ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা: ব্যবসা পরিচালন সূচকে অন্যতম অনুষঙ্গ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে মামলা পরিচালনা কার্যক্রম সহজ বা ‘মামলা ব্যবস্থাপনা’ উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মামলা নিস্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দেশে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভূমি সংক্রান্তসহ অন্য যেকোনো সিভিল মামলা নিস্পত্তি হতে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লেগে যায়, যা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের উপর বড় প্রভাব ফেলছে।’
তিনি এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে মামলা পরিচালনা কার্যক্রমে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার পক্ষে মত দেন।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা: ব্যবসা পরিচালন সূচকে অন্যতম অনুষঙ্গ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, বিল্ড চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যান্ড সিইও আহসান খান চৌধুরী, ওরিক্স বায়ো-টেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড বাও, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ইনভেস্টমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জগন্নাথ চন্দ্র ঘোষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) পরিচালক জীবন কৃষ্ণ সাহা রায় ও জেট্রো বাংলাদেশের প্রতিনিধি কাজিমুরি ইয়ামাডা আলোচনায় অংশ নেন।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সাত্তার অ্যান্ড কোং-এর প্রধান ব্যারিস্টার মো. সামির সাত্তার।
সালমান এফ রহমান বলেন, এক দরজায় সেবা (ওএসএস) থেকে বর্তমানে ৪৪টি সেবা দেয়া হচ্ছে। বন্দরের দক্ষতা যথেষ্ট বেড়েছে। কিন্তু মামলা পরিচালন কার্যক্রমের অদক্ষতার কারণে সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিদ্যমান আইনে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো মামলা ব্যবস্থাপনায়। তাই সহজে ব্যবসা করার সূচকের উন্নতির জন্য আমরা যে প্রাণান্তকর চেস্টা করছি, সেই জায়গায় ভালো করতে হলে মামলা দ্রুত নিস্পত্তি করা অতি প্রয়োজন।
তাই মামলা পরিচালনা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সরকার গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, কর ব্যবস্থাপনা সহজীকরণসহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে এবং আগামী তা অব্যাহত থাকবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিডার ওএসএস সেবা পুরোদমে চালু হলে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা আরও সহজ হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপিতে) করের অবদান খুবই কম এবং যত বেশি করের আওতা বাড়ানো যাবে, ততই কর হার কমবে এবং এটি আমাদের ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ৫৫ হাজার নতুন করদাতাকে করের আওতায় নিয়ে এসেছে। করনেট সম্প্রসারণে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার জানান, আরবিট্রেশন ও ব্যবসায়িক চুক্তি বাস্তাবয়ন এবং দেউলিয়া প্রভৃতি বিষয়ে দেশের বেসরকারিখাতকে সরকারের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদান করা হবে।
তিনি জানান, বাণিজ্য বিরোধ বিষয়ক মামলা পরিচালনায় ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের আওতায় ই-ফাইলিং ও প্রমাণাদি সংরক্ষণে ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হবে, যার মাধ্যমে বাণিজ্য বিরোধ দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, দেউলিয়া আইন-১৯৯৭ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তি সহজ করার জন্য সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রামে ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপনের পরিকল্পনা করছে বলে তিনি জানান।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তিতে সাধারণত প্রায় ৪ বছর সময় লেগে যায়, যা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সূচকের অবস্থান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অন্তরায়।
তিনি বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে আরও অধিক হারে এডিআর ব্যবহারকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধে সামির সাত্তার বলেন, কোম্পানিগুলোর বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির সময়সীমা কমানোর লক্ষ্যে ‘সিভিল প্রসিডিউর কোড (সিপিসি)’-এর সংস্কার একান্ত জরুরি, সেইসঙ্গে মামলার ক্ষেত্রে ই-ফাইলিং প্রক্রিয়া ও কোর্ট ফি প্রদানের ক্ষেত্রে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থার প্রবর্তন ও ইলেকট্রনিক কেস ম্যানজেমেন্ট চালু করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক আইনি সংস্কার কার্যক্রম দ্রুততার সাথে শেষ করতে না পারলে আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ব।
তারা বিদ্যমান কর এবং অডিট নীতিমালা যুগোপযোগী করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাসস