২০১৩ সালে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের সম্পাদকদের নিয়ে গঠিত সম্পাদক পরিষদ কি ভেঙে যাচ্ছে?
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নঈম নিজামের পদত্যাগের পর এই প্রশ্ন নতুন করে উঠেছে। বর্তমানে সম্পাদক পরিষদের যেই কমিটি সেই কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা এবং নতুন কমিটি হওয়ার কথা। কিন্তু কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র দু`মাস আগে নঈম নিজামের পদত্যাগের পর এই সংগঠনটির অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সম্পাদক পরিষদের অন্যতম নির্বাহী সদস্য যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেছেন, সম্পাদক পরিষদ তো এমনিতে প্রায় মৃত সংগঠন। গত দুই বছরে একটি মাত্র মিটিং হয়েছে।
আর ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে চার-পাঁচটি। সেখানেও চার-পাঁচজনের অবস্থান ছিল। মাঝে মাঝে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া এই সংগঠনের কোন কাজ নেই। আর এই বিবৃতি দেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামীপন্থী বিএনপিপন্থী দুই পক্ষেরই প্রতিনিধিত্ব আছে সম্পাদক পরিষদে। তবে এই সম্পাদক পরিষদের নেপথ্যে কলকাটি চালায় প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গ্রুপ। মাহফুজ আনাম এবং মতিউর রহমানই মূলত সম্পাদক পরিষদের মূল ব্যক্তি। সম্পাদক পরিষদে বিএনপিপন্থীদের একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন।
আর এ কারণেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সরকারের সমালোচনা সমালোচনা করাই যেন সম্পাদক পরিষদের একমাত্র কাজ। পদত্যাগের কারণ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম এমনটি বলেছেন।
আর এই বাস্তবতায় অনেকে মনে করছেন যে, সম্পাদক পরিষদের আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত যে সংবাদপত্রগুলো প্রথম আলোর নিয়ন্ত্রণমুক্ত আলাদা অবস্থান গ্রহণ করতে চায়।
আর এজন্যই সম্পাদক পরিষদ শেষপর্যন্ত ভেঙে যেতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, সম্পাদক পরিষদে বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ, জনকণ্ঠ, ভোরের কাগজ, সংবাদ, যুগান্তর, সমকালের মত পত্রিকাগুলো শেষ পর্যন্ত আলাদা অবস্থান নিতে পারে।
কারণ প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, মানবজমিন, নিউ এইজ, নয়া দিগন্ত বা ইনকিলাবের মত পত্রিকাগুলোর সঙ্গে ক্রমশ সহ-অবস্থান অসম্ভব হয়ে পড়ছে, এমন মন্তব্য করেছেন সম্পাদক পরিষদের অন্তত দু`জন সদস্য। বিশেষ করে মতিউর রহমান এবং মাহফুজ আনাম যেভাবে চান সেভাবেই সবকিছু হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্পাদক পরিষদের একজন সদস্য বলেছেন, রোজিনার ইস্যুতে সম্পাদক পরিষদ যত তৎপর হলো অন্য সাংবাদিকরা যখন নিগৃহীত হয় তখন মাহফুজ আনামকে বিবৃতির জন্য খুঁজে পাওয়া যায় না।
সবসময় ব্যক্তিস্বার্থ এবং কোটারি স্বার্থের জন্য কাজ করেন এরা। আর এ কারণেই সম্পাদক পরিষদকে একটি কোটারি স্বার্থ থেকে মুক্ত করার জন্য এখন অনেকে সোচ্চার হয়েছেন।
অনেকে মনে করেন, প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার কৌশল হিসেবে এবং সরকারকে সমালোচনা করার জন্যই সম্পাদক পরিষদ গঠন করেছে।
অন্যদেরকে দাবার গুটির মত করে ব্যবহার করা হচ্ছে। এরকম নানা অসন্তোষ এবং চিন্তাধারার ফলে শেষ পর্যন্ত সম্পাদক পরিষদ হয়তো ভাঙতেই বসেছে।
বাংলা ইনসাইডার