচাষের বিশেষ বাক্স কলনি রয়েছে। প্রতিটি কলনিতে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর প্রতি কেজি মধু বিক্রি করা হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। এতে প্রতি কলনিতে লাভ হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা।
জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নিতাই চন্দ্র বণিক বলেন, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ ভাগ বেড়ে যায়।
সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ লাভজনক। এতে একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন মধুচাষীরা , অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।