করোনায় লণ্ডভণ্ড ভারতে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার চলছে, অর্থনীতির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে, মানুষের মৃত্যুর মিছিল সারাবিশ্বে হৃদয় কেড়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ভারতের জন্য। এমনকি ছোট্ট দেশ ভুটানও অক্সিজেন নিয়ে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতকে সহযোগিতার জন্য আবেদন করেছেন, যদিও সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি ভারত।
কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারতের সহযোগিতা করলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারতের ব্যাপারে তেমন কোনো সহানুভূতি দেখায়নি। বরং ভারতের ব্যাপারে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাবই দেখা যাচ্ছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত কয়েকদিনে যে সংবাদ সম্মেলনগুলো করেছেন, সেই সংবাদ সম্মেলনগুলোতে প্রত্যক্ষভাবে ভারতবিরোধী কথাবার্তা লক্ষ করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের অনেক মন্ত্রীরাও এখন প্রকাশ্যে না হলেও আকার-ইঙ্গিতে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তার প্রধান কারণ হলো যে, ভারতের টিকা রপ্তানি বন্ধ করা।
কিন্তু ভারত কেন টিকা রপ্তানি বন্ধ করেছে সে সম্পর্কে কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এবং সরকারের পক্ষ থেকে কথা বলা হচ্ছে না এমনকি ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে টিকা বাংলাদেশে কেন দেয়া হচ্ছে না সে সম্পর্কে সঠিক তথ্যগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে না। সিরাম ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা পর্যাপ্ত কাঁচামাল পাচ্ছে না।
কাঁচামালের জন্য তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে পর্যন্ত আবেদন করেছেন। এখন অবশ্য জো বাইডেন সিরামকে জরুরী ভিত্তিতে কাঁচামাল সরবরাহের জন্য আশ্বাস দিয়েছেন।
আর এই টিকার কারণেই বাংলাদেশে ভারতের ব্যাপারে সহানুভূতি দেখায়নি। আবার টিকা নিয়ে যে চীনের প্লাটফর্ম সেই প্লাটফর্মে যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশ ভারতকে দেখানোর জন্যই স্পুটনিক এবং চীনা ভ্যাকসিন বাংলাদেশে নেয়ারও উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন যে, ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বীজ প্রোথিত।
আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ভারত সহযোগিতা করেছে তার রক্তের ঋণে আবদ্ধ। কাজেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে যতই মান অভিমান থাকুক না কেন, যতই ভারত বাংলাদেশকে বিপদের সময় টিকা দেয়নি বা পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে বলে অভিযোগ করুক না কেন, এখন একটা দেশ সংকটে। আর এই সংকটেই পাশে দাঁড়ানো হলো বাংলাদেশের রীতি, বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
কাজেই, ভারতের এই করোনা সংক্রমণের ভয়ঙ্কর রূপের সময় বাংলাদেশ অন্যকোন সাহায্য দিক না দিক একটি মৌখিক সমবেদনা দিতেই পারে এবং সেটি দেওয়াই সৌজন্যতার প্রতীক হওয়া উচিত।
এই সহানুভূতি জানানোর পাশাপাশি ভারতের যদি কোনকিছু প্রয়োজন হয় সেই প্রয়োজনীয় বাংলাদেশ তার সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু পারবে ততটুকু উচিত বলে কূটনৈতিকরা মনে করেন। কারণ, বিপদেই বন্ধুর পরিচয়।
ভারত নানা বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নেতিবাচক আচরণ করেছে বা ভারতের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ উদার হবে না কেন। এই উদারতার পরিচয় বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় দিয়েছে।
এ কারণে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হয়নি, বরং বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে। কাজেই ভারতের এই সংকটে বাংলাদেশের উচিত ভারতের পাশে দাঁড়ানো, এমনটি মনে করছেন অনেক কূটনৈতিকরা।
বাংলা ইনসাইডার