নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয় বাংলাদেশের
বোলারদের নৈপুন্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে প্রথম জয়ের দেখা পেলো বাংলাদেশ। চলমান পাঁচ টি-টুয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে হারিয়েছে কিউইদের। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।
নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আগের ১০ দেখায় একবারও জয় মেলেনি। এবার নিজেদের মাঠে বাগে পেয়ে সুযোগ হাতছাড়া করল না বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টির প্রথমটিতেই বাজিমাত করল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার নিউজিল্যান্ডকে হারাল লাল-সবুজের দল। শুধু জয়ই নয়, নিউজিল্যান্ডকে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোনিন্ম দলীয় স্কোরের লজ্জা দিয়েছে মাহমুদউল্লাহর দল।
সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে সাত উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকেরা। সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি হবে আগামী শুক্রবার।
আজ বুধবার মিরপুর শেরবাংলা স্টেডিয়াম টস জিতে আগে ব্যাট করে ১৬.৫ ওভারে ৬০ রান সংগ্রহ করেছে নিউজিল্যান্ড। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সর্বনিন্ম স্কোর এটি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৪ সালেও প্রথমবার ৬০ রানে অলআউট হয়েছিল কিউইরা। এবার আরেকবার পেল সর্বনিন্ম রানের লজ্জা।
জবাব দিতে নেমে ৫ ওভারে হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতে হতাশ করেছেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম ও ছুটি কাটিয়ে দলে ফেরা লিটন দাস। দুজনেই ফিরেছেন এক রান নিয়ে।
প্রথমে নিউজিল্যান্ড দলে অভিষিক্ত কোল ম্যাকনকির বলে বিদায় নেন নাঈম। এরপর অ্যাজাজ প্যাটেলের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে কাটা পড়েন লিটন। ৭ রানে দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ।
দুই ওপেনারকে হারানোর পর কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। দশম ওভারে সাকিবের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ৩৩ বলে ২৫ রান করা সাকিবকে ফেরান রবীন্দ্র।
সাকিব ফিরলেও ছোট লক্ষ্য তুলতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশকে। মুশফিকের সঙ্গে জুটি বেধে দলকে জয়ের বন্ধরে পৌঁছে দেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তবে জয় এলেও এই ছোট লক্ষ্য ছুঁতে বাংলাদেশের লেগে যায় ১৫ ওভার। যেটা কিছুটা দুশ্চিন্তারও। ম্যাচ শেষে ১৬ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। ১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
এদিন টস জিতে বাংলাদেশকে ফিল্ডিংয়ে পাঠায় নিউজিল্যান্ড। আগে ব্যাটিংয়ে নামার সুবিধা খুব একটা কাজে লাগাতে পারল না নিউজিল্যান্ড। প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় কিউইরা।
মেহেদীর বলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকে গোল্ডেন ডাকে বিদায় নিলেন রাচিন রবীন্দ্র। বাংলাদেশি স্পিনারের বল রবীন্দ্র লেগ সাইডে খেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ যায় বোলারের কাছে। বোলার মেহেদী সুযোগ হাতছাড়া করেননি। লুফে নেন ক্যাচ। রবীন্দ্র ফেরেন শূন্য রানে, দলীয় এক রানে প্রথম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
বোলিংয়ে এসে নিজের প্রথম ওভারে উইকেট পান সাকিব আল হাসানও। তৃতীয় ওভারে সাকিবের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল কাট করার চেষ্টা করেন উইল ইয়ং। কিন্তু বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে আঘাত করে স্টাম্পে। দলীয় ৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড, ইয়ং ফেরেন ৫ রানে।
এরপর চতুর্থ ওভারে নিউজিল্যান্ডকে জোড়া ধাক্কা দেন নাসুম আহমেদ। প্রথমে বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন ওপেনার টম ব্লান্ডেলকে। এরপর নাসুম আহমেদের বলে উড়িয়ে সুইপ করতে গিয়ে উইকেট হারান ডি গ্র্যান্ডহোম। স্কয়ার লেগ সীমানায় নাঈমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন গ্র্যান্ডহোম।
৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বেশ বিপাকেই পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। হেনরি নিকোলসকে নিয়ে সেই বিপদ কিছুটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। কিছুটা সময় টিকেও ছিলেন দুজন। কিন্তু থিতু হয়েও দায়িত্ব নিতে পারলেন না ল্যাথাম। নিজের প্রথম ওভারেই কিউই অধিনায়কের প্রতিরোধ ভাঙেন সাইফউদ্দিন। ২৫ বলে ১৮ করে ফেরেন ল্যাথাম।
অধিনায়ক ফেরার পর শুধু হতাশাই দেখিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ল্যাথাম ফেরার পরের ওভারেই সাকিব তুলে নেন কিউইদের ষষ্ঠ উইকেট। এরপর নিজের পরের স্পেলে সাইফউদ্দিন ফেরান জমে যাওয়া নিকোলসকে। মুস্তাফিজের শিকার বানান অ্যাজাজ প্যাটেল। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে বেশিদূর যেতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ১৬.৫ ওভারে ৬০ রানে থেমে যায় টম ল্যাথামের দল।
বল হাতে বাংলাদেশকে শুরুতে সাফল্য এনে দেওয়া মেহেদী হাসান এক উইকেট নিয়ে দিয়েছেন ১৫ রান। এ ছাড়া সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান, নাসুম ও সাইফউদ্দিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড : ২০ ওভারে (রবীন্দ্র ০, টম ব্লান্ডেল ২, উইল ৫, ডি গ্রান্ডহোম ১, ল্যাথাম ১৮, নিকোলস ১৭, কোলে ০, ব্রেসওয়েল ৫, প্যাটেল ৩, টিকনার ১, জ্যাকব ৩; মেহেদী ৪-০-১৫-১, সাকিব ৪-০-১০-২, নাসুম ২-০-৫-২,মুস্তাফিজ ২.৫-০-১৩-৩, সাইফউদ্দিন ২-০-৭-২)।
বাংলাদেশ : ১৫ ওভারে ৬২/৩ (নাইম ১, লিটন ১, মুশফিক ১৬, সাকিব ২৫, মাহমুদউল্লাহ ১৪; অ্যাজাজ ৪-০-৭-১, রবীন্দ্র ৪-০-২১-১, জ্যাকব ৪-০-৩-০, ম্যাকনকি ৪-০-১৯-১)।