তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু আন্দোলন, সংগ্রাম, ত্যাগ ও সাহসিকতা দিয়ে নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৈরি করেছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মহানস্বাধীনতার স্থপতিই নন, স্বদেশ বিনির্মাণের রাষ্ট্রনায়ক। সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ মাত্র সাড়ে ৯ মাসে একটি সংবিধান উপহার দেওয়ার নজির পৃথিবীর ইতিহাস খুজলে দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে না বলে তিনি জানান।
প্রতিমন্ত্রী আজ বুধবার (১৮ আগস্ট) আগারগাঁওস্থ আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি মিলনায়তনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস-২০২১ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যেদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব, বাংলাদেশহাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ, আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রীনা পারভীন, বেসিসেরর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, ই-ক্যাবের সভাপতি সোমি কায়সার, বিসিএস এর সভাপতি শাহিদ-উল-মুনীর।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২৪ বছরের শোষণ, নির্যাতন ও নিষ্পেষিত একটি জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ, ২ লক্ষাধিক ধর্ষিতা-নির্যাতিতা মা বোনদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করে।
সে সময় পাকিস্তানী সেনারা ব্রীজ-কালভার্ট, রাস্তা-ঘাট পুড়িয়ে দিয়েছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাংক ও বাণিজ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছিল। সে রকম যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে সাম্ভাবনাময়ী বাংলাদেশে পরিণত করেছিলেন।
বাংলাদেশে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যা কিছু আজ তার সবকিছুর ভিত্তি রচনা করে গেছেন বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব মূহুর্তে ইপিআর এর ওয়ারলেস প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রচার করে গেছেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর স্যাটেলাইটের অরবিটাল ফ্রিকুয়েন্সি বরাদ্দ প্রদানকারী সংস্থা জাতিসংঘের আইটিইউ এর সদস্য পদ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন বিজ্ঞান মনস্ক প্রজন্ম গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে ড. কুদরত খোদার মত একজন বিজ্ঞানীকে শিক্ষানীতি প্রণয়নের
দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করলে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি বাধা ও সংগ্রামসহজেই অতিক্রম করা সম্ভব। তিনি বলেন মুজিববর্ষে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম, বাংলাদেশ ও বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে মুজিব হানড্রেড ডট গভ ডট বিডি, বঙ্গবন্ধুর ওপর দুটি কুইজ প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুইজের আয়োজন করেছি। এ সাইটে দেশে এবং বিদেশে কোটি কোটি মানুষ ভিজিট করছে। বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন ও নির্দেশনা গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছে। অনুশীলন এবং গবেষণা করতে পারছে। এছাড়া কুইজ প্রতিযোগিতায় কোটি কোটি শিক্ষার্থী, নবীন ও প্রবীন অংশগ্রহণ করেছে বলে জানান।
পলক বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মর্যাদাশীলরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বৈষম্যমুক্ত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা পরিণত হওয়ার পথে। এখনও একটি প্রক্রিয়াশীল চক্র প্রতিনিয়ত আমাদের মধ্যে আবার বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন মিথ্যা দিয়ে সত্য ডাকা যায় না। সত্যের জয় অনিবার্য।
বঙ্গবন্ধুর নাম বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক, রিডিও, টেলিভিশন থেকে ২১টি বছর ২টি প্রজন্মের কাছ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিল। আজ সে বঙ্গবন্ধুর নাম বাংলাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাই-টেক পার্কেই নয়, সূদুর জাতিসংঘের ‘ইউনেস্কো’ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নাম শুধু বিশ্বে ইতিহাসেই নয়, ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্কিটেক্ট সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালের ১২ মে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপনের মাধ্যমে মহাকাশে চিরসম্মরণীয় হয়ে আছে ।
তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যে উপদেশটি বঙ্গবন্ধু সারাজীবন অনুসরণ করেছেন তা হলো ‘অনেস্টি অব পারপাস অ্যান্ড অনেস্টি অব ইনটেনশন’ এ একটি উপদেশ মেনে চলতে পারলে জীবনে কখনো বাধা গ্রস্থ হবো না। পরে বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।