ভাইভা কথাটা শুনলেই বুক ধড়ফড় করে অনেকেরে। খুব স্বাভাবিক। তবে সাহস হারালে চলবে না। হয়তো এই সাহসটাই পারবে আপনাকে কাঙ্ক্ষিত চাকরিটা পাইয়ে দিতে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আজ রইল ব্যাংকের ভাইভার খুঁটিনাটি।
প্রস্তুতি কীভাবে?
ব্যাংকের ভাইভা বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই হয়। হয়তো ইংরেজিতে প্রশ্ন বেশি করে থাকেন প্রশ্নকর্তারা। এক্ষেত্রে আগে থেকে ইংরেজিতে স্পোকেন কোর্স করা থাকলে সুফল পাবেন।
প্রস্তুতির জন্য অনার্সে পঠিত বিষয়ের খুঁটিনাটি ঝালিয়ে নিন। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, মুদ্রা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ, বাংলাদেশে মোট ব্যাংক সংখ্যা কয়টি, কয় ধরনের ব্যাংক আছে, বাজেট, রফতানি আয়, জিডিপি এসব নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজের জেলা সম্পর্কেও জানতে চাইতে পারেন প্রশ্নকর্তা। তাই নিজ জেলার ইতিহাস, বিখ্যাত স্থান ও ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে জেনে যাবেন।
সাম্প্রতিক বিষয় ও বিশেষ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভালো জানাশোনা থাকতে হবে। ছোট ছোট গাণিতিক ফরমুলা ও টার্মস দেখে যাবেন।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের মিরপুর-১০ শাখার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার নুরুজ্জামান বলেন, ‘ভাইভাতে মূলত প্রার্থীর আত্মবিশ্বাস যাচাই করা হয়। পাশাপাশি কত দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে পারেন সে দক্ষতাও যাচাই করা হয়।
অর্থনীতি ও ব্যাংকিংয়ের মৌলিক জ্ঞান রাখতে হবে। পাশাপাশি অনার্স-মাস্টার্সে পঠিত বিষয়গুলো দেখে যেতে হবে। কোনও অবস্থাতেই মুষড়ে পড়া চলবে না। অর্থাৎ উত্তর জানুন আর না জানুন, শিরদাঁড়া সোজা করে রাখা চাই।’
জনতা ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র অফিসার মেহেদি হাসান বলেন,‘ভাইভায় প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। বেশি বেশি ভাইভা দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে নার্ভাসনেস কেটে যাবে।
ভাইভার আগের দিন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমীক্ষা, জিডিপি, ফিসক্যাল পলিসি, বাজেট, ব্যাংক রেট ও ব্যাংকিং সেক্টরের টুকিটাকি দেখে যেতে হবে। অবশ্যই ফরমাল পোশাকে ভাইভা দিতে যাবেন।’
কিছু টিপস্
১। আপনি যে বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন, সেসকল পঠিত বিষয়ের বিভিন্ন জারগন (সংক্ষিপ্ত রূপ ও কথ্য শব্দ) ভালোভাবে আয়ত্ত করুন। ব্যাংকিং খাতে আপনার পঠিত বিষয়ের প্রয়োগ সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হতে পারে। সে বিষয়েও তৈরি থাকুন।
২। আপনি যে ব্যাংকে ভাইভা দিতে যাচ্ছেন সেই ব্যাংক সম্পর্কে যতটা সম্ভব ধারণা নিন। ব্যাংকের মিশন, ভিশন, গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের নাম এসব ওয়েবসাইটেই পাবেন।
৩। আপনি যে পদের জন্য ভাইবা দিচ্ছেন সে পদ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। সে পদের দায়-দায়িত্ব, সুবিধা-এসব সম্পর্কেও ধারণা নিয়ে যাবেন।
৪। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর ওপর ধারণা নিন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, সাম্প্রতিক বড় বড় চুক্তি, সরকারি প্রকল্প, এসব সম্পর্কেও জেনে নেবেন। ভাইভা বোর্ড মেম্বার ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে উত্তর দেবেন। বাংলায় প্রশ্ন করলে বাংলায় উত্তর দেবেন। তবে দুটো ভাষার খিচুড়ি করতে যাবেন না।
৫। নিজেকে বিনয়ী রাখুন। স্মার্টনেস জরুরি। তবে তা যেন সীমার মধ্যে থাকে। উত্তর না জানা থাকলে বিনয়ের সঙ্গে বলুন, এটা আপনি জানেন না।
৬। ভাইভা শুরু হওয়ার ৪০ মিনিট আগে উপস্থিত হোন। সঙ্গে কলম রাখতে ভুলবেন না।
৭। ব্যাংকে চাকরি করছেন এমন কারও কাছ থেকে ভাইবা সম্পর্কে আইডিয়া নিন। সম্প্রতি জয়েন করেছেন এমন কেউ আপনাকে ভালোই পরামর্শ দিতে পারবে।
ব্যাংকের ভাইভার কিছু সাধারণ প্রশ্ন-
১। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর কে?
২। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কত?
৩। বর্তমানে মাথাপিছু আয় কত?
৪। আমাদের এমডির নাম কী?
৫। চেক কাকে বলে? কয় প্রকারের হয়?
৬। বর্তমানে তফসিলভুক্ত ব্যাংক কয়টি?
৭। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য কী?
৮। এখনকার ব্যাংক রেট কত? ব্যক্তিগত সুদের হার কত?
৯। বাণিজ্যিক ব্যাংক কী?
১০। আমানত কী?